বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল

ভাই পরিচয়ে কিডনি দান, পরে জানা গেলো রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩৩ পিএম, ১৯ জুলাই ২০২৩

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে প্রথমবার কিডনি প্রতিস্থাপন নিয়েই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগী ও কিডনিদাতার মধ্যে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে উঠেছে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে ভুগছিলেন সুজন রায়। তিনি গ্রিস প্রবাসী। কম খরচে কিডনি রোগের চিকিৎসার জন্য গ্রিস থেকে দেশে এসে হাসপাতালে হাসপাতালে ছোটেন তিনি। এরপর বিএসএমএমইউতে পরিচয় হয় দালালের সঙ্গে। দালালের সঙ্গে আর্থিক চুক্তিতে কিডনি পান তিনি।

বাংলাদেশে নিজ পরিবারের সদস্য ছাড়া কিডনি দেওয়ার নিয়ম নেই। তবে গত সোমবার (১৭ জুলাই) বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে, সুজন রায় (৪২) নামে এক ব্যক্তিকে কিডনি দিয়েছেন তার ছোট ভাই সুসেন রায় (৩১)। তবে আদতে কিডনিদাতার নাম সুমিত হাওলাদার। অভিযোগ উঠেছে, কিডনি দাতাকে গ্রিসে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার কিডনি নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কিডনিদাতাকে নিজের ভাই বলে পরিচয় দিলেও তিনি কিডনি গ্রহীতার ভাই নন। এ অনিয়ম তদন্তের জন্য এরই মধ্যে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বুধবার (১৯ জুলাই) এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে শোনার পর খুবই অবাক হয়েছি। এ ঘটনায় এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুততার সঙ্গে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন এলে বলা যাবে আসলে ঠিক কী ঘটেছিল।

আরও পড়ুন>> বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু

বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা যায়, বিএসএমএমইউয়ের হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়াটিক অ্যান্ড লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক মো. মহছেন চৌধুরীকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এছাড়া কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন- পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের অধ্যাপক আতিকুল হক, গাইনি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম ও বিএসএমএমইউয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. হেলাল উদ্দিন।

সুমিত হাওলাদারের স্ত্রী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সুসেন রায় নামে যিনি কিডনি দিয়েছেন তিনি আমার স্বামী সুমিত হাওলাদার। তিনি পরিবারকে না জানিয়েই কিডনি দিতে এসেছেন। আমাদের জানিয়েছেন তিনি বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেই ঢাকায় যাচ্ছেন। পরে গণমাধ্যমে খবর দেখে আমরা হাসপাতালে আসি।’

সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালে যিনি কিডনি দিয়েছেন তার নাম সুসেন রায় নন। দাতা ও গ্রহীতা সম্পর্কে ভাই নন। কিডনিদাতাকে গ্রিসে পাঠানো হবে- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে কিডনি নেওয়া হয়েছে। দেশের বর্তমান আইনে আপন ভাইকে কিডনি দেওয়া যায়। তাছাড়া নিকটাত্মীয় ছাড়া কারও কিডনি নেওয়া যায় না।

আরও পড়ুন>> ১৫ বিভাগে সেবা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা

বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কিডনিদাতা বিএসএমএমইউয়ের চতুর্থ তলায় আইসিইউতে আছেন। কিডনিগ্রহীতা সাততলার পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের (অস্ত্রোপচার–পরবর্তী ওয়ার্ড) আইসিইউতে রয়েছেন।

এর আগে সোমবার বিএসএমএমইউয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে প্রথম কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন হয়েছে। ৪২ বছর বয়সী বড় ভাই সুজন রায়কে কিডনি দিয়েছেন তার ৩১ বছর বয়সী ছোট ভাই সুসেন রায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে ২৫ সদস্যের চিকিৎসক দল এ ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রমে অংশ নেন বলেও জানানো হয়।

এএএম/ইএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।