চূড়ান্ত মঙ্গলবার
উন্নয়ন বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে পরিবহন-বিদ্যুৎ-গৃহায়ণ খাত
![উন্নয়ন বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে পরিবহন-বিদ্যুৎ-গৃহায়ণ খাত](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/adp-20240311173422.jpg)
বরাবরের মতো এবারও কমছে সরকারের উন্নয়ন বাজেটের আকার। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা মাঝপথে এসে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমছে। সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারার পুরনো ব্যর্থতা নিয়েই এ অর্থ এডিপি থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে। তবে উন্নয়ন বাজেটে ১৫টি খাতের মধ্যে সব থেকে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে পরিবহন, বিদ্যুৎ, গৃহায়ণ ও শিক্ষা খাত। মোট সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) ২৫ দশমিক ৮২ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে, যা টাকার হিসাবে ৬৩ হাজার ২৬৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
উন্নয়ন বাজেটে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাত বিদ্যুৎ। যেখানে মোট বরাদ্দের ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ বা ৩৭ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাদি খাতে প্রায় ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, যা টাকার হিসাবে ২৮ হাজার ২ কোটি টাকা।
এছাড়া শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১৭ হাজার ২২৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরেও সংশোধিত এডিপিতে ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমেছিল।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এর আগে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় সংশোধিত এডিপির আকার চূড়ান্ত করা হয়। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এটি অনুমোদন পাবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৫টি খাতের মধ্যে সাধারণ সরকারি সেবা খাতে দুই হাজার ৪২৭ কোটি, প্রতিরক্ষা খাতে ৯২০ কোটি, জন শৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাতে তিন হাজার ৩৭৬ কোটি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে চার হাজার ৬৩০ কোটি, কৃষি খাতে ১০ হজার ৩১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।
আরও পড়ুন
- মুখ থুবড়ে পড়েছে এডিপি বাস্তবায়ন, একযুগে সর্বনিম্ন
- কমেছে অর্থছাড়, বেড়েছে ঋণ পরিশোধের চাপ
- প্রথম ৬ মাসে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন
স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৯ হাজার ৯৬৯ কোটি, পরিবেশ জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ১৪ হাজার ২৭২ কোটি, স্বাস্থ্য খাতে ১২ হাজার ৬৬ কোটি, ধর্ম, সংস্কৃতি, বিনোদন খাতে দুই হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে তিন হাজার ৬৩৭ কোটি এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে দুই হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে নিজস্ব অর্থায়ন কমছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। এডিপিতে নিজস্ব অর্থায়ন ছিল এক লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা, যা কমে হচ্ছে এক লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
বিদেশি সহায়তা থেকে বরাদ্দ কমছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। এতে সংশোধিত এডিপিতে বিদেশি সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াবে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বর্তমানে এডিপিতে এক হাজার ৩৯২টি প্রকল্প আছে।
গত মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিভাগ। সেখানে প্রকল্পের কর্মকর্তারা বিদেশি প্রকল্প সহায়তা কমানোর পক্ষে মত দেন। কারণ, বিদেশি সহায়তার অর্থ খরচে নানা ধরনের শর্ত থাকে। তবে এবার দেশীয় অর্থায়নও কমানো হয়েছে, যা গত অর্থবছরে অপরিবর্তিত ছিল।
ডলার সংকটের এ সময়ে অর্থনীতিবিদরা বিদেশি সহায়তার প্রকল্প বেশি বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছিলেন। কারণ, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে দেশে ডলার সরবরাহ বাড়বে। কিন্তু এডিপিতে যে সংশোধন আনা হচ্ছে, সেখানে উল্টো বিদেশি সহায়তা কমানো হচ্ছে।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এডিপির মাত্র ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে, যা গত ১০-১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক প্রকল্পে চাহিদামতো অর্থ ছাড় হচ্ছে না, যে কারণে এডিপি বাস্তবায়নও কম হচ্ছে।
এমওএস/এমকেআর/এমএস