হাদি হত্যা: মোটরসাইকেলের মালিক সন্দেহে গ্রেফতার হান্নানের জামিন
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিকানা সন্দেহে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার আব্দুল হান্নানের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম হাসান শাহাদাত। হান্নানের পক্ষে তার আইনজীবী জামিন আবেদন করলে আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে তা মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মহান পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগ।
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে রিকশাযোগে যাওয়ার সময় ওসমান হাদির ওপর সশস্ত্র হামলা হয়। মোটরসাইকেলে আসা দুই ব্যক্তি খুব কাছ থেকে গুলি চালিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
হামলার পর র্যাব জানায়, ঘটনাস্থলে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির নিবন্ধন নম্বর ঢাকা মেট্রো ল–৫৪–৬৩৭৫। এ তথ্যের সূত্র ধরে পরদিন বিকেলে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকা থেকে বাইকটির তৎকালীন মালিক হিসেবে আব্দুল হান্নানকে আটক করা হয়। ১৪ ডিসেম্বর সকালে তাকে পল্টন থানায় হস্তান্তর করা হয়।
সেদিনই ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালত তাকে তিনদিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ড শুনানিতে হান্নান দাবি করেন অসুস্থতার কারণে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি আগেই একটি শোরুমে বিক্রি করে দেন। শারীরিক অবস্থার কারণে মালিকানা হস্তান্তর সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
রিমান্ড চলাকালে শোরুম মালিকের সঙ্গে তাকে মুখোমুখি করা হয়। বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, হান্নানের নামে নিবন্ধিত দুটি মোটরসাইকেল পাওয়া যায়— একটি সুজুকি জিক্সার, অন্যটি ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের। রিমান্ড শেষে ১৭ ডিসেম্বর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হামলায় ব্যবহৃত হোন্ডা হর্নেট মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বর প্লেট রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বনলতা আবাসিক এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিটিসি)।
ডিএমপি জানায়, ব্যবহৃত হোন্ডা হর্নেট মোটরসাইকেলটির প্রকৃত নিবন্ধন নম্বর ঢাকা মেট্রো ল–৫৪–৬৫৭৪। তবে হামলার সময় এতে ঢাকা মেট্রো ল–৫৪–৬৩৭৬ নম্বরের ভুয়া প্লেট লাগানো ছিল। অথচ আব্দুল হান্নানের নামে নিবন্ধিত বাইকটি ছিল সুজুকি জিক্সার মডেলের। এই বিভ্রান্তি ও তথ্যগুলোই জামিন শুনানিতে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে শরিফ ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) হাদির মরদেহ দেশে আনা হয়। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধের পাশে শরিফ ওসমান হাদিকে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় ১৪ ডিসেম্বর রাতে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
এমডিএএ/এমএএইচ/