পরীক্ষকের ভুলে মেডিকেলে ভর্তির স্বপ্নভঙ্গ, সুবিচার চায় পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৫৭ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা শেষে হঠাৎ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হট্টগোল বাধে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হুমায়রা নামে এক শিক্ষার্থী ও তার পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগ নিয়ে দুইদিন ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছেন হুমায়রা। কোনো সুরাহা না পেয়ে ফলাফল প্রকাশের দিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসে হুমায়রা ও তার পরিবার।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেখানে কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহারের শিকার হন ওই শিক্ষার্থী ও তার পরিবার।

হুমায়রা জানান, ২০২৩-২০২৪ বর্ষের অনুষ্ঠিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ভেন্যু শেরে-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে (শেখ কামাল ভবন, অষ্টম তলা) রুম নং ৮২৩-এ পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। পরীক্ষার দিন যথাসময় হলে প্রবেশ করেন এবং যথারীতি দায়িত্বপ্রাপ্ত হল পর্যবেক্ষক প্রশ্নপত্র প্রদান করেন।

পরীক্ষার ৪০ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর তার ডান পাশের একটি মেয়ের গতিবিধি লক্ষ্য করে পর্যবেক্ষকের সন্দেহ হয়। তারপর তিনি মেয়েটিকে জেরা করেন, মেয়েটি অস্বীকার করলেও একপর্যায়ে সার্চ করে তার কানে ইলেকট্রনিক একটি ডিভাইস পাওয়া যায়। তারপর ওই পর্যবেক্ষক রাগান্বিত হয়ে তাকে এবং তার বাম পাশের মেয়েটিকেও কঠোরভাবে জেরা শুরু করেন। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে ওই মেয়েটিকে চেনেন না। এক পর্যায়ে ওই পর্যবেক্ষক রাগের বশবর্তী হয়ে কোনো প্রকার যাচাই না করেই তিনজনের ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলেন। অথচ প্রথম ৪০ মিনিটের মধ্যে ৭৫টি এমসিকিউ ভরাট করে ফেলেন তিনি। পরে নিরুপায় হয়ে বারবার তাকে অনুরোধ করতে থাকায় তিনি ছেঁড়া খাতা মিলিয়ে দেখতে রাজি হন। মিলিয়ে দেখেন খাতা এবং অপরাধী মেয়েটির খাতার সঙ্গে কোনো প্রকার মিল নেই। তারপর তিনি তার ভুল বুঝতে পেরে তাৎক্ষণিক নতুন একটি ওএমআর শিট এবং প্রশ্নের সেট এনে দেন। এরই মধ্যে পরীক্ষার সময় বাকি ছিল মাত্র পাঁচ মিনিট। এরপর ওই পর্যবেক্ষক অতিরিক্ত সময় প্রদান করেননি।

তাৎক্ষণিকভাবে শেখ কামাল ভবনের ডিন অফিস রুমে যান হুমায়রা ও তার পরিবার। সমস্যা খুলে বললে তারা একপর্যায়ে নানা অজুহাত দেখিয়ে চলে যায়।

এরপর ভার্সিটির প্রোভিসি অলোক এবং প্রক্টর সুমনকে বিষয়টি অবগত করা হয়। সবকিছু শুনে তারা অপারগতা প্রকাশ করেন এবং জানান তারা এই হলটি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজকে ভাড়া দিয়েছেন এবং এই ব্যপারে তাদের কিছু করার নেই। তারা সোহরাওয়ার্দীর প্রিন্সিপালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে সোহরাওয়ার্দীর প্রিন্সিপালের সঙ্গে ফোনে কথা বলা হয়। কিন্তু তার কাছে সন্তোষজনক কোনো সহযোগিতা পাননি বরং তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান এবং বলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে।

এই পরীক্ষার্থী আরও জানান, দুইদিন ধরে অধিদপ্তরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন তিনি ও তার পরিবার।

পরে ফল প্রকাশের দিন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন হুমায়রা। মন্ত্রী বের হওয়ার সময় পথরোধ করে জানান তার অভিযোগ। এসময় কর্মকর্তারা হুমায়রার পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তার পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে, এ ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

রোববার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক অফিস আদেশে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক কাজী আফজালুর রহমানকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এর সদস্য সচিব অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। কমিটির অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের থোরাসিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আলম ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামাল হোসেন।

এএএম/এসএনআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।