চিঠি দিবস

প্রেমপত্র থেকে আজকের মেসেজিং অ্যাপ, আবেগ কি একই!

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২৪ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত

বাংলা সাহিত্যে কিংবা আমাদের সামাজিক ইতিহাসে প্রেমপত্রের আলাদা স্থান আছে। চিঠি লেখা মানেই ছিল অনেক প্রস্তুতি-সাদা কাগজ, কালির কলম, আর নিভৃতে বসে মন খোলা আবেগের ঢল। প্রতিটি শব্দ যেন বহন করত হৃদয়ের সৎ অনুভূতি।

প্রেমপত্র পাঠানোও ছিল এক রোমাঞ্চকর ঘটনা। ডাকপিয়নের অপেক্ষা, উত্তর আসতে বিলম্ব, প্রতিটি চিঠি হাতে পাওয়া মানেই যেন নতুন করে প্রিয়জনকে ছুঁয়ে দেখা। চিঠির ভাঁজে ভাঁজে হয়তো থাকত শুকনো ফুল, সুগন্ধি কাগজ কিংবা হাতের লেখা কবিতা-যা প্রাপককে দিত অমূল্য আবেগের স্মৃতি।

তবে চিঠির সীমাবদ্ধতাও ছিল। উত্তর পেতে অনেক সময় লাগত, মাঝপথে হারিয়ে যেত অনেক বার্তা। তবুও প্রেমপত্রের আবেদন অটুট ছিল, কারণ এতে মানুষের আন্তরিকতা ও ধৈর্যের প্রতিফলন ঘটত।

এক সময় প্রেমপত্রের দখল নিলো টেলিফোন। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি টেলিফোনের প্রসার ঘটলে যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ হয়। কেবল শব্দ নয়, সরাসরি প্রিয়জনের কণ্ঠস্বর শোনার সুযোগ তৈরি হয়। প্রেমিক-প্রেমিকার আলাপে দ্রুততা এলেও, এতে হারিয়ে গেল চিঠির মতো নিভৃত আবেগময় মুহূর্ত।

যদিও টেলিফোন যোগাযোগকে আরও ঘনিষ্ঠ করেছিল, কিন্তু খরচ এবং সহজলভ্যতা ছিল বাধা। গ্রামাঞ্চলে তখনো ডাকপিয়নের কাঁধেই নির্ভরশীল ছিল আবেগের বার্তা।

মোবাইল ফোন জনপ্রিয় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ৯০-এর দশকের শেষ ভাগে এসএমএস (শর্ট মেসেজ সার্ভিস) প্রেমিক-প্রেমিকার জীবনে নতুন অধ্যায় যুক্ত করল। ছোট ছোট বাক্যে দ্রুত বার্তা পাঠানো গেলেও, তাতে হারিয়ে গেল দীর্ঘ প্রেমপত্রের বিস্তার।

তবে এসএমএস তরুণ প্রজন্মকে তাৎক্ষণিকভাবে অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ দিল। অনেকের কাছে এটি ছিল ‘মিনি প্রেমপত্র’। রাত জেগে শত শত এসএমএস আদান-প্রদান তখন এক প্রজন্মের প্রেমকাহিনির অংশ হয়ে উঠেছিল।

ইন্টারনেটের আবির্ভাবের পর ইমেইল দ্রুত যোগাযোগের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠে। প্রেমপত্রের জায়গায় ইমেইল এসেছে নতুন যুগের প্রতীক হয়ে। ই-মেইল যেন আধুনিক প্রেমপত্রের রূপ। অন্যদিকে কর্মক্ষেত্র ও আনুষ্ঠানিক যোগাযোগেরও প্রধান হাতিয়ার।

ই-মেইল পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছে যায় প্রিয়জনের কাছে। সেই সঙ্গে প্রেমপত্রের মতো দীর্ঘ লেখা সম্ভব, আবার সহজে সংরক্ষণও করা যায়। সঙ্গে যুক্ত করা যায় ছবি, গান ও ডকুমেন্ট, যা আবেগ প্রকাশ আরও বহুমাত্রিক হয়ে উঠল।

প্রেমিক-প্রেমিকার যোগাযোগ ই-মেইল থেকে আরও সহজ করেছে আজকের সোশ্যাল মিডিয়া ও ইনবক্স। আজকের দিনে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা ইনস্টাগ্রামের ইনবক্স মানুষকে এমন অবস্থায় এনেছে যেখানে ভালোবাসা প্রকাশ করা যায় তৎক্ষণাৎ, যে কোনো জায়গা থেকে। ইমোজি, ভয়েস মেসেজ, ভিডিও কল-সব মিলিয়ে যোগাযোগ হয়ে উঠেছে আরও প্রাণবন্ত।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই দ্রুত যোগাযোগ কি আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে, নাকি আবেগকে করেছে হালকা? হাতে লেখা চিঠির মতো অপেক্ষার রোমাঞ্চ আজ আর নেই। অনেকেই মনে করেন, দ্রুততার যুগে ভালোবাসার গভীরতা কিছুটা হলেও ক্ষীণ হয়েছে।

চিঠি থেকে ইমেইল ও ইনবক্সের যাত্রা কেবল প্রযুক্তির উন্নয়ন নয়, বরং মানবসম্পর্কের পরিবর্তনেরও প্রতিফলন। অতীতে প্রিয়জনের চিঠি পেতে যে ধৈর্য, অপেক্ষা ও আবেগের ঘনত্ব ছিল তা কি আজকের এসএমএস বা ভয়েস মেসেজে পাওয়া যায়? চিঠির পাতার সেই ঘ্রাণ মনে যে তোলপাড় করা অনুভূতি জাগাতো তা আজ ফোনের স্ক্রিনে পড়া মেসেজে পাওয়া সম্ভব না। তবে ভালোবাসার প্রকাশ এখন আরও সহজ হয়েছে ঠিকই তবে আগের মতো গভীর আবেগের জন্য যে অপেক্ষা, সেই মাধুর্য অনেকটাই হারিয়ে গেছে।

কেএসকে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।