সুরের পাখি আবদুল আলীমের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি


প্রকাশিত: ০৮:১৭ এএম, ২৭ জুলাই ২০১৬

বাংলা গানে বিস্ময়কর এক নাম আবদুল আলীম। প্রখ্যাত লোকসংগীতশিল্পী তিনি। তাকে ভালোবেসে গান পিপাসু বাঙালিরা সুরের পাখি বলে ডাকেন। আজ পাখির ৮৫তম জন্মবার্ষিকী। জাগো নিউজের পক্ষ থেকে এই কিংবদন্তির জন্মদিনে রইল শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আব্দুল আলীমের জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও সংগঠন আয়োজন করেছে বেশ কিছু অনুষ্ঠান। আজ বুধবার সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে চ্যানেল আইতে প্রচার হয়েছে ‘গানে গানে সকাল শুরু’ নামের একটি অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন আবদুল আলীমের তিন সন্তান আজগর আলীম, জহির আলীম ও নূরজাহান আলীম।

দেশ টিভিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) বেলা ৩টায় প্রচার হবে ‘প্রিয়জনের গান’ নামের একটি অনুষ্ঠান। তিন ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে গাইবেন আবদুল আলীমের তিন সন্তান। এছাড়া বিভিন্ন টিভি চ্যানেল আবদুল আলীমের জীবন ও কর্মের ওপর আরও কিছু অনুষ্ঠান প্রচার হবে।

ভারতের মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামে ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই আবদুল আলীমের জন্ম। মাত্র ১৪ বছর বয়সে এই মেধাবী শিল্পীর দুটি গানের রেকর্ড প্রকাশ করে গ্রামোফোন কোম্পানি। দেশ বিভাগের সময় ঢাকায় চলে আসেন তরুণ আবদুল আলীম। ঢাকায় এসে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যোগ দেন পূর্ব পাকিস্তান রেডিওতে। তারপর কেবলই তিনি ইতিহাসের পথে হেঁটেছেন।

অর্থনৈতিক অনটনের কারণে কোন শিক্ষকের কাছে গান শেখার সৌভাগ্য তাঁর হয়নি। তিনি অন্যের গাওয়া গান শুনে গান শিখতেন। আর বিভিন্ন পালা পার্বণে সেগুলো গাইতেন। এভাবে পালা পার্বণে গান গেয়ে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তবে একসময় তিনি সহচর্য পেয়েছেন প্রখ্যাত সংগীত বিশারদ মুমতাজ আলী খান এবং মোহাম্মদ হোসাইন খসরুর মতো উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতবিদদের। একসময় তিনি কলকাতায় যান এবং সেখানে আব্বাসউদ্দিন ও কাজী নজরুল ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে গান করেছেন। তিনি লোক ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উপর দীক্ষা নিয়েছেন বেদার উদ্দিন আহমেদ, ওস্তাদ মোহাম্মদ খসরু, মমতাজ আলী খান, আব্দুল লতিফ, কানাই লাল শীল, আব্দুল হালিম চৌধুরী প্রমুখের কাছে। লেটো দলে, যাত্রা দলে কাজ করেছেন।

সংগীত জীবনে তার দুই শতাধিক রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এ দেশের চলচ্চিত্রের প্রথম দিকের শতাধিক ছবিতে প্লে-ব্যাক করেছেন আবদুল আলীম। ১৯৫৬ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ৫০টি ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন আবদুল আলীম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মুখ ও মুখোশ, এদেশ তোমার আমার, জোয়ার এলো, সুতরাং, নদী ও নারী, কাগজের নৌকা, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, সাত ভাই চম্পা, স্বর্ণকমল, গাঁয়ের বধূ, লালন ফকির, দস্যুরানী, উৎসর্গ, তীর ভাঙা ঢেউ। এসব ছবিতে শিল্পীর গাওয়া গান এখনো শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে।

আবদুল আলীম মানুষের ভালবাসা যেমন পেয়েছেন, তেমনি নানা স্বীকৃতি-সম্মাননা-পদক/পুরস্কারও পেয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক, পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার এবং অসাধারণ পারফর্ম্যান্সের জন্য লাহোরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্সে ৫টি স্বর্ণপদক লাভ করেন।

এই কিংবদন্তি ঢাকা মিউজিক কলেজের লোকগীতি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের অনেক খ্যাতিমান লোকগীতি শিল্পী তার ছাত্র।

আবদুল আলীমের গাওয়া জনপ্রিয় গানের মধ্যে অন্যতম হলো- দুয়ারে আইসাছে পালকি, হলুদিয়া পাখি, সর্বনাশা পদ্মা নদী, পদ্মার ঢেউরে, প্রেমের মরা জলে ডুবে না, উজান গাঙ্গের নাইয়া, মনে বড় আশা ছিল, বাবু সেলাম বারে বার, সব সখিরে পার করিতে, মন পবনের নাও আমায় লইয়া যাও প্রভৃতি।

১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন আবদুল আলীম। মানুষ তাকে আজও স্মরণ করে ভালোবাসা আর গানে গানে।

এলএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।