প্রিয় খেলা যেভাবে ধ্বংস করে শিক্ষার্থীদের

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:৪৮ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

মোহাম্মদ সোহেল রানা

বর্তমানে বিশ্বের জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। সব বয়সী মানুষই ক্রিকেট খেলতে এবং দেখতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের সবচেয়ে প্রিয় এ খেলা। দিন দিন দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। এতে বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোও বাংলাদেশকে নতুন করে চিনতে শুরু করেছে।

এ সময়ে ক্রিকেট খেলাই শিশু-কিশোরদের প্রধান বিনোদন হয়ে উঠেছে। যখন নিজ দেশের সঙ্গে অন্য দেশের কোনো খেলা থাকে; তখন ক্রিকেটভক্ত শিশু-কিশোররা সবকিছু ভুলে যায়। নির্ধারিত সময়ে খেলা দেখতে আগেই পড়াশোনা বা অন্য কাজ দ্রুত শেষ করে নেয়। কোনো সিরিজি বা ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেলে গ্রাম-গঞ্জের চায়ের দোকান, মুদি ও ছোট হোটেলগুলোসহ সব স্থানে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জয়োল্লাসে চারদিক মুখরিত হয়ে ওঠে।

তবে এ বিনোদনের চিত্র কোনো কোনো গ্রামে যেন ভিন্নরকম। ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন সিরিজ বা বিশ্বকাপ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট সংস্থা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের আয়োজন করে। বর্তমানে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে- বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ (এলপিএল), ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল), ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টি (আইএল টি-২০), বিগ ব্যাশ লিগ, দ্য হান্ড্রেড, টি-টেন লিগ।

জাতীয় সিরিজ ছাড়াও এসব লিগ কমবেশি সারাবছর চলতে থাকে। এসব লিগকে কেন্দ্র করেই গ্রামের মহল্লায় মহল্লায় দেখা মেলে বিনোদনের নামে ভিন্ন চিত্র। যেখানে লক্ষ্য করলেই দেখা মেলে ক্রিকেট জুয়ার উৎসবে মেতে উঠছেন দর্শকরা। এসব জুয়ায় অংশগ্রহণকারীর বেশিরভাগই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। মাঠে হচ্ছে খেলা আর মাঠের বাইরে জুয়া নিয়ে ব্যস্ত তারা।

এসব খেলায় প্রতি বল কিংবা প্রতি ওভারে কত রান হবে বা প্রতি ওভাবে কয়টা ডট বল যাবে ইত্যাদি নিয়ে বাজি ধরা হয়। ১৫-২০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকা পর্যন্ত চলে এই বাজি। অল্প সময়ে বাড়তি টাকা পাওয়ার আশায় দিন দিন আসক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে অনেকেই লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। অনেকে আবার বয়সে বড়। যারা বিভিন্ন কাজকর্ম করেন বা অযথা অলস সময় কাটান। কেউ বখাটে হিসেবেও পরিচিত। প্রাইমারি পড়ুয়াদেরও এসব জুয়ায় অংশ নিতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন

জুয়ার টাকা সংগ্রহ করতে পরিবারের কাছ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রাইভেট ও কোচিংয়ের বেতনের সঙ্গে বাড়তি টাকা নেয়। কেউ খাতা-কলমসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার অজুহাতেও টাকা নেয়। প্রতিনিয়ত বাজিতে হারার পরও অপেক্ষায় থাকে কখন জয় লাভ করবে। আশা করে বাজিতে জয়ের পরে আগের হারের ক্ষতি পুষিয়ে নেবে।

এই জুয়াকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের ব্যবসা। কেউ স্বল্প সময়ের জন্য চড়া সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবসা করেন। কেউ আবার কমিশন ব্যবসা করেন। কেউ জুয়ার টাকার জিম্মাদার। এতে বার বার হারে মূলধন হারানোর পর জয় পেতে অন্যজনের কাছ থেকে ধার বা সুদের বিনিময়ে টাকা নেয়। একবার জয়ের মুখ দেখলেও পরে হারাতেই এগিয়ে থাকে। তাই সুদে টাকা নিয়েও কোনো লাভ করতে পারে না।

সেই ধার বা সুদের টাকা আদায়ের জন্য যখন তাগাদা বা চাপ দেয়; তখন টাকা সংগ্রহের জন্য পড়াশোনার খরচের কথা বলে পরিবারের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করে। অনেকেই মুঠোফোন, আংটি, হাতঘড়িসহ নিজের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করে। সাইকেলও বিক্রি করে দেয়। অনেকেই কোনো উপায় না পেয়ে টাকা সংগ্রহের জন্য নিজের ঘর থেকে ধান-চাল চুরি বা পরিবারের সদস্যদের আড়ালে পড়াশোনা ফাঁকি দিয়ে কাজও করে থাকে।

বেশিরভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ম্যাচ শেষ হয় গভীর রাতে। এতে রাত জেগে খেলা দেখে সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারে না। ফলে অনেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও যেতে পারে না। এভাবে দিন দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না গিয়ে নিজের লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে অনেকে ফলাফলের দিক দিয়েও পেছনে পড়ে যায়। যারা এক সময়ে ভালো ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিল; তারা ধীরে ধীরে ঝরে পড়ার তালিকায় যুক্ত হতে থাকে।

এতে একদিকে যেমন পড়াশোনায় পিছিয়ে যাচ্ছে; অন্যদিকে টাকা সংগ্রহের জন্য ছোট অপরাধসহ চুরিতেও যুক্ত হচ্ছে। অনেকে মাদকেও জড়িয়ে পড়ছে। কোনো এক সময়ে পড়াশোনা থেকে একদম ছিটকে পড়ে। ভালো শিক্ষার্থীও বখাটে হিসেবে পরিচিতি পায়। নানামুখী চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ পথও বেছে নেয়। এমন ঘটনা আমাদের গ্রামগুলোতে নিয়মিত ঘটছে। এভাবেই জুয়ার ফাঁদে নিস্ব হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।