লটারিতে স্কুলে ভর্তি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। তবে এ পদ্ধতিতে ভর্তির সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে অভিভাবকদের মাঝে।
তারা বলছেন, ভালো পড়ালেখা করলেও ভালো স্কুলে ভর্তি হওয়ার নিশ্চয়তা নেই। তাই প্রস্তুতি থাকলেও পছন্দের স্কুলে ভর্তি থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হতে পারে। আবার অনেকে মনে করছেন, এ পদ্ধতিতে ভর্তি নেয়া হলে সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্য কমতে পারে।
রাজধানীর মতিঝিল এলাকার হুমায়রা সুলতানা নামে একজন অভিভাবক বলেন, ভর্তির ক্ষেত্রে লটারি অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়। মেধা-দক্ষতা-সৃজনশীলতার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা দরকার। ভর্তি পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থী নিজের যোগ্যতায় তার পছন্দের স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করতে পারে। কিন্তু লটারিতে সে সুযোগ থাকে না।
রাজধানীর আরেক অভিভাবক ইমদাদুল আলম বলেন, লটারি হলে খারাপ হবে না। কারণ, একজনের সন্তান তুলনামূলক কম মেধাবী হলে তাকে একটি বেনামি প্রতিষ্ঠানেই পড়তে হবে। যার মেধা ভালো, সে সবসময় নামীদামী প্রতিষ্ঠানে পড়বে। এটা চলতে থাকলে ধনী আরও ধনী, গরিব আরও গরিব হওয়ার মতো অবস্থা। এতে করে সমাজে বৈষম্য বাড়তে থাকবে।
এদিকে, আগামী বুধবার (৯ ডিসেম্বর) থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ার সম্ভবনা থাকায় লটারি আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছে রাজধানীর অনেক স্কুলে। চলতি সপ্তাহ থেকে বেসরকারি স্কুলে ভর্তির অনলাইন ফরম বিক্রি শুরু করতে পারে। একাধিক স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
অন্যদিকে সেন্ট যোসেফ, সেন্ট গ্রেগরী, হলিক্রস, রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজসহ বেশ কয়েকটিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা লটারিতে নাকি ভর্তি পরীক্ষায় যাবেন, সে বিষয়ে একটি ঘোষণা আসতে পারে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার শামীম ফরহাদ বলেন, আমরা ভর্তি ফরম ছেড়েছি আরও দুই মাস আগে। তবে সরকার যেহেতু এবার লটারির মাধ্যমে পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছে, তাই আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। লটারির বিজ্ঞপ্তি ও নির্দেশনা আসলে আমরা স্বায়ত্তশাসিত কলেজগুলো মিলে বৈঠক করব। তারপর সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেব। এখনো ফাইনালি কিছু বলতে পারছি না। তবে যেকোনো পদ্ধতিতে ভর্তি নেয়ার সব প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।
এর আগে গত ২৫ নভেম্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি বলেছেন, সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এ বছর ক্যাচমেন্ট এরিয়া ৪০ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ করা হবে। ক্লাস্টারভিত্তিক ভর্তির ক্ষেত্রে লটারিতে পাঁচটি স্কুল নির্বাচন করতে পারবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে মেধা দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও অনেক শিক্ষার্থী পাবে না আশানুরূপ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা লাভের সুযোগ।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর যেখানে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের মাঝে তুমুল প্রতিযোগিতা থাকে, সেখানে লটারির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম হলে শিক্ষার্থীদের মাঝে মেধার প্রতিযোগিতা থাকবে না।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রতিটি স্কুলেই মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে আমাদের। আশা করছি প্রতিটি শিক্ষার্থীই তার মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবে যথাযথভাবে।
এমএইচএম/এসজে/এমএস