বইমেলায় প্রাণহীন ছোট ছোট প্রকাশনী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:২৭ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

চলছে অমর একুশে বইমেলা। এবার শুরু থেকে জমজমাট প্রাণের মেলা। বইপ্রেমীদের এমন ভিড়ে উচ্ছ্বসিত প্রকাশকরাও। তবে বড় স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোর মতো মেলায় এবার জ্বলে উঠতে পারেনি ছোট ছোট প্রকাশনী ও স্টলগুলো। এসব স্টলে নেই পাঠক সমাগম। প্রত্যাশা অনুযায়ী বেচাকেনা না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন স্টলের বিক্রয়কর্মীরা।

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, মেলা প্রাঙ্গণে ছোট ছোট প্রকাশনীর স্টলগুলোতে নেই পাঠকদের সরব উপস্থিতি। এসব স্টলে অলস সময় পার করছেন বিক্রয়কর্মীরা। স্টলের মধ্যে তাদের কেউ আড্ডা দিচ্ছেন, কেউ আবার বই পড়ে সময় কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে পাঠক-ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে প্যাভিলিয়ন ও বড় বড় প্রকাশনীগুলোতে। সেখানে বইয়ের সন্ধানে পাঠকদের ভিড় লেগে থাকতে দেখা গেছে।

এই স্টলগুলোর বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুরু থেকেই স্টলগুলো প্রাণহীন। পাঠক সমাগম না থাকায় অলস সময় কাটাতে হয় তাদের। প্রতিদিন দুই থেকে তিনটির বেশি বই বিক্রি করতে পারছে না প্রকাশনীগুলো। ছুটির দিন কিছুটা বেচাকেনা হলেও সাপ্তাহের অন্যান্য সময় মলিন হয়ে থাকতে হয় তাদের।

কলম প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী সাইম ভুইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিন দুই থেকে তিনটির বেশি বই বিক্রি হয় না। বেশিরভাগ সময় চুপচাপ বসে থাকি, কখনো বই পড়ি। স্টল ছোট হওয়ায় ক্রেতারা আসেন না। মেলা শেষে স্টল ভাড়া উঠতে কষ্ট হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।’

একই সুরে কথা বলেন তুষারধারা পাবলিকেশনের বিক্রয়কর্মী শিমুল পারভেজ। ২০১৯ সাল থেকে তারা বইমেলায় স্টল দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সহকর্মী আছেন, আড্ডা দেই। প্রতিদিন সন্ধ্যায় দুই/একজন ক্রেতা এসে ঢুঁ মেরে চলে যান। মেলার প্রায় অর্ধেক দিন শেষ কিন্তু বেচাবিক্রি বাড়ছে না।’

jagonews24

বর্নপ্রকাশ লিমিটেডের বিক্রয়কর্মী জেরিন বলেন, ‘বই কেনার মতো মানুষ কম। স্টলে তো ভিড় হয় না, খুব বেশি পাঠকও আসেন না। ছুটির দিনগুলোতে কিছুটা বেচাবিক্রি হয়।’

এদিকে আলোচিত বই না থাকাও স্টলগুলোতে পাঠকদের আকর্ষণ করছে না বলে জানিয়েছেন পাঠকরা। মেলায় মামুন নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘স্টলে ভালো বই না থাকলে কেউ কেনে না। ভালো বই খুঁজতে হলে বড় প্রকাশনীগুলোতে খোঁজা হয়। তারা সবসময় সৃজনশীল বইয়ে অগ্রাধিকার দেন। তাছাড়া স্টলের সাজসজ্জাও কিছুটা প্রভাব ফেলে।’

আরও পড়ুন>> ১৩তম দিনে এলো নতুন ১১০ বই

তবে এই ছোট স্টলগুলোতে সৃজনশীল ও বিচিত্র ধরনের সব বই রয়েছে বলে দাবি করেছেন পান্ডুলিপি প্রকাশনীর আলফাজ হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এখানেও সব ধরনের বই-ই আছে৷ পাঠকদের এসে দেখতে হবে। এসে না দেখলে বই কেনা যায় না। সবাই এখন ভাইরাল বইয়ের পাগল। টার্গেট করে ওই সব স্টলেই আসেন।’

অন্যদিকে, মেলায় ব্যস্ত প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মীরা। বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকেন বলে জানিয়েছেন তারা।

অন্যপ্রকাশ প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মী বায়েজিদ প্রান্ত জাগো নিউজকে বলেন, ‘বড় বড় স্টলগুলোতে বই বেশি থাকে। পাঠকরা সুসজ্জিত স্টল দেখেও আসেন। এছাড়াও ভালো ভালো বই পাঠকদের আকৃষ্ট করতে পারে।’

তবে এবারের মেলার বিন্যাস গত বছরের মতো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মেলায় স্টলগুলো গুচ্ছ আকারে হয়নি। এমনভাবে করা হয়েছে যেন প্রতিটি স্টল লম্বা সারি থেকে দেখা যায়। ওভাবেই বিন্যস্ত করা রয়েছে।’

জানা যায়, এবছর বাংলা একাডেমি মাঠে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি এবং বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটিসহ মোট ৩৭ প্যাভিলিয়ন রয়েছে।

আরএএস/ইএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।