মায়ের চোখে আলোকিত দুই ব্যক্তি, সন্তানরাও আগ্রহী মরণোত্তর অঙ্গদানে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২৫ পিএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সদ্য প্রয়াত রাজধানীর বাসাবোর বাসিন্দা নন্দিতা বড়ুয়ার মরণোত্তর অঙ্গদানের কর্নিয়ায় চোখের আলো ফিরে পেয়েছে দুই ব্যক্তি। তার দেখানো পথে দুই মেয়ে শাপলা বড়ুয়া এবং সেজুতি বড়ুয়াও মরণোত্তর অঙ্গদানের ইচ্ছা পোষণ করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অ্যানাটমি বিভাগের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ নন্দিয়া বড়ুয়ার মরণোত্তর অঙ্গগ্রহণ অনুষ্ঠানে সন্তানরা এ ইচ্ছা পোষণ করেন।

চোখে আলো ফিরে পাওয়া দুজন হলেন, কাওখালি কলেজের ব্যবস্থাপনার বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস (২৩) ও পটুয়াখালীর দলিল লেখক আব্দুল আজিজ (৫০)।

আরও পড়ুন>>> মরণোত্তর অঙ্গদান সংক্রান্ত আইন করতে হবে: ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ

অনুষ্ঠানে ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, নন্দিতা বড়ুয়ার এ মহৎ উদ্যোগের প্রশংসা করি। মরণোত্তর অঙ্গদানকারীর দুই মেয়ে শাপলা বড়ুয়া ও সেজুতি বড়ুয়াসহ পরিবারের সবাইকে এ ত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক অঙ্গদাতা হিসেবে সারা ইসলাম বাংলাদেশের মানবকল্যাণে অঙ্গদানে ইতিহাস হয়ে রয়ে যাবেন। সারার পথ অনুসরণ করে আজ অনেকেই ক্যাডাভেরিক অঙ্গদান ও মরণোত্তর অঙ্গদানের আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন।

আজ নন্দিতা বড়ুয়ার অবদান মানব জাতি মনে রাখবে। নন্দিতা বড়ুয়ার কর্নিয়ার নতুন করে চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন আরও দুজন। গত একমাসে মরণোত্তর চক্ষুদান প্রক্রিয়ায় ১২ জনের চোখে সফলভাবে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করেছি। কর্নিয়াগ্রহীতারা বেশ ভালো আছেন। তিনি দেশের সব মানুষের প্রতি এ রকম ভালো কাজে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বেগবান করা হয়েছে। গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধির সঙ্গে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণার কাজে দেশের মানুষকে সম্পৃক্ত করার একটি প্রয়াস হলো এ মরণোত্তর অঙ্গদান।

আরও পড়ুন>>> মরণোত্তর দেহদান: ইসলাম কী বলে?

অনুষ্ঠানে নন্দিতা বড়ুয়ার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি বিভাগে সংরক্ষণ, শিক্ষণ প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কাজে ব্যবহারের আবেদনপত্রটি বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া হয়। উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদের অনুমতিতে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি এনাটমি বিভাগের প্ল্যাস্টিনেশন ল্যাব অ্যান্ড মিউজিয়াম কমপ্লেক্সে সম্পন্ন করা হয়।

মরদেহের এমবামিং প্রক্রিয়ার প্রারম্ভে অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক লায়লা আনজুমান বানুর পরিচালনায় এবং অ্যানাটমি বিভাগের সকল শিক্ষক, কর্মচারী ও রেসিডেন্টদের অংশগ্রহণে মরদেহের যথোচিত সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য শপথ গ্রহণ করা হয়।

গত ৩০ জানুয়ারি রাত আড়াইটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নন্দিতা বড়ুয়া ৬৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনিজনিত রোগে ভুগছিলেন। কিডনি রোগের পাশাপাশি এসএলই ও ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত ছিলেন। জীবদ্দশায় তিনি মরণোত্তর অঙ্গদানের ব্যাপারে সন্তানদের কাছে নিজের ইচ্ছেপোষণ করে গিয়েছিলেন। মৃত্যুবরণ করার পর পরিবারের সম্মতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্নিয়া বিশেষজ্ঞরা প্রয়াতার কর্নিয়া সংগ্রহ করেন।

আরও পড়ুন>>> এক তরুণীর দেহদানে দুই নারীর প্রাণ সঞ্চার, দুজন পেলেন চোখের আলো

এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শীষ রহমান পটুয়াখালীর দশমিনা সাব-রেজ্রিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক আব্দুল আজিজের চোখে ও অপথালমোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজশ্রী দাস ঝালকাটি জেলার কাওখালি কলেজের ব্যবস্থাপনার বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসির চোখে একটি করে কর্নিয়া সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন।

নন্দিতা বড়ুয়ার অঙ্গগ্রহণকালে আরও উপস্থিত ছিলন, বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন, অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক লায়লা আনজুমান বানু, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহ আলম, ভিসির একান্ত সচিব-১ সহযোগী অধ্যাপক (সার্জিক্যাল অনকোলজি) ডা. মো. রাসেল, হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার (টিটো), কর্নিয়া বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শীষ রহমান, কর্নিয়া বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক রাজশ্রী দাস, অ্যানাটমি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শারমিন আক্তার সুমি, নন্দিতা বড়ুয়ার দুই মেয়ে শাপলা বড়ুয়া এবং সেজুতি বড়ুয়া, নন্দিতা বড়ুয়ার কর্নিয়া গ্রহীতা জান্নাতুল ফেরদৌস ও আব্দুল আজিজ প্রমুখসহ অ্যানাটমি বিভাগের শিক্ষক ও রেসিডেন্টরা।

এএএম/এমআইএইচএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।