একজন ভাষা সৈনিকের অজানা কথা

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৫৬ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২

নাজনীন তৌহিদ

এত দুর্ভাগা আমি, না ভাষার জন্য প্রাণ উজাড় করা আত্মত্যাগীদের দেখলাম না আমাকে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার দিলেন তাদের পেলাম। তবে একটা কিছু পেয়েছি। একটি ভাষা আর একটি স্বাধীন পতাকা। যার ছাউনি তলে আশ্রয় নিই। ভীষণ মন খারাপ হলে চিৎকার করে কাঁদি। ভীষণ আনন্দিত হলে বাঁধভাঙ্গা হাসিতে ফেটে পড়ি।

কিছুদিন আগে একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মিসেস নাসরিন মাশকুরা রোকন হঠাৎ ফোন করে বললেন তার মাকে নিয়ে একটি বিশেষ সম্মাননা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান আছে, একটি চ্যানেলে লাইভ করা হবে। তিনি সেই অনুষ্ঠানে তার মাকে নিয়ে একটি কবিতা পড়তে চান। অতএব আমাকে চটজলদি একটি কবিতা লিখে দিতে হবে।

তিনি কিছু জিনিসপত্র আমাকে মেইল করে পাঠালেন। আমি তা পেয়ে রীতিমত কাঁপতে লাগলাম। কেননা যাকে নিয়ে লিখতে হবে তিনি সাধারণ কোনো নারী নন! তিনি একজন মহান ভাষা সৈনিক!

মিসেস নারিন মাশকুরা রকোন আমার খুবই শ্রদ্ধাভাজন। বলে রাখা ভালো তার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবু রুশদ রকোন উদ্দউলা। আমার স্বামী সেনাবাহিনীতে থাকার সুবাদে তাদের সঙ্গে একই সেনা ছাউনি তলে থাকা হয়েছে কয়েকবার। তাই তিনি আমার খুবই শ্রদ্ধা ভাজন একজন ব্যক্তিত্ব। তবে তিনি যে একজন মহীয়সী ভাষা সৈনিকের সন্তান তা আমার জানা ছিল না। তার মা ভাষা সৈনিক মাহফিল আরা আজমত।

jagonews24

হ্যাঁ, আজ যার কথা বলছি তিনি একজন ভাষাসংগ্রামী মহীয়সী নারী। তিনি মাহফিল আরা আজমত। ভাষা আন্দলনের সে উত্তাল সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের অর্থনীতি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। ১৯২৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি চট্টগ্রামের কক্সবাজার জেলার চকরিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন।

ভাষা আন্দলনের ওই সময়টাতে পারিবারিকভাবে তার বিয়ের সব কিছু ঠিক হয়েছিল এবং পরিবারের কাছে তার থাকার কথা কিন্তু তিনি সব উপেক্ষা করে ঢাকাতে অবস্থান করেন এবং বিয়ের দিনটাতেই লাল শাড়ি কে উপেক্ষা করে ভাষার দাবিতে রাজপথে নেমে পড়েন। সারা রাত পোস্টার লেখা আর দিনে ভাষার স্লোগান নিয়ে রাজপথে সহযোদ্ধদের সঙ্গে থাকতেন।

পুলিশের লাঠি চার্জ, টিয়ার গ্যাস সর্বপরি সহযোদ্ধাদের বুকের রক্তে তার হাতকে রঞ্জিত করেন। তিনিই সেই সাহসী নারী যিনি ২১শে ফেব্রুয়ারি সহযোদ্ধাদের সঙ্গে ভাষা শহীদ রফিকের রক্তভেজা শার্ট নিয়ে আরও সোচ্চার হয়ে ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ ‘নূরুল আমিন গদি ছাড়’ স্লোগানে স্লোগানে শত্রুদের ভীত প্রকম্পিত করেন।

সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বার আর নাম না জানা এ সব ভাষা শহীদ এবং ভাষা সৈনিকদের ভুলি কী করে? তাদের রক্তের দাগ মুছি কী করে? এই মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।

jagonews24

শুধু বিশেষ এই দিনটিতে ফুল দিয়েই আমাদের দায়বদ্ধতা কি শেষ? না! আসুন তবে আমাদের এই দেশটাকে, আমাদের এই মাতৃভাষাকে আঁকড়ে ধরি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে এই আত্মত্যাগের গল্পকথা শুনিয়ে তাদের মধ্যে বাংলা ভাষার বীজটাকে বিশুদ্ধভাবে রোপণ করার দায়িত্ব আপনার আমার আমাদের সকলের।

আমরা তো সেই গর্বিত জাতি যারা নিজের ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন করে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদার স্থান দখল করে নিয়েছি। তাই শুধু আজকের দিনই নয়। হে আমার মাতৃভূমি, হে আমার মাতৃভাষা তোমাকে ভালোবাসি প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে। তোমার আত্মত্যাগী সন্তানদেরকে দোয়ায় , শ্রদ্ধায় , ভালোবাসায় বুকে চেপে রাখি হর রোজ।

লেখক:কথাসাহিত্যিক ও আবৃত্তি শিল্পী

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।