কর্তৃপক্ষের অভিযোগ

প্রেসক্রিপশন পয়েন্টে তালা, নেপথ্যে মন্ত্রীর ছেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২০ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
মন্ত্রীর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে সংবাদ সম্মেলন থেকে

রাজধানীর বনানীতে প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লিমিটেড নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবহার করে অভিযানের পর তালা দেওয়া এবং তা দখলের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এর নেপথ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ছেলে রাহাত মালেকের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার আবুল খায়ের।

রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

খন্দকার আবুল খায়ের বলেন, প্রেসক্রিপশন পয়েন্টের মতো একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে একটি কুচক্রী মহল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ব্যবহার করে বেআইনিভাবে বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে রাহাত মালেকের নির্দেশেই তা করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করতে আইন আদালতকে তোয়াক্কা করা হয়নি। শুধু ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে জোরপূর্বক তা করা হয়েছে। আমাদের এ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও ভবনটি দখল করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।

আরও পড়ুন: ‘প্রেসক্রিপশন পয়েন্টে’ তালা, অভিযান নিয়ে প্রশ্ন কর্তৃপক্ষের 

এ প্রতিষ্ঠানে অভিযান ও তালা দেওয়ার নেপথ্যে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির হাত আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমাদের মনে হয় এখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে রাহাত মালেকের হাত আছে। উনি আমাদের ম্যানেজারকে বলেছিলেন, তিনি প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কিনে নিতে চান। তখন আমাদের ম্যানেজার তাকে বলেন আপনার তো টাকা আছে। এটা কিনে নিতে হবে কেন? তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে বলেছেন, যদি বাড়ি ছেড়ে না দেন তাহলে সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না, আঙুল বাঁকা করতে হবে।

গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইরতেজা হাসানকে এনে হাসপাতালটি তালাবদ্ধ করেন। সেদিন সেখানে থাকা থানা পুলিশ কিংবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কেউ কথা বলেননি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক অভিযোগ করে বলেন, অভিযানের দিন আসা ম্যাজিস্ট্রেট ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লোকজন আমাদের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ দেখাতে পারেননি। শুধু বলেছেন, আপনারা দ্রুত মালামাল সরিয়ে নেন। এর জন্য কোনো কাগজপত্রও দেখাতে পারেননি। তারা আমাদের লাইসেন্স স্থগিত করতে পারে, কার্যক্রম বন্ধ করতে পারে। কিন্তু আমরা কবে মালামাল সরিয়ে নেবো তা তো বলতে পারে না। তারা যেহেতু মালামাল সরিয়ে নিতে বলছে, অবশ্যই তাদের অভিপ্রায় আছে।

আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বোনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও অভিযোগ করেন, আমরা জানতে পেরেছি ভবনটি ৬ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলের ঘনিষ্ঠ ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান তা কিনেছে। অথচ এই সম্পত্তির দাম ৪৫ কোটি টাকার বেশি হবে। ফলে সরকার কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়া নামমাত্র মূল্যে এই সম্পত্তি কিনে নিলেও তারা আমাদের বাড়ি ছাড়ার কোনো নোটিশ দেয়নি। বরং তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ব্যবহার করে এ প্রতিষ্ঠানটি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

খন্দকার আবুল খায়ের জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে এখন প্রায় ২০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মরত। এছাড়াও ৫০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়মিত চেম্বার করে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু চলতি বছরের গত ১৮ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি পরিদর্শন দল সেখানে যায়। এরপর ১৮ মে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে চিঠি পাঠানো হয়। একই সঙ্গে কোনো প্রকার কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ও লাইসেন্স স্থগিত করার আদেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আপিল করলে তা অগ্রাহ্য করে ৭ জুন তাদের চিঠি দেয়।

পরে নিয়ম অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আপিল করলেও তারা রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে। পরে তারা এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন। রিটটি এখন শুনানির অপেক্ষায়। হাইকোর্ট খুললে সেটির শুনানি হবে বলেও জানান তিনি।

অভিযানের দিন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু আশফাক জানিয়েছিলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি ১৬ বছর ধরে ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছিল।

টিটি/এমএইচআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।