‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্ব দিতে হবে’
সুস্থতার মাপকাঠি শারীরিকভাবে নিরোগ থাকা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পাওয়ায় সীমাবদ্ধ নয়। বরং শারীরিক, মানসিক পরিবেশ এবং সামাজিক মানদণ্ড বজায় রাখাটাও জরুরি। কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চিকিংসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে- এই গতানুগতিক ধারার মধ্যেই আমরা আটকে আছি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে দেশের স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্ব দিতে হবে।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের কৈবর্ত সভাকক্ষে আয়োজিত ‘প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
ট্রাস্টের স্বাস্থ্য অধিকার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় এবং নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য। অনুষ্ঠানে অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডক্টরস ফর হেল্থ অ্যান্ড এনভাইরনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবু সাইদ, পথিকৃত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. লিয়াকত আলী, পাবলিক হেল্থ স্পেশালিস্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল এবং ৭১ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. খালেদ শওকত আলী।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় মিঠুন বৈদ্য বলেন, ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বরাদ্দ রাখা। তামাক ও কোমল পানীয়সহ সব স্বাস্থ্যহানিকর পণ্যের ওপর উত্তরোত্তর কর বাড়ানোর পাশাপাশি সারচার্জ আরোপ এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নে সব মন্ত্রনালয়ের সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া কমিউনিটি স্বাস্থ্য উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম ও প্রচারণা বাড়ানো যেতে পারে।
ডা. খালেদ শওকত আলী বলেন, স্বাস্থ্যখাতে সরকারের ইতিবাচক অর্জন রয়েছে। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চারটি মূলনীতির সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে যুক্ত করা প্রয়োজন, যেন দেশের জনগণকে স্মার্ট স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়। চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অধিক প্রাধান্য দিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।
ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, বর্তমানে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেকাংশেই চিকিৎসানির্ভর। কিন্তু সুস্বাস্থ্য গড়ে তুলতে কেবলমাত্র চিকিৎসানির্ভর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই সমাধান নয়। স্থানীয় সরকারকে সঙ্গে নিয়ে স্বাস্থ্য উন্নয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের বাজেটও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। একই সঙ্গে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কার্যক্রম নিতে পারে।
কেবলমাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেটের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ডা. লিয়াকত আলী বলেন, সরকার স্বাস্থ্যখাতে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হলেও ২০৩০ সাল পর্যন্ত সরকারের এই অর্জনের ধারাকে অব্যাহত রাখতে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় গুরুত্বারোপ করতে হবে। কারণ, উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিনিয়ত ব্যয় বাড়ায় দেশের প্রান্তিক জনগণের পক্ষে স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়ছে।
অধ্যাপক ডা. আবু সাইদ বলেন, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন বিষদ আকারে গবেষণা। গবেষণার আলোকে ক্ষেত্রবিশেষে গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম নিতে হবে। একই সঙ্গে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শরীরচর্চা ও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
তিনি স্বাস্থ্যখাতে সমতা আনতে এবং জনগণের স্বাস্থ্য ব্যয় কমিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, জনস্বাস্থ্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের মত বিশাল বিষয় নিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। তাই সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠনগুলোকেও বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখতে হবে।
এমওএস/এমকেআর/জেআইএম