ভূমিকম্প:ভয় নয়, সতর্কতা জরুরি

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:০২ পিএম, ০৭ মে ২০২৫

তানজিদ শুভ্র

ভূমিকম্প এমন এক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা আগে থেকে বোঝা যায় না। ভূ-পৃষ্ঠের অভ্যন্তরে টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়ার ফলে সৃষ্ট এই কম্পন হঠাৎ করে মাটি কাঁপতে শুরু করে, বাড়িঘর ভেঙে পড়ে, অনেক মানুষ হতাহত হয়, মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও পার্বত্য অঞ্চলগুলোর ঝুঁকি বেশি। ভূমিকম্প সম্পর্কে সচেতনতা জীবন রক্ষার প্রথম ও প্রধান শর্ত।

বিজ্ঞাপন

ভূমিকম্পের বিপদ ঠেকানো সম্ভব নয়। কিন্তু সচেতনতা থাকলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমিয়ে আনা যায়। আমরা যদি আগে থেকেই কিছু বিষয় জানি এবং মানি, তাহলে অনেক মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব। আমাদের সমাজে ভূমিকম্প সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতার মাত্রা এখনো খুবই কম। এমনকি অনেক শিক্ষিত মানুষও জানেন না ভূমিকম্পের সময় কী করা উচিত, বা কী করা উচিত নয়। তাই ভূমিকম্পের সময় কী করবো, কী করবো না-এই জ্ঞান থাকা খুবই দরকার।

ভূমিকম্পের সময় সবার আগে মাথা ঠান্ডা রাখা জরুরি। ভয় পেয়ে চিৎকার বা দৌড়ঝাঁপ করলে বিপদ আরও বাড়তে পারে। যদি ঘরের মধ্যে থাকেন, তাহলে শক্ত কোনো জিনিসের নিচে আশ্রয় নিন। যেমন টেবিল, খাট বা কাঠের মেঝে। মাথা ও ঘাড় বাঁচানোর চেষ্টা করুন। জানালার পাশে, ভারী আলমারি বা আয়নার কাছে যাওয়া যাবে না।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

যদি আপনি বাইরে থাকেন, তাহলে খোলা জায়গায় চলে যাওয়া তুলনামূলক নিরাপদ। কোনো গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি বা বিল্ডিংয়ের কাছে দাঁড়ানো ঝুঁকিপূর্ণ। গাড়ির মধ্যে থাকলে গাড়ি থামিয়ে দেওয়া উত্তম তবে কোনো উঁচু ব্রিজ বা ভবনের নিচে থামানো ঠিক না।

ভবন নির্মাণেও সচেতনতা জরুরি। আমাদের দেশে অনেক ভবন নিয়ম মেনে তৈরি হয় না। এই ভবনগুলো ভূমিকম্পে সহজেই ভেঙে পড়ে। উন্নত দেশগুলোতে যেমন জাপানে, ভবন তৈরির সময় ভূমিকম্প সহনশীল ডিজাইন ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশেও ইঞ্জিনিয়ারদের এসব নিয়ম মানতে হবে। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এই বিষয়ে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

প্রতিটি পরিবারে একটি ভূমিকম্প প্রস্তুতি পরিকল্পনা থাকা দরকার। সবাই মিলে ঠিক করুন ভূমিকম্প হলে কে কোথায় আশ্রয় নেবে, কীভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। বাড়িতে একটি ‘জরুরি ব্যাগ’ বানিয়ে রাখুন। এই ব্যাগে কিছু শুকনো খাবার, পানির বোতল, ওষুধ, টর্চলাইট, কিছু টাকা ও দরকারি কাগজ রাখুন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভূমিকম্প নিয়ে প্রশিক্ষণ খুবই দরকার। শিশু-কিশোরদের শেখাতে হবে কীভাবে ভূমিকম্পের সময় নিজের ও অন্যের জীবন রক্ষা করা যায়। প্রতি মাসে বা তিন মাসে একবার ফায়ার সার্ভিস কিংবা স্কাউট সদস্যদের সহযোগিতায় মহড়া করা যেতে পারে। এতে করে তারা অভ্যাস গড়ে তুলবে।

গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। টেলিভিশন, রেডিও, ফেসবুক, ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে নিয়মিতভাবে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো যেতে পারে। এতে করে সাধারণ মানুষ অনেক কিছু জানতে পারবে।

সরকারি বিভিন্ন সংস্থা, যেমন: ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স, সেনাবাহিনী ও পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। ভূমিকম্পের পর উদ্ধার তৎপরতা যাতে দ্রুত শুরু করা যায়, তার জন্য প্রশিক্ষিত দল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা জরুরি।

বিজ্ঞাপন

আমাদের মনে রাখতে হবে, ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, কিন্তু সচেতনতা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা এর ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমাতে পারি। ভূমিকম্পের সময় ঘাবড়ে না গিয়ে যদি আমরা সঠিক কাজ করি, তাহলে অনেক জীবন রক্ষা পাবে।

শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবাইকে এই বিষয়ে জানাতে হবে। স্কুল, অফিস, মসজিদ, বাজার, পাড়া-মহল্লা সর্বত্র সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রতিটি নাগরিক যদি নিজের দায়িত্ব পালন করে, তাহলে একটা বড় বিপদেও আমরা অনেকটাই নিরাপদ থাকতে পারি।

ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, আমরা তা থামাতে পারব না, কিন্তু জেনে, বুঝে এবং মেনে চললে আমরা ঝুঁকি কমাতে পারি। তাই এখনই সময় নিজে সচেতন হওয়ার এবং অন্যকে সচেতন করার।

বিজ্ঞাপন

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

লেখক: শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর।

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।