হালখাতার হালহকিকত

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:০৬ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

বিলকিস নাহার মিতু

‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’- গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলার প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ বাংলা সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পহেলা বৈশাখকে বরণ করার জন্য চলে নানা আয়োজন। বৈশাখী মেলা, আনন্দ শোভাযাত্রা দিয়ে দিনটি উদযাপন করা হয়।

পহেলা বৈশাখের সঙ্গে আরও একটি বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তা হলো হালখাতা। গ্রামে-গঞ্জে এখনো হালখাতার প্রচলন রয়েছে। ধারণা করা হয়, হালখাতার প্রচলন হয় ১৫৮৪ সনে সম্রাট আকবরের সময়ে। নিয়মানুযায়ী চৈত্র মাসের শেষ দিনে প্রজারা জমিদারদের রাজস্ব কর বা খাজনা প্রদান করতেন। পরের দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে হতো ‘পুণ্যাহ’ অনুষ্ঠান। নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ পুণ্যাহ প্রথা চালু করেছিলেন।

পরে এই ‘পুণ্যাহ’ অনুষ্ঠানই নববর্ষ উৎসবে পরিণত হয়। এই দিনে প্রজাদের মিষ্টিমুখ করানো হতো এবং পুরোনো হিসেব বাদ দিয়ে নতুন বছরের হিসাবনিকাশ নতুন করে শুরু করা হতো। এখান থেকেই শুরু হয় হালখাতা। হালখাতা শব্দের ‘হাল’ সংস্কৃত ও ‘খাতা’ ফারসি শব্দ থেকে এসেছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

হাল শব্দের সংস্কৃত অর্থ হলো লাঙল আর ফারসি হলো নতুন। হালখাতা বললেই মোটা লাল রঙের একটি খাতার ছবি ভেসে ওঠে। এই খাতায় দোকানিরা প্রথমে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বা ‘এলাহি ভরসা’ এবং ‘৭৮৬’ লিখে রাখতেন। হিন্দু ব্যবসায়ীরা ধুপ জালিয়ে ফুল দিয়ে দোকান সাজান। এরপর গণেশ ও লক্ষ্মী দেবীর পূজা করেন। এরপর নতুন খাতা মন্দিরে পাঠানোর পরে পুরোহিত তাতে সিঁদুরের স্বস্তিকা চিহ্ন ও চন্দনের ফোঁটা দিতেন।

দোকানিরা হালখাতা করার কয়েকদিন আগে খদ্দেরদের একটি করে আমন্ত্রণপত্র দেন। তাতে পাওনা হিসাব লেখা থাকে। হালখাতার দিন দোকানটাকে নানা ভাবে লাল, নীল ঝালর দিয়ে সাজানো হয়। মাইকে গান বাজানো হয়। খদ্দেররা এলে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

হালখাতা ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক তৈরি করে। পূর্বে বৈশাখের প্রথমদিন হালখাতা উদযাপন করা হলেও বর্তমানে গ্রামে বৈশাখ মাসের যে কোনো সময়ে এটি উদযাপন করা হয়। কিন্তু আধুনিক যুগ হওয়ায় হালখাতার প্রচলন কিছুটা কমে এসেছে। খাতার বদলে এখন জায়গা দখল করে নিয়েছে কম্পিউটার।

হালখাতা এখন অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। বছরের দেনা-পাওনার হিসাব এখন মাসে মাসেই হয়ে থাকে। বাকি খাওয়ার প্রচলন অনেকটাই কমে এসেছে। ফলে বাঙালি সংস্কৃতি থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে মা ও মাটির সঙ্গে মিশে থাকা নানা উৎসব।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।