সেমিনারে বক্তারা
রপ্তানি বাণিজ্যে অবহেলিত এসএমই, প্রয়োজন সহায়ক নীতিমালা
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার (ডলার) সংকট দীর্ঘদিনের। সংকট দূর হওয়ার পরিবর্তে দিন দিন আরও ঘনিভূত হচ্ছে। এ সংকট নিরসনের একমাত্র পথ বৈদেশিক মুদ্রার আয় বৃদ্ধি। আর এই বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে সহায়তা করতে পারে এসএমই খাত। তবে প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সহজে পণ্য রপ্তানি করতে পারেন না। আবার ব্যাংকগুলো এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ করলেও অবহেলিত এই খাতের ক্ষুদ্র গ্রাহক। এ অবস্থায় ডলার সংকট নিরসন ও কর্মসংস্থান তৈরিতে এসএমই সহায়ক নীতিমালা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট বা বিআইবিএম আয়োজিতদ ‘বৈদেশিক বাণিজ্য অর্থায়ন এবং এসএমইর মধ্যে সেতুবন্ধন’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবিব। তিনি বলেন, ২০২১ সালে এসএমই খাতে বিনিয়োগের ২৫ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে বৈদেশিক বাণিজ্যে। রপ্তানিতে কড়াকড়ি করায় ২০২২ সালে সেই হার নেমে এসেছে মোট এসএমই ঋণের ২১ শতাংশে। দেশের অর্থনৈতিক বিবেচনায় এ হার আরও বেশি হওয়া প্রয়োজন। আর আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত মোট লেনদেনে এসএমই উদ্যোক্তাদের অবদান মাত্র ৯ শতাংশ।
গবেষণায় বলা হয়, রপ্তানির আবেদন বাতিল হওয়া এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য এক বড় বাধা। এসএমই উদ্যোক্তাদের রপ্তানি আবেদন বাতিলের পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেন তিনি। এর প্রথমটি, অপর্যাপ্ত জামানত। উদ্যোক্তারা জামানতের অভাবে ৩৬ শতাংশের রপ্তানি আবেদন বাতিল হয়। এছাড়া উচ্চ সুদহারের কারণে বাতিল হয় ১৮ শতাংশ। আগের লেনদেনের তথ্য না থাকায় ১৭ শতাংশ, উচ্চ ঝুঁকির কারণে ১১ শতাংশ ও পর্যাপ্ত দলিলের অভাবে ১০ শতাংশ আবেদন বাতিল হয়। রাষ্ট্র মালিকানা পাঁচ ব্যাংক, দুই বিদেশি ও ২৩টি বেসরকারি ব্যাংকের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেন শাহ মো. আহসান হাবিব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমান বলেন, এসএমই উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। দরিদ্র দেশ এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় এ হার বেশি। এ উদ্যোক্তারা সরাসরি বিদেশি বাজারে পণ্য রপ্তানি করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন।
বিশেষ অতিথির বক্তবে বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ও জনতা ব্যাংকের সাবেক বস্থাপনা পরিচালক আব্দুচ ছালাম আজাদ বলেন, জনতা ব্যাংকে বড়দের চাপে ছোট গ্রাহকদের দেখার সুযোগ হতো না। এখন জনতা ব্যাংক এসএমইতে গুরুত্ব দিচ্ছে। আমি যখন এসএমইর কথা ভাবলাম তখনই মহামারির আঘাত আসলো। এরপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এসব কারণে এসএমই ফাইন্যান্সে যতটা এগিয়েছি, এসএমই ট্রেড ফাইন্যান্সে ঠিক ততটাই পিছিয়েছি।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন ও কনসালটেন্সি) ড. আশরাফ আল মামুন। সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান। গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন- বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ এবং রাহাত বানু, প্রভাষক রাজীব কুমার দাশ, বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক প্রদীপ পাল, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদুর রহমান। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি প্রফেসর মো. আব্দুস সালাম এইচএফএফ, ঢাকা ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার এবং ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু জাফর।
ইএআর/কেএসআর