অমন নৃত্য থামানো যায়!
বুধবার সন্ধ্যাতেও বসেছিল লোকো গানের আসর। শিল্পীদের সুর আর ছন্দ মেলায় আগন্তুকদের তখন কাছে টানছে। কিন্তু আটকে যাচ্ছেন মেলার পেছন ভাগেই। আর আটকে যাবেন না কেন! অমন মুহূর্ত এড়িয়ে চলা যায়? চোখ যেন একেবারে ছানাবড়া। গানের তালে নাচ। আহা! অনেকটাই মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো। যেন সবাইকে থামিয়ে নৃত্যবন্দনায় প্রাণ কাড়লো স্বর্ণ ও তানজিলা নামের দুই শিশু।
ওপাশ থেকে তবলা-বাশিঁর সুর ভেসে আসছে। সঙ্গে ঢাকের শব্দও। তাতেই নাকি ওদের নাচের বায়না। ভিড়ের কারণে মাকে নিয়ে মঞ্চের কাছে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। দর্শক সারির পেছনেই থেমে যেতে হয়েছে। তাতে কি হয়েছে! বইমেলার মূল মঞ্চের পাশে বর্ধমান হাউজের পূর্বপাশে গোলাকার বারান্দায় হলো তাদের নৃত্য পরিবেশন।
মানবী নাকি পুতুল নাচের মেলা প্রথমে ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না। তাসনুভা তুশমী স্বর্ণ। মিরপুর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের (মূল ব্রাঞ্চ) প্লে গ্রুপের ছাত্রী। সঙ্গে নিয়েছে জান্নাতুল নাইম তানজিলাকে। তানজিলাও যাত্রাবাড়ির একটি স্কুলে প্লে গ্রুপে সবে ভর্তি হয়েছে। স্কুলের দুই নবীন শিক্ষার্থীই যুগল নৃত্যে মুগ্ধ করে দিল উপস্থিত দর্শকদের।
গান থেমে যাচ্ছিল মূল মঞ্চে। সঙ্গে যন্ত্রও। তবে কিছুতেই থামছিল না ওরা। প্রতি গানের শেষে সামান্য বিরতি। তাও যেন ওদের সহ্য হচ্ছিল না। শৈশবের প্রথম প্রহর এখনো কাটেনি। তবুও অভিমানে গদ গদ। অভিযোগের সুরে বলছে, গান বন্ধ করে দেয় কেন?
কখনো ফড়িংয়ের মতো, আবার কখনো হরিণের মতো নেচে নেচে দর্শকের মন কাড়ছিল স্বর্ণ। মনে হচ্ছিল, শত বছরের প্রশিক্ষণ নিয়ে কোনো নাচের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। নাচে যা দেখাবার, তার সবই দেখালো। যাকে বলে শৈল্পিক নৃত্য।
কালো পাম্প সুতে সাদা মোজা। পরনে হলুদ ফ্রক। কাঁধ পর্যন্ত চুলগুলো জুটি বাঁধা। মাথার দু’পাশে প্রজাপতি সাদৃশ দুটি ক্লিপ। যখন নাচছিল, তখন ওর শরীর যেন সকলের মনের কথাগুলো বলে দিচ্ছে। মঞ্চের ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, লালনের প্রতিটি গান ওর দেহ ভঙ্গিমায় আলাদা প্রাণ পাচ্ছে। প্রাণে দোলা দেয়া অমন নাচ ক্যামেরাবন্দী করতেও কার্পণ্য করেনি মুগ্ধ দর্শক।
টানা নৃত্যে ঘেমে গেলেও ক্লান্তি ছিল না ওর দেহ মনে। মায়ের আচল দিয়ে ঘাম মুছেই দৌঁড়ে আবার নাচের মঞ্চে। স্বর্ণের নাচে সঙ্গ দিয়ে সুখ পাচ্ছিল তানজিলাও। কেউ কাউকে বিরক্তি করে নয়, যেন নৃত্যশিল্পে একে অপরের সহযোগী হয়ে মন মজাচ্ছে। তানজিলার নৃত্য চঞ্চলতায় যেন চোখ ফেরানো দায়।
স্বর্ণের মা শামীমা আখতারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ও নাচ ছাড়া কিছুই বোঝে না। গান শুনলেই নৃত্য করতে পাগলামি শুরু করে দেয়। আজ এখানে এসেও নাচের বায়না ধরেছে। বাধা দিয়ে লাভ হয় না। ওর অস্থিরতা দেখে একটি নাচের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছি। সেখানে অনেক ভালো করছে। ওর নাচে সবাই মুগ্ধ।
তবে তানজিলাকে কোনো নাচের স্কুলে ভর্তি করানো হয়নি-বলছিলেন নাসরীন আক্তার পপি। তিনি বলেন, টেলিভিশন দেখে দেখেই ওর নাচ শেখা। নাচে প্রচণ্ড আগ্রহ ওর। আজ স্বর্ণকে পেয়ে ও যেন নাচের প্রিয় সঙ্গীকেই পেয়ে গেল।
এএসএস/এমজেড/আরআইপি