বিশ্ব বই দিবস
বইয়ের পাতায় জেগে ওঠা বিশ্ব

একটি বই খুললেই আমরা যেন প্রবেশ করি এক নতুন জগতে। সেখানে সময় থেমে যায়, শব্দগুলো কথা বলে আর চরিত্রেরা আমাদের আপনজন হয়ে ওঠে। এই বইকে নিয়েই গোটা একটি দিন—বিশ্ব বই দিবস।
বই দিবস কী? কেন পালিত হয়?
দিবসটি ‘বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’ বা ‘ওয়ার্ল্ড বুক অ্যান্ড কপিরাইট ডে’ নামে পরিচিত। প্রতি বছর ২৩ এপ্রিল দিবসটি পালিত হয়। দিনটি লেখক, পাঠক, প্রকাশক এবং বইপ্রেমীদের জন্য এক মিলনমেলা।
বই দিবসের উদ্দেশ্য
পাঠাভ্যাসকে উৎসাহ দেওয়া, কপিরাইট সুরক্ষা বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং বইয়ের মাধ্যমে জ্ঞান ও সংস্কৃতির বিস্তার ঘটানো।
দিবসটির সূচনা
১৯৯৫ সালে ইউনেস্কো ২৩ এপ্রিলকে বিশ্ব বই দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তারিখটিকে বেছে নেওয়ার পেছনে রয়েছে একটি চমৎকার ইতিহাস—এই দিনেই উইলিয়াম শেক্সপিয়র, মিগুয়েল দে সার্ভানতেস এবং ইনকা গারসিলাসো দে লা ভেগার মতো বিশ্বখ্যাত তিন লেখকের মৃত্যুদিন। স্পেনের কাতালোনিয়ায় এই দিনে বই উপহার দেওয়ার ঐতিহ্য ছিল, যেটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। ফলে বই ও কপিরাইট দিবস হিসেবে তারিখটিই সবচেয়ে অর্থবহ হয়ে ওঠে। এ কারণেই ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস।
বিশ্বজুড়ে বই দিবস
বিশ্ব বই দিবসে ইউনেস্কো একটি ‘ওয়ার্ল্ড বুক ক্যাপিটাল’ ঘোষণা করে। যেটি বছরব্যাপী বিভিন্ন বইভিত্তিক কার্যক্রমের কেন্দ্র হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বইমেলা, পাঠচক্র, সাহিত্যিকদের সংলাপ এবং শিশুদের বইপড়ার চ্যালেঞ্জের আয়োজন করা হয়। ডিজিটাল যুগে ই-বুক ও অডিও বুকও এ উদযাপনের অংশ। ২০২৫ সালের জন্য ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড বুক ক্যাপিটাল শহর হচ্ছে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো। যেখানে পরিবেশবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পাঠানন্দকে কেন্দ্র করে উৎসব পালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে দিবসের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা সবচেয়ে বেশি ফুটে ওঠে অমর একুশে বইমেলায়। যদিও ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস উপলক্ষে এখনো বড় কোনো জাতীয় কর্মসূচি দেখা যায়নি। তবে কিছু প্রকাশনা সংস্থা, পাঠাগার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিবসটি ঘিরে আয়োজন করে পাঠচক্র, আলোকচিত্র প্রদর্শনী কিংবা লেখকদের নিয়ে কথোপকথনের অনুষ্ঠান। তরুণ প্রজন্মকে বইয়ের জগতে ফিরিয়ে আনতে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। দেশে বিভিন্ন অনলাইন বুকক্লাব, ফেসবুক পেজ, ইউটিউব রিভিউ প্ল্যাটফর্ম বই বিষয়ক আগ্রহ বাড়াচ্ছে, যা আশার আলো দেখায়।
বইয়ের গুরুত্ব
প্রযুক্তির প্রসারে অনেকেই ভাবেন, বইপড়ার প্রয়োজনীয়তা কমে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বইয়ের গভীর পাঠ যেভাবে চিন্তা তৈরি করে, তা টিকটক বা রিলস দিয়ে হয় না। একটি ভালো বই একদিকে যেমন আনন্দ দেয়; তেমনই অন্যদিকে মননশীলতা, সহমর্মিতা আর ভাষাজ্ঞান গঠনে সহায়তা করে।
তাই বিশ্ব বই দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—মানব সভ্যতার অগ্রগতির পথে বইয়ের অবদান কতটা গভীর। একটি বই হতে পারে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো অনুপ্রেরণা। আসুন আমরা পাঠাভ্যাসকে আবার জীবিত করি। অন্তত আজ একটি বই হাতে নিই, একটি বই উপহার দিই, একটি বই নিয়ে আলোচনা করি—এভাবেই প্রতিটি পৃষ্ঠা হয়ে উঠুক নতুন দিনের প্রত্যয়।
এসইউ/জিকেএস