সাদা মরুভূমি অ্যান্টার্কটিকা: শীতের চরম বাস্তবতা

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৩৯ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা

পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় এবং অনাবাসিক মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। চারদিকে বরফের পাহাড়, কামড় দেওয়া ঠান্ডা হাওয়া আর জমে থাকা নীরবতার মধ্যে এই মহাদেশ যেন অন্য এক গ্রহের অংশ। পৃথিবীর দক্ষিণতম প্রান্তে অবস্থিত এই অঞ্চলে শীত এমন এক দানবীয় রূপ নেয়, যা মানুষের কল্পনাও ছাপিয়ে যায়। তাপমাত্রা এখানে শূন্য ডিগ্রির অনেক নিচে নেমে যায় কখনো কখনো মাইনাস ৮০ থেকে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় না। স্যাটেলাইট রেকর্ডে মাপা মাইনাস ৮৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এখনো বিশ্বের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তালিকায় শীর্ষে।

অ্যান্টার্কটিকার শীতের ভয়াবহতার সবচেয়ে বড় কারণ হলো এর অনন্য ভৌগোলিক অবস্থান। এটি পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে অবস্থান করায় বছরের অর্ধেক সময় সূর্যের আলো এখানে পৌঁছায় না। পোলার নাইটের সময় পুরো মহাদেশ অন্ধকারে ঢাকা থাকে এবং সূর্য দিগন্তেও দেখা দেয় না। এই দীর্ঘ অন্ধকার তাপমাত্রাকে দ্রুত কমিয়ে আনে এবং বরফস্তরের ওপরে শীতল বাতাস ঘনীভূত হয়ে আরও ঠান্ডা আবহ তৈরি করে। তাছাড়া মহাদেশটির গড় উচ্চতা প্রায় ২,৫০০ মিটার হওয়ায় বায়ুমণ্ডল আরও পাতলা ও শুষ্ক থাকে, ফলে তাপমাত্রা আরও দ্রুত নিচে নেমে যায়।

সাদা মরুভূমি অ্যান্টার্কটিকা: শীতের চরম বাস্তবতা

তীব্র বাতাসও অ্যান্টার্কটিকার শীতকে ভয়াবহ করে তোলার অন্যতম কারণ। এখানে ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটারের বেশি বেগে বাতাস বইতে দেখা গেছে, যা ব্লিজার্ড বা তুষারঝড় তৈরিতে ভূমিকা রাখে। এই ঝড়ের মধ্যে কয়েক ফুট দূরেও কিছু দেখা যায় না, তাপমাত্রা মুহূর্তেই প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। গবেষণা স্টেশনগুলোতে থাকা বিজ্ঞানীদের সবসময় বিশেষ পোশাক এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হয়, কারণ সাধারণ কাপড় বা তাপরোধী গ্লাভস তীব্র ঠান্ডার সামনে অকার্যকর হয়ে পড়ে।

মহাদেশজুড়ে থাকা বরফের স্তরের গভীরতাও শীতকে আরও প্রবল করে তোলে। অ্যান্টার্কটিকার বরফস্তরের গড় পুরুত্ব প্রায় ১.৯ কিলোমিটার, কোথাও কোথাও ৪.৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। এত ঘন বরফ তাপ শোষণ করতে পারে না, বরং প্রতিফলিত করে মহাশূন্যে পাঠিয়ে দেয়। ফলে মহাদেশের নিজস্ব তাপমাত্রা বাড়ার সুযোগ থাকে না। এ কারণেই অ্যান্টার্কটিকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘প্রাকৃতিক ফ্রিজ’ বলা হয়।

সাদা মরুভূমি অ্যান্টার্কটিকা: শীতের চরম বাস্তবতা

মানুষের বসতি স্থাপন এখানে কার্যত অসম্ভব। শুধু বিভিন্ন দেশের গবেষকরা স্বল্প সময়ের জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে অ্যান্টার্কটিকার স্টেশনগুলোতে অবস্থান করেন। তবে তাদের জন্যও জীবন এখানে চ্যালেঞ্জের। প্রতিদিনের খাবার, পানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা সবকিছুই আলাদাভাবে তৈরি ও রক্ষা করতে হয়, কারণ সামান্য ভুলও জীবনহানিকর হতে পারে। বাইরে বেরোতে হলে পোশাকের একাধিক স্তর, ব্যালেন্সড অক্সিজেন সাপোর্ট এবং তাপরোধী জুতা বাধ্যতামূলক।

সাদা মরুভূমি অ্যান্টার্কটিকা: শীতের চরম বাস্তবতা

অ্যান্টার্কটিকার অসহনীয় শীত পৃথিবীর জলবায়ু ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখানকার বরফস্তর সমুদ্রপৃষ্ঠকে নিয়ন্ত্রণ করে, ঠান্ডা হাওয়া বৈশ্বিক বাতাসের গতিপথ বদলায় এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। তাই এই সাদা মরুভূমির কঠোরতা শুধু প্রকৃতির বিস্ময়ই নয়, মানব সভ্যতার অস্তিত্বের সঙ্গেও গভীরভাবে সম্পর্কিত।

সাদা মরুভূমি অ্যান্টার্কটিকা: শীতের চরম বাস্তবতা

পৃথিবীর অনেক জায়গায় শীত কঠিন হলেও অ্যান্টার্কটিকার শীত যেন অন্য এক কালপঞ্জির গল্প। সেখানে প্রতিটি দিনই মানুষকে মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির শক্তির সামনে মানবজাতি কতটা ক্ষুদ্র এবং পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা মহাদেশ কতটা অদম্য।

আরও পড়ুন
পাঁচ শতাব্দীর ভূকম্পনের ইতিহাস
অনেকেই ভূমিকম্প টের পান না, কিন্তু কেন?

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।