চলচ্চিত্রে অনুদান নিয়ে যে কারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৫ পিএম, ০৪ জুলাই ২০২৫
কেউ কেউ অনুদান কমিটির সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন

সম্প্রতি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হয়েছে, এ বছর কারা পাচ্ছেন চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুদান। এরপর থেকে একে একে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছেন বঞ্চিতরা। কেউ কেউ অনুদান কমিটির সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কমিটির তিন সদস্য পদত্যাগ করার পর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে রূপ নেয়। কিন্তু কেন এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া?

স্বৈরাচার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অনুদান দেওয়া হবে বলে ধরে নিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বাস্তবে আসলে কী হয়েছে? প্রতি বছর চলচ্চিত্র অনুদানের প্রজ্ঞাপনে প্রযোজক ও পরিচালকদের নাম উল্লেখ করা হতো। এ বছর সেটা করা হয়নি। তা থেকে অনেকের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, তবে কি কমিটির সদস্যদের পরিজনদের দেওয়া হচ্ছে অনুদান?

অনুদান কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিস বিভাগের শিক্ষক ও অভিনেতা তিতাস জিয়া এবং নির্মাতা ও সম্পাদক সামির আহমেদ। কাগজে পদত্যাগের কারণ ব্যক্তিগত। তবে পরে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মম বলেছেন, যে সিনেমাগুলো অনুদান পাচ্ছে, কমিটির সদস্য হিসেবে সেখানে তার কোনো অংশীদারত্ব নেই। অর্থাৎ, অনুদানের জন্য নির্বাচিত চলচ্চিত্রগুলো বাছাই ও চূড়ান্তকরণে তার কোনো দায় নেই।

তরুণ নির্মাতা জিয়াউল হক রাজু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘২-৩ মিনিটের পিচিং সেশন করে কি প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, আপনারা জুড়ি মেম্বাররা লয়াল? সততার সাথে কাজ করে থাকলে ২-৩ মিনিট পিচিং রাখতেন না। এত ডিটেইল প্রেজেন্টেশন নিয়ে যাওয়ার পর যদি প্রেজেন্টেশন করতে দেওয়া না হয় তাহলেই বোঝা যায় আপনাদের কতটা সততা ছিল।’

কী হয়েছিল? নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনুদান কমিটির এক সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা যে সিনেমাগুলোকে অনুদানের জন্য সুপারিশ করেছি, সেসব সিনেমার গল্পগুলো ছিল অসাধারণ। সেগুলোর প্রায় কোনোটাই অনুদান পায়নি। প্রজ্ঞাপনে যাদের নাম আছে, তাদের অনেককে পিচের জন্য ডাকারই কথা নয়, সেরকম সব ছবি অনুদান পেয়েছে। বিশেষ করে একটা ছবির গল্প এতটাই ভালো ছিল যে, সবাই সেটাকে ফুল নম্বর দিয়েছে। ওই প্রকল্পের নাম প্রজ্ঞাপনে নেই।’

অনুদানের জন্য আবেদন করেছেন, পাবেন বলে আশাবাদী ছিলেন এ রকম একজন আবেদনকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনুদান পাইনি বলে আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমার লবিং হয়তো অতটা স্ট্রং ছিল না। কিন্তু আমার দুঃখ, পিচিংয়ের প্রেজেন্টেশন খুলতে না খুলতেই পিচিং শেষ হয়ে গিয়েছিল! অথচ আমার গল্পটা নাকি অনেকেরই পছন্দ হয়েছিল!’

অনুদান প্রত্যাশী আরেক পরিচালক বলেন, ‘আমি ছোট মানুষ। অনেক বড় বড় পরিচালককে সারাদিন বসিয়ে রেখে যা করা হয়েছে, তা বলার মতো নয়! যারা অনুদান পেয়েছে, তাদের অনেকে আছেন যারা কোনোদিন কোনো কিছুই বানাননি। কীভাবে তাদের অনুদান দেওয়া হলো সেটা সাবার সামনে প্রকাশ করতে হবে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ

চলচ্চিত্র পরিচালক ও পরিবেশক অনন্য মামুন লিখেছেন, ‘গত ১০ বছরে চলচ্চিত্রে যত অনুদান দেওয়া হয়েছে, তার সুফল কতটা এসেছে? বরং অনুদানের চলচ্চিত্রগুলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়, যেখানে প্রকৃত প্রযোজকরা থেকে যান বঞ্চিত।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘এই অনুদানের টাকায় যদি প্রতিটি জেলায় সরকারি সিনেমা হল গড়ে তোলা হতো, তাহলে চলচ্চিত্রশিল্পের ভীষণ উপকার হতো।’

চলচ্চিত্র পরিচালক আশরাফ শিশির লিখেছেন, ‘একদল ফেরেশতা এইবার চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কমিটিতে ছিল। অতঃপর আগের রেজিমকে গালি দিয়ে নিজেরাই নিজেদের ভেতর অনুদান ভাগ করে নিল। কয়েক কোটি টাকা!’

কবি শিমুল সালাহউদ্দিন লিখেছেন, ‘অনুদান পাওয়া মাহমুদুল ইসলাম বিগত দিনে অনুদান পাওয়া নির্মাতা হুমায়রা বিলকিসের স্বামী। হুমায়রা বিলকিস আবার অনুদান কমিটিতে থাকা পরিচালক আকরাম খানের ছোটবোন নাফিসার বান্ধবী। অমুকের ছোটভাই, তমুকের বান্ধবী, অমুকের প্যানেলে কাজ করে এমন বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে তবে এবারের অনুদান? অনুদান পাওয়া গোলাম সোহরাব দোদুল ইউনূস সাহেবের কী হন সেটা আমি আর নাই বা বলি! তো নিজেরাই যদি নিয়ে নেন সব, দেবেন কাকে!’

দেখা গেছে, অনুদান পাওয়া মো. আবিদ মল্লিক আছেন চলচ্চিত্র অনুদান উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে। অনুদান পাওয়া চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও সমালোচক সাদিয়া খালিদ রীতি চলচ্চিত্রবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি এবং চলচ্চিত্র অনুদান স্ক্রিপ্ট বাছাই কমিটির সদস্য। চলচ্চিত্রবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য মো. আরিফুর রহমান ও মুশফিকুর রহমানও পেয়েছেন অনুদান। লাবিব নাজমুস ছাকিব ফিল্ম আর্কাইভ বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য, মোহাম্মদ সাইদুল আলম খান তথ্য মন্ত্রণালয় সংস্কারের সার্চ কমিটির সদস্য।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩২টি সিনেমাকে দেওয়া হবে মোট ১৩ কোটি টাকা অনুদান। অনুদান কমিটির সদস্যরা হলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও অভিনেতা-নির্দেশক ড. আবুল বাশার মো. জিয়াউল হক (তিতাস জিয়া), চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক খান শারফুদ্দীন মোহাম্মদ আকরাম (আকরাম খান), চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার নার্গিস আখতার, রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি আহমেদ মুজতবা জামাল, নির্মাতা ও সম্পাদক সামির আহমেদ, অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম।

এমআই/আরএমডি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।