সিন্দুরমতির তীরে রাম নবমীর মেলা

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১০:২৩ এএম, ০৮ এপ্রিল ২০২৫

চৈত্র মাস পড়তেই সিন্দুরমতি তীর্থধামের চারপাশে শুরু হয় ব্যস্ততা। কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটের সীমান্তে অবস্থিত এই পবিত্র স্থান যেন প্রতি বছর রাম নবমীর তিথিতে নতুন প্রাণ পায়। মেলা আর পুণ্যস্নানের আয়োজনকে ঘিরে তীর্থযাত্রী, দোকানদার, গ্রামবাসী সবাই মেতে ওঠে উৎসবে।

রাম নবমীর সকালে সূর্য উঠতে না উঠতেই সিন্দুরমতির দিঘির পাড়ে ভিড় জমে যায়। মাথায় গামছা বাঁধা, গায়ে শাড়ি বা ধুতি-পাঞ্জাবি পরা হাজার হাজার পূণ্যার্থী পুণ্যস্নান করতে আসেন। পুকুরপাড়ের বাতাসে ধূপ আর ফুলের গন্ধ, কোথাও ঘণ্টাধ্বনি, কোথাও ভক্তিমূলক গানের সুর মিলে এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরি করে।

সিন্দুরমতির তীরে রাম নবমীর মেলা

মেলার ভেতর পা রাখলেই চোখে পড়ে নানান রকমের হস্তশিল্প, মাটির পাত্র, কাঠের খেলনা, বেলুন আর সিঁদুর-মালা-বালা বিক্রি হচ্ছে পসরা সাজিয়ে। এক কোনায় রাবড়ি-মালাইয়ের হাঁড়ি থেকে ধোঁয়া উঠছে, আরেক কোণায় পাঁপড়-বোঁদে-পায়েসের দোকানে ভিড়। গ্রামের শিশু-কিশোররা হাতে ঘুড়ি, পকেটে লাটিম আর মুখে হাসি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

এই মেলায় শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, জড়িয়ে আছে শত বছরের ইতিহাসও। শোনা যায়, ১৯৭৫ সালে সরকারি উদ্যোগে দিঘির সংস্কারের সময় মাটির নিচ থেকে উদ্ধার হয় বহু প্রাচীন মুদ্রা আর মূর্তি, যা আজও সংরক্ষিত আছে জাতীয় যাদুঘরে।

সিন্দুরমতির তীরে রাম নবমীর মেলা

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যেমন তীর্থযাত্রী আসেন, তেমনি প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও ভক্তরা পাড়ি জমান এই মেলায় অংশ নিতে। বছরের পর বছর ধরে এই মিলনমেলায় গড়ে ওঠে নতুন বন্ধুত্ব, পুরনো মুখের দেখা পাওয়া যায়, আর ভাগ করে নেওয়া হয় প্রসাদ, হাসি আর স্মৃতি।

সিন্দুরমতি শুধু একটি তীর্থস্থান নয়, এটি বাংলার লোকজ সংস্কৃতি, ধর্মীয় ঐতিহ্য আর গ্রামীণ জীবনের এক অপূর্ব প্রতিচ্ছবি। এই মেলা যেন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে প্রতি বছর, চৈত্রের রাম নবমীতে।

জেএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।