উত্তাল দুপুর, শিক্ষকদের ব্লকেডে থেমে গেলো শহরের হৃদস্পন্দন
ঢাকার শাহবাগ মোড়ে দুপুরটা ছিল অন্য দিনের চেয়ে আলাদা। স্কুল-কলেজের ক্লাস ফাঁকা, রাস্তায় থেমে থাকা বাস, পুলিশের সতর্ক অবস্থান সব মিলিয়ে এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ। বেলা গড়াতেই আন্দোলনরত শিক্ষকরা নামলেন রাস্তায়, দখল করে নিলেন শাহবাগ মোড়। দাবি-দাওয়া জানাতে শুরু হলো স্লোগান, ব্যানার হাতে শিক্ষকদের সারি যেন এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞার প্রতিচ্ছবি।

সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। আজকের কর্মসূচি সেই দাবিগুলোরই অংশ।

একজন আন্দোলনকারী শিক্ষক বললেন, আমরা ক্লাসরুমে নীরব থেকেও দেশের ভবিষ্যৎ তৈরি করি। অথচ নিজেদের ন্যায্য অধিকার পেতে আজ আমাদের রাস্তায় আসতে হয়েছে-এটাই সবচেয়ে কষ্টের।

শিক্ষকদের ব্লকেডে শাহবাগ হয়ে রমনা, এলিফ্যান্ট রোড ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানচলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যানজটে আটকে থাকা লোকজন কেউ বিরক্ত, কেউ আবার দাঁড়িয়ে দেখছেন ব্যানার হাতে স্লোগান দেওয়া শিক্ষকদের দৃঢ় মুখগুলো।

পুলিশ রয়েছে সতর্ক অবস্থানে। বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ও জলকামানও মোতায়েন করা হয় যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য।
তবে আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন এবং পুলিশের সঙ্গে তাৎক্ষণিক কোনো সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি।

এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা চাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকুক। শিক্ষকদের দাবির বিষয় সরকার দেখবে, আমরা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করছি।

রোদে পুড়ে, ধুলোয় ঢাকা ক্লান্ত মুখগুলোতেও আছে স্পষ্ট প্রতিজ্ঞা, আমরা কথা না শোনা পর্যন্ত রাস্তায় থাকব। কেউ স্লোগান দিচ্ছেন, কেউ চুপচাপ বসে আছেন ব্যানার হাতে। মাঝেমধ্যে কেউ পানির বোতল বাড়িয়ে দিচ্ছেন আরেকজনের দিকে-সেই মুহূর্তগুলো যেন একাত্মতার প্রতীক।

শিক্ষক সমাজের আন্দোলন কোনো একক শ্রেণির প্রতিবাদ নয়; এটি শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক সংকটের প্রতিফলন। পাঠদান যখন পেশার চেয়ে দায়বদ্ধতা, তখন সেই পেশাজীবীরা যখন রাস্তায় নামেন, সেটি এক গভীর বার্তা বহন করে, শিক্ষাব্যবস্থা যদি টিকে থাকতে চায়, তবে শিক্ষকদের ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত করতেই হবে।

সূর্য ঢলে পড়েছে, তবুও শাহবাগের বাতাসে স্লোগানের প্রতিধ্বনি। পুলিশ এখনো সতর্ক, শিক্ষকরাও অবস্থান ধরে রেখেছেন। কেউ বলেন, এই আন্দোলন কেবল বেতন বা সুবিধার নয়; এটি মর্যাদা ও স্বীকৃতির লড়াই। আজকের শাহবাগ যেন সেই লড়াইয়ের প্রতীক- যেখানে ব্লকেড শুধু সড়কে নয়, জমে থাকা বছরের পর বছরের অবহেলাকেও থামিয়ে দিয়েছে।
জেএস/