এনবিআর চেয়ারম্যান
আগামী বছর থেকে অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন বাধ্যতামূলক হবে
আগামী বছর থেকে সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাটের রিটার্ন অনলাইন জমা বাধ্যতামূলক করবে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। তিনি জানান, বর্তমানে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব তথ্য জানান।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আগামী বছর থেকে আমরা ভ্যাটের অনলাইন রিটার্নও বাধ্যকতামূলক করে দেবো। আজও আমি একটা মিটিং করেছিলাম আমাদের বোর্ডে এবং সেখানে আমি নির্দেশনা দিয়েছি যে আমরা পারতপক্ষে পেপার রিটার্নটা নেবো না। কারণ এর মধ্যে অনেক রকমের ঝামেলা হয়।
কর বা ভ্যাটের রিটার্ন জমা নেওয়ার মাধ্যমে ডলার সাশ্রয় সম্ভব হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভ্যাটের রিটার্নটা খুব সহজ, বেশি জটিল কিছু না।
তিনি বলেন, দৌড়াদৌড়ি করে কিংবা যানবাহন ব্যবহার করে ম্যানুয়াল পদ্ধতি রিটার্ন জমা দিতে গেলে তেল পোড়ে। এই তেল কিনতে হয় রেমিট্যান্স থেকে আসা অর্থ দিয়ে।
আবদুর রহমান খান বলেন, আমরা বিদেশ থেকে ডলার দিয়ে এই তেলগুলো ইমপোর্ট করে আনি এবং আমাদের অত্যন্ত দামি বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের ভাইয়েরা যারা প্রবাসে কঠোর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন, তারাই এই রেমিট্যান্সগুলো পাঠান। এটা দিয়ে আমরা তেল ইমপোর্ট করি। সেই তেলটা আমি অহেতুক পোড়াবো কেন? আপনি মোটরসাইকেল ব্যবহার করলে পুড়বে, সিএনজি করলেও পুড়বে, আপনি গাড়ি ব্যবহার করলেও পুড়বে। সুতরাং আপনি যত দৌড়াদৌড়ি করবেন তত ডলার পুড়বে। সেটা না করে আপনারা যার যার ঘরে বসে, যার যার অফিসে বসে আপনারা অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দেবেন এবং অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দেবেন, তাহলে এটা আপনাদের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক হবে।
অনলাইন ফিটার্ন জমায় ভয়ের কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং এটা মানে খুবই পরিচ্ছন্ন একটা পদ্ধতি। আমরা আগামী বছর এটাকে অ্যাপ তৈরি করে আপনাদের মোবাইলেও দিয়ে দেবো। আপনারা চাইলে গাড়িতে বসে, অবসর সময়ে, বিছানায় শুয়ে মোবাইলেও করে ফেলতে পারবেন। শুধু আপনাদের তথ্যগুলো লাগবে। আরেকটা বড় সুবিধা এখানে কোনো ডকুমেন্ট আপলোড করতে হয় না। আপনার কিছু দেওয়া লাগবে না। আপনি শুধু ইনফরমেশনগুলো দেবেন, আমরা ওটাকেই ১০০ শতাংশ বিশ্বাস করে নিয়ে নিলাম। কিন্তু পরে যদি আপনি কোনো মিথ্যা ঘোষণা দেন, সেই দায় আপনার।
এরবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আয়করের জটিল আইন-কানুন, বিধি-বিধান কোনো কিছুই আপনাদের জানার দরকার নেই। আপনি শুধু আপনার ই-রিটার্ন পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন করে যে তথ্যগুলো সেখানে আপনার কাছে চায়, সেই তথ্যগুলো ঠিকভাবে অ্যান্ট্রি করবেন।
তিনি বলেন, যেহেতু একটা ফর্মুলা করে, প্রোগ্রামিং করে প্রতি বছর যে আইনটা হয়, সে অনুযায়ী আমরা সিস্টেমকে কমান্ড দিয়েছি। সুতরাং সিস্টেম নির্ভুলভাবে ক্যালকুলেশন করবে। ট্যাক্স অথরিটিও আপনাকে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না যে আপনার ক্যালকুলেশনে ভুল আছে, আপনি বেশি রিবেট নিয়ে গেছেন, আপনি কম কর দিয়েছেন—এই কথাগুলো বলার কোনো সুযোগ থাকবে না। আপনাকে যেটা বলতে পারবে, যদি আপনার কোনো তথ্য যদি ভুল হয় অথবা যদি কোনো তথ্য যদি ইচ্ছাকৃতভাবে আপনি না দেখান, সেটার দায়-দায়িত্ব আপনার।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এটা খুবই সহজ এবং আপনাদের মাধ্যমে, আপনারা যখন নিজের হাতে করবেন, তখন সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো যেহেতু আপনারাই হচ্ছেন আমাদের করদাতাদের এবং সমাজের মুখপাত্র, আপনারা কিন্তু প্রবলেমগুলো আরও দ্রুত আইডেন্টিফাই করতে পারবেন যে, আমি নিজে করেছি, আমি এই এই প্রবলেম ফেস করছি। ফলে আমাদের ওপর একটা বাড়তি চাপ তৈরি হবে এবং আমরা এটাকে আপডেট করে ফেলতে পারবো।
এসময় তিনি ডিআরইউ সদস্যদের জন্য ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল সাপোর্টিং বুথের উদ্বোধন করেন। ডিআরইউ সভাপতি সালেহ আকন, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এসএম/ইএ/এমএস