চিকিৎসা-উদ্ভাবনে ৬৩ বছর পূর্ণ করলো আইসিডিডিআর,বি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৫৬ এএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩

বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যক্ষেত্রে গবেষণা ও উদ্ভাবনের অগ্রগামী যাত্রায় ৬৩ বছর পূর্ণ করলো আইসিডিডিআর,বি। কলেরার প্রকোপ রোধে ১৯৬০ সালের ৫ ডিসেম্বর ‘কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি’ হিসেবে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ডায়রিয়া, পোলিও, ধনুষ্টঙ্কারসহ বিভিন্ন রোগ নির্মূলে চিকিৎসা ও উদ্ভাবনে আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, কলেরার প্রকোপ রোধে ১৯৬০ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন সাউথইস্ট এশিয়া ট্রিয়েটি অর্গানাইজেশন (সিয়াটো) এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) সহায়তায় কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি (সিআরএল) হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। পরে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির নাম হয় আইসিডিডিআর,বি।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য গবেষণায় আইসিডিডিআর,বির গুরুত্বপূর্ণ অবদান তুলে ধরেন। তিনি খাওয়ার স্যালাইন বা ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপির (ওআরএস) মতো যুগান্তকারী উদ্ভাবনে আইসিডিডিআর,বির ভূমিকার কথা বলেন।

ড. তাহমিদ বলেন, শিশুদের ডায়রিয়াজনিত রোগের মৃত্যুহার কমাতে আইসিডিডিআর,বি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং ধনুষ্টঙ্কার টিকার গবেষণাতেও আইসিডিডিআর,বির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।

jagonews24.com

এসময় তিনি মুখে খাওয়ার কলেরা ভ্যাকসিন উন্নয়ন, অপুষ্টির চিকিৎসার জন্য গাইডলাইন এবং বৈশ্বিক পোলিও নির্মূল প্রচেষ্টায় অবদান রাখার ক্ষেত্রে আইসিসিডিআর,বির নেতৃত্বশীল ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন।

সেমিনারে ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য প্রবণতা এবং সক্রিয় নিয়ামকসমূহ: সাম্প্রতিক প্রমাণ থেকে অন্তর্দৃষ্টি’ শীর্ষক মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআেইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেন সংঘাত দেশের দারিদ্র স্তরে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তবে এর আগে গত এক দশকে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে।

এসময় তিনি দারিদ্রের প্রধান চালকসমূহ তুলে ধরার পাশাপাশি এর থেকে উত্তরণে বেশ কিছু নীতিগত প্রস্তাব করেন। তিনি স্মার্ট সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, টেকসই প্রবৃদ্ধি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং ভূ-অর্থনৈতিক অবস্থার বিবেচনায় সেসব নীতিপ্রস্তাব বাস্তবায়নের সুপারিশ করেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলস। তিনি বলেন, আইসিডিডিআর,বি শুধুমাত্র গবেষণার ক্ষেত্রেই নয়, জনগোষ্ঠীর জীবনেও অবদান রাখছে। বিশেষ করে দরিদ্রদের জন্য, যাদের আর্থিক সামর্থ্য নেই স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো পাওয়ার। এটি একটি অবিশ্বাস্য অবদান।

ড. লিলি নিকোলস আরও বলেন, আইসিডিডিআর,বি ভবিষ্যতে আরও কী কী কাজ করবে তা দেখতেও আমি অত্যন্ত আগ্রহী। কানাডা অবশ্যই গর্বিত প্রথম থেকেই মূল দাতা হিসেবে আইসিডিডিআর,বির সঙ্গে থাকতে পেরে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

বিকেলে আইসিডিডিআর,বির কর্মীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রচারিত ভিডিও বার্তায় আইসিডিডিআর,বির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ার ন্যান্সি চেং বলেন, আমি মনে করি কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি চিত্তবিনোদনও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আইসিডিডিআর,বি এমন একটি জায়গা যেখানে প্রচুর সুযোগ রয়েছে। আমরা যে ব্যাপক পরিসরে কাজ করি তা থেকে অর্জনের অসাধারণ সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয় ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরম্পরা উদযাপনের অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে পিঠা উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বি কর্মীদের পাশাপাশি বিশিষ্ট ব্যক্তি, উন্নয়ন সহযোগী, গণমাধ্যমকর্মী এবং আইসিডিডিআর,বির শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে আইসিডিডিআর,বি আইন ২০২২ এর প্রথম বর্ষপূর্তিও উদযাপিত হয়। গত বছর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে আইসিডিডিআর,বি আইন-২০২২ পাস হয়। এই আইনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইসিডিডিআর,বির ভূমিকার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এএএম/কেএসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।