‘কারখানা উন্নত হলেও শ্রমিকের উন্নয়ন নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৫০ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

দেশের তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ছিল রানা প্লাজায়। সেই দুর্ঘটনাকে সামনে রেখেই কারখানাগুলোয় নিয়মনীতি নিশ্চিত করা হয়েছে। মালিকের কারখানা উন্নত হয়েছে, সমৃদ্ধ হয়েছেন। সবুজ কারখানার সংখ্যা বেড়ে দুই শতাধিক ছাড়িয়েছে কিন্তু শ্রমিকের উন্নতি হয়নি। নানা সুযোগ-সুবিধা কমানো হয়েছে। ফলে শ্রমিকের সংখ্যাও কমেছে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরির অর্জন ও চ্যালেঞ্জ: রানা প্লাজা পরবর্তী উদ্যোগ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস,) আয়োজিত অনুষ্ঠানে খাত সংশ্লিষ্ট গবেষক, শ্রমিক নেতা, আইএলও এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।

আলোচনায় শ্রমিক নেতা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং বিলসের মহাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, রানা প্লাজায় দুর্ঘটনার পর নানা চাপের কারণে দেশের মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন হয়েছে, অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শ্রমিক নেতাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। শহীদ শ্রমিকদের রক্তের বিনিময়ে শিল্পে ইতিবাচক দিক ফিরে এসেছে, ইমেজ ফিরে পেয়েছে। কিন্তু সেই ট্রাজেডির আহত-নিহত শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্যতা ফিরে পাইনি আজও।

তিনি বলেন, অ্যাকোর্ড-এলায়েন্সের কারণে বিজিএমইএ-বিকেএমইএ সদস্যভুক্ত পোশাক কারখানায় শিশু শ্রম নেই। তবে এর বাইরে যেসব কারখানা রয়েছে সেগুলোয় শিশু শ্রমের অভাব নেই। এর দায়ভার কেউ নিতে চাই না। রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকরা যারা দীর্ঘ ১১ বছর হুইল চেয়ারে তাদের দীর্ঘশ্বাস শেষ হয়নি। তাদের দীর্ঘশ্বাস বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশ লেবার কংগ্রেসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাদিজা আক্তার বলেন, আমাদের এখানে এর আগে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম দৃশ্যমান ছিল। কিন্তু এখন আরএসসির কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়, সবার জন্য উন্মুক্ত না। এটা হলেও পুরো সেক্টরে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা আরও বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, এখন পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিক কমে আসছে, তাদের সুযোগও কমে আসছে। এ বিষয়টা এখন দেখার সময় এসেছে। কিছুদিন আগে ন্যূনতম মজুরি নিয়ে আন্দোলন হলো সেখানে চারজন শ্রমিককে জীবন দিতে হয়েছে বিনিময়ে বেতন হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। রানা প্লাজায় দুর্ঘটনার ১১ বছর হলো অথচ এখনও অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠেনি, তাদের পুনর্বাসন করা হয়নি। নিহত অনেকের পরিচয়ও এখন শনাক্ত হয়নি। আমরা চাই আহত শ্রমিকদের রেশনীয় ব্যবস্থাটা যেন চালু করা হয়, এতে অন্তত কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।

শ্রমিক নেতা আব্দুল হাই বলেন, আমাদের নানা সেক্টরের প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে কিন্তু বিচার হয় না তার। বিচারহীনতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। চট্টগ্রামের ডিপোতে দুর্ঘটনা ঘটলো কিন্তু সেখানে ওই ঘটনার কোনো বিচার হলো না। জুরাইন কবরস্থানে দুর্ঘটনায় নিহতদের অনেকের পরিচয় শনাক্ত হয়নি, মালিকদেরও বিচার হয়নি। এখন দেশের মধ্যে সবুজ কারখানা ২১৫টি হয়েছে। এর মানে মালিকপক্ষের উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু শ্রমিকের উন্নয়ন কোথাও, হয়নি।

বিলসের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশের মধ্যে ৭ কোটি ৩০ লাখের বেশি শ্রমিক রয়েছে। এর বিপরীতে কার্যকরী ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে মাত্র ৫ হাজারের মতো। তাও এর মধ্যে অনেক আছে মালিকের আস্থাভাজন দিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন করা। নামমাত্র ট্রেড ইউনিয়ন দিয়ে মালিকের সঙ্গে দরকষাকষি বা দাবিদাওয়া আদায় করা যাবে না কখনও। আবার দুর্ঘটনা হলেও ক্ষতিপূরণ নিয়ে তামাশা করা হয়। যেটা দেওয়া হয় তা একেরারেই অপ্রতূল। সত্যিকারের কার্যকরী ট্রেড ইউনিয়ন থাকলে খাতের জন্য যেমন ভালো, শ্রমিকের জন্যও ভালো।

গণস্বাস্থ্যে কেন্দ্রের অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল বলেন, সব শ্রমিককে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনতে হবে। আমরা নিজেরাও এ কাজ করছি তবে তা খুব বেশি বলা যাবে না। শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। পোশাক খাতে শিশু শ্রম কমলেও লেদার খাতে এটা বেড়েছে।

শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রোখসানা চৌধুরী বলেন, রানা প্লাজার পর পোশাক শিল্পে অনেক পরিবর্তন এসেছে। কর্মক্ষেত্র নিরাপদ হয়েছে, টেকসই কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। ক্ষতিপূরণ দ্বিগুণ হয়েছে, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে শ্রমিকের।

বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান আহমেদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, সমন্বয়ক মইনুল আহসান জুয়েল, শ্রমিক লীগের সভাপতি নুর কুতুবুল আলম মান্নান।

ইএআর/এমআরএম/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।