বিভক্ত শিক্ষকরা

শহীদ মিনারে একপক্ষ, পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ আরেক পক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৩১ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২৫
পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন আন্দোলনরত শিক্ষকরা/ ছবি- মাহবুব আলম

২০ শতাংশ বাড়িভাড়ার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা কর্মসূচি ঠিক করা নিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। একপক্ষ প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে সরে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছে। আরেক পক্ষ প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে। এনিয়ে শিক্ষকদের দুই পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী রোববার (১২ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে সচিবালয়ে যায়। সেখানে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

তবে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পাওয়ায় এ বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি বলে জানান শিক্ষক নেতারা। দুপুর ১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ফিরে এসে তারা দুটি ঘোষণা দেন।

শহীদ মিনারে একপক্ষ, পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ আরেক পক্ষ

একটি হলো- প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে সরে তারা শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা ছাড়বেন না। দ্বিতীয়টি হলো- মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন করবেন।

জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন ও সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী প্রেস ক্লাবের সামনে এ ঘোষণা দেন।

ঘোষণার পর দুপুর দেড়টার দিকে অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন ও অধ্যক্ষ আজিজীর নেতৃত্বে শিক্ষকদের একটি পক্ষ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের দিকে চলে যায়। অন্যদিকে আরেক পক্ষ প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণার দাবি তোলে। তারা শহীদ মিনারে যেতে অস্বীকৃতি জানান।

মাঈন উদ্দিন ও আজিজীর নেতৃত্বে শিক্ষকদের একাংশ শহীদ মিনারে চলে যাওয়ার পর দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান করা বাকি শিক্ষকদের সরাতে অ্যাকশনে যায় পুলিশ।

আরও পড়ুন
সাউন্ড গ্রেনেড-জলকামান-লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ শিক্ষকরা 
শিক্ষকদের ঢাকা না ছাড়ার ঘোষণা, অবস্থান চলবে শহীদ মিনারে 

প্রথমে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পুলিশ। এরপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষক রাস্তায় পড়ে যান এবং আহত হন।

পুলিশের হামলার শিকার খিলগাঁও মডেল স্কুলের শিক্ষক আজিবর আলী বলেন, ‌‘সরকার শিক্ষকদের দাবি পূরণে গড়িমসি করছে। চাকরি করছি ১৭ বছর। তার মধ্যে আন্দোলন করেই ১৫ বছর পার। এভাবে আর কতদিন আন্দোলনে আসা যায়? সেজন্য আমরা চেয়েছিলাম আজই এর একটা সমাধান হোক। কিন্তু আমাদের নেতারা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিটিং করে চা-নাশতা খেয়ে প্রেস ক্লাবে আমাদের রেখে শহীদ মিনারে চলে গেছেন। আমরা খাইলাম মাইর। উনাদের কিছু হইলো না।’

বরিশাল থেকে আসা আসাদুজ্জামান নামে এক শিক্ষক বলেন, তারা এখানে এসে কী কর্মসূচি মাইকে বললেন তা হইচইয়ের মধ্যে শুনতেও পাইনি। দেখলাম এক পক্ষ মিছিল নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি আমার স্কুল থেকে আসা অন্য শিক্ষকদের খুঁজতে শুরু করেছি, তখনই পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আমরা নেতাদের এমন দায়িত্বহীনতা এবং পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

শহীদ মিনারে একপক্ষ, পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ আরেক পক্ষ

শহীদ মিনারে যাওয়ার পর প্রেস ক্লাবে শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার খবর পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী। শহীদ মিনার থেকে ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, হইচইয়ের মধ্যে অনেক শিক্ষক হয়তো মাইকে আমাদের ঘোষণা শুনতে পাননি। এজন্য আমরা দুঃখিত। এখন কেউ প্রেস ক্লাবের সামনে না থেকে শহীদ মিনারে চলে আসুন।

অধ্যক্ষ আজিজী বলেন, আমরা এখানেই (শহীদ মিনার) অবস্থান নেবো, ঢাকা ছাড়বো না। যতক্ষণ প্রজ্ঞাপন জারি না করা হবে, ততক্ষণ আমরা শহীদ মিনারে অবস্থান চালিয়ে যাবো।

পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ শিক্ষকদের একটি পক্ষ বলছে, তারা এমন ‘দায়িত্বহীন’ নেতাদের নেতৃত্বে আর আন্দোলনে আসবে না। রাজবাড়ী থেকে আসা দুজন শিক্ষক সিরাজ উদ্দীন ও সফিকুল ইসলাম জানান, তারা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের নেতাদের ডাকে ঢাকায় এসেছেন। কিন্তু তারা তাদের রেখে শহীদ মিনারে চলে গেলেন। সব শিক্ষককে নিয়েই নেতাদের শহীদ মিনারে গেলে পুলিশের হামলার মুখে কেউ পড়তেন না।

তারা শহীদ মিনারে যাবেন কি না- এমন প্রশ্নে সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘না, আর ঢাকায় থাকতে চাই না। উনারা আন্দোলন করুক। আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। এমন নেতাদের পেছনে থেকে মার খাওয়া ছাড়া কিছুই হবে না।’

এএএইচ/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।