শহীদ রুমীর আজ ৬৪তম জন্মদিন


প্রকাশিত: ১০:৩৭ এএম, ২৯ মার্চ ২০১৫

১৯৭১ সালের অকুতোভয় তরুণ মুক্তিযুদ্ধকালীন ক্র্যাক প্লাটুনের সাহসী গেরিলা যোদ্ধা শহীদ শাফী ইমাম রুমীর আজ ৬৪তম জন্মদিন।

১৯৫১ সালের ২৯ মার্চ জন্ম নেন এই বীর শহীদ। তিনি ছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জেষ্ঠ্য পুত্র। মূলত দেশমাতৃকার জন্য রুমীর নি:স্বার্থ আত্মত্যাগই শহীদ জননী খেতাব এনে দেয় তার মা জাহানারা ইমামকে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ শাফী ইমাম রুমীর অবদান ছিলো অনস্বীকার্য।

যুদ্ধের প্রথম দিকে বাবা এবং মাকে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার জন্যে এক প্রকার অস্থির করে তোলেন। ফিরে আসা অনিশ্চিত জেনেও বুকের নাড়ি ছেড়া ধনকে দেশমাতৃকার কল্যাণে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন মা জাহানারা ইমাম।

যুদ্ধের প্রস্তুতি স্বরূপ রুমী ১৯৭১ এর ২ মে সীমান্ত অতিক্রমের প্রথম প্রয়াস চালান। কিন্ত প্রতিকূল অবস্থার কারণে সে চেষ্টা ব্যার্থ হয়। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় ঠিকই সফল হন এবং সক্ষম হন সীমান্ত পাড়ি দিতে। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ঢাকায় ফেরত আসেন এবং ২নং সেক্টরের অধীন শুরু করলেন দেশমাতৃকার অধিকার রক্ষার লড়াই।

রুমীর মতোই আরো কয়েকজন তরুণ ছিলেন আলতাফ মাহমুদ, আবুল বারাক, আজাদ ও জুয়েল। যাদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় ক্র্যাক প্লাটুন। ক্র্যাক প্লাটুন মূলত ছিলো একটি গেরিলা সংগঠন। এই ক্রাক প্লাটুনের সাহসী তরুণদের গেরিলা আক্রমণে ঢাকায় নাকাল হয়ে পড়েছিলো পাক হানাদার বাহিনী।

সাহসী গেরিলা হামলার কারণে অচিরেই সহকর্মীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন রুমী। জাহানারা ইমামের রচিত ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে যুদ্ধকালীন রুমীদের আনন্দ বেদনার অনেক স্মৃতি ফুটে উঠে। তেমনি একটি স্মৃতি ছিলো সমরক্ষেত্র থেকে প্রিয় মামার উদ্দেশ্যে লেখা শহীদ শাফী ইমাম রুমির একটি চিঠি। যেটি কিনা পরবর্তিতে ‘একাত্তরের চিঠি’ নামক গ্রন্থে সংকলিত হয়েছিলো। সেই চিঠিতে শহীদ রুমি লিখেছিলেন :

আগরতলা - ১৬ জুন, `৭১
প্রিয় পাশা মামা,
অবাক হয়ো না! এটা লেখা হয়েছে আর তোমার কাছে পৌঁছেছে। আর পড়ার পর চিঠিটা নষ্ট করে ফেলো। এ নিয়ে আম্মাকেও কিছু লিখোনা। তাহলে তাদের বিপদে পড়তে হবে। তারাহুড়া করে লিখলাম। আমার হাতে সময় খুব কম। বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে কাল এখান থেকে চলে যেতে হবে।

আমরা একটা ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ লড়ছি। আমরা জয়ী হব। আমাদের সবার জন্য দোয়া কোরো। কী লিখব বুঝতে পাড়ছি না--কত কী নিয়ে যে লেখার আছে! নৃশংসতার যত কাহিনী তুমি শুনছ, ভয়াবহ ধ্বংসের যত ছবি তুমি দেখছ, জানবে তার সবই সত্য। ওরা আমাদের নৃশংসতার সঙ্গে ক্ষতবিক্ষত করেছে, মানব ইতিহাসে যার তুলনা নেই।

আর নিউটন আসলেই যথার্থ বলেছেন, একইধরনের হিংস্রতা নিয়ে আমরাও তাদের উপর আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দেব। জানি না আবার কখন লিখতে পারব। আমাকে লিখ না। সোনার বাংলার জন্য যা পারো কর।

এখনকার মত বিদায়
ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাসহ
রুমী



আজ স্বাধীনতার ৪৪ বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু রুমীদের স্বপ্নের পথ কতটুক পার হয়েছি আমরা তা গোল টেবিলে বসে আলোচনার বিষয়। আজ আমাদের সমাজে রুমীদের মতো সাহসী সন্তানদের অভাব বড়ো প্রকট। যদি রুমী বেচে থাকতেন হয়তো সামনে থেকে তরুণ প্রজন্মকে আবারো নেতৃত্ব দিতে পারতেন। রুমীর হয়তোবা সন্তান থাকতো সে হয়তো বাবার চেয়েও তীব্র দেশপ্রেমিক হতো। আমাদের সাথে স্লোগান ধরতো দেশের জন্য, মানুষের জন্য। জানি, স্বপ্ন স্বপ্নই থাকবে, এ স্বপ্ন আর সত্যি হওয়ার নয়। যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন হে মহান বীর!

রাআহা/এলএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।