ফি আদায়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের বিশেষ চাপ

মুরাদ হুসাইন
মুরাদ হুসাইন মুরাদ হুসাইন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩৮ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০২০

সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে টিউশন ফি আদায় করছে রাজধানীর অধিকাংশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। নানাভাবে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থ আদায় করছে তারা। অথচ শিক্ষক-কর্মচারীদের বাকেয়া বেতন দিতে যেন চরম অনীহা তাদের।

করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের আগে আর খোলা সম্ভব নয় প্রতিষ্ঠানগুলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আরও কতদিন বন্ধ রাখতে হয় তারও ঠিক নেই। এ অবস্থায় বন্ধের দিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের দাবি জানিয়ে আসছেন অভিভাবকরা। কিন্তু দেখা গেছে, কিছু প্রতিষ্ঠান বিকাশ নম্বর পাঠিয়ে টিউশন ফি দেয়ার জন্য নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। দেয়া হচ্ছে হুমকিও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেলের টেক ইংলিশ ভার্সন স্কুলের অধ্যক্ষ আঞ্জুমান লায়লা বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো চলে মূলত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র ওপর। আমাদের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৩০ জনের মতো শিক্ষার্থীর টিউশন ফি পেয়েছি। শিক্ষকদের বেতন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপরও লোন নিয়ে শিক্ষকদের মার্চ মাসের বেতন দিয়েছি, স্টাফদের বেতন পরিশোধ করেছি।

‘এছাড়া ভবন ভাড়া তো আছেই। এখন এপ্রিল মাসটা কীভাবে কন্টিনিউ করব? এটা তো আসলে আমার একার পক্ষে কখনও পসিবল নয়। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস চলছে। শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। অবশ্য আমাদের যেসব শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের অভিভাবকরা অধিকাংশই ভালো চাকরিজীবী অথবা ভালো আয় করেন। চাইলে, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের শিক্ষকদের বেতনের বিষয়টি চিন্তা করে তারা টিউশন ফি পরিশোধ করতে পারেন। এক্ষেত্রে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো অভিভাবককে আলাদা করে চাপ দেইনি। যাদের সামর্থ্য আছে তারা দিলে আমার প্রতিষ্ঠানের উপকার হয়। শিক্ষক-স্টাফদের উপকার হয়। আমি অভিভাবকদের কাছে রিকোয়েস্ট করব, তারা যেন এ বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করেন।’

এদিক লালমাটিয়া ম্যানগ্রোভ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষকদের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষ বিকাশ নম্বর দিয়ে টিউশন ফি পাঠাতে অভিভাবকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। চলমান পরিস্থিতির মধ্যেও বাধ্য হয়ে তারা টিউশন ফি পরিশোধ করছেন। অথচ গত দুই মাস হলো শিক্ষকদের বেতন আটকে দেয়া হয়েছে। বেতন চাওয়ায় দুজন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ।

school-02

এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলের অধ্যক্ষ তারেক খান বলেন, ‘গত দুই মাস শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করতে পারিনি। কিন্তু আমাদের অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালু আছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠান সচল রাখতে বিকাশের মাধ্যমে অভিভাবকদের কাছ থেকে টিউশন ফি নেয়া হচ্ছে।’ তবে অভিভাবকদের অভিযোগ, ম্যানগ্রোভ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কর্তৃপক্ষের মতো আরও অনেক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নানা কৌশলে অভিভাবকদের চাপ প্রয়োগ করে টিউশন ফি আদায় করছে। তাদের মধ্যে মানবিকতার বোধটুকুও নেই বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে জানতে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, নানা কৌশলে টিউশন ফি আদায় করা একটি অন্যায় কাজ। তাদের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে আমাদের প্রতিবাদ জানাতে হবে। শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অমান্য করে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও অর্থ আদায়ের বিষয়টি বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি প্রদান করতে হবে। সরকার বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। বেরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এমন প্রণোদনা দিলে অভিভাবকরা উপকৃত হবেন।

এদিকে চাপ দিয়ে টিউশন ফি আদায় না করতে গত ২৩ এপ্রিল এক জরুরি নির্দেশনা জারি করে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এতে বলা হয়, দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বিরাজমান থাকায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন এবং অন্যান্য খাতে গৃহীত ফি এ মুহূর্তে পরিশোধে চাপ প্রয়োগ না করার জন্য অনুরোধ করা হলো। পরবর্তীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে বা স্বাভাবিক অবস্থায় আসলে বকেয়াসহ মাসিক বেতন ও অন্যান্য ফি আদায়ে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

school-02

এ নির্দেশনা পাঠদান ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের জন্য প্রযোজ্য হবে বলেও জানানো হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জি এম নিজাম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে সেশন শেষ হয়ে নতুন সেশন শুরু হতে যাচ্ছে। এ কারণে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু করতে হচ্ছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলের বেতন-ভাতা পরিশোধে শিক্ষার্থীদের কাছে টিউশন ফি আদায় করছে স্কুলগুলো।

তবে এমন পরিস্থিতিতে টিউশন ফি আদায়ের ক্ষেত্রে মানবিক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, বর্তমানে কেউ যদি টিউশন ফি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তবে তাকে চাপ দেয়া যাবে না। কর্তৃপক্ষকে মানবিকভাবে বিষয়টি দেখতে হবে। সব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি।

জানতে চাইলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বলেন, আমরা এ বিষয়ে চাপ সৃষ্টি না করতে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি। এরপরও আমাদের কাছে যদি কোনো অভিযোগ আসে, আমরা অবশ্যই দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

এমএইচএম/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।