ডেঙ্গুতে গ্রামপুলিশের মৃত্যু

‘এক বেলা খেলে দুই বেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে’

লিপসন আহমেদ লিপসন আহমেদ , সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৮:২৪ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের এই বাড়িতে বাস করে গ্রামপুলিশ আম্বির খানের পরিবার/জাগো নিউজ

টিনের একটা মাত্র চালা ঘর। বাড়ির উঠানে লাউ-শিমের মাচা। বাড়ির চারপাশটা হাওরের বিরাণভূমি। এক বছর ধরে এই বাড়িতে বসবাস করছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের গ্রামপুলিশ আম্বির খানের পরিবার।

গত মার্চ মাসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আম্বির খান। তার মৃত্যুর পর অথৈ জলে পড়েছে পুরো পরিবার। তিন ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তার স্ত্রী রিকা বেগম।

পরিবার ও গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আম্বির খান ভাটিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে গ্রামপুলিশের চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত মার্চ মাসে হঠাৎ তার প্রচণ্ড জ্বর ওঠে। এরপর তাকে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের লোকজন তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক জানান, আম্বির খানের ডেঙ্গু হয়েছে। মাসখানেক চিকিৎসার পরও কোনো উন্নতি হয়নি আম্বির খানের। পরে চলতি বছরের ২ মে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়।

‘গ্রামপুলিশ আম্বির খান ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। তবে আমি অনুরোধ জানাবো দেশের সরকার ও বিত্তবান মানুষরা যেন তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়।’- ভাটিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ম. বদরুল ইসলাম

আম্বির খানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী-সন্তানের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে শোকে কাতর তারা।

ডেঙ্গুতে গ্রামপুলিশের মৃত্যু/‘এক বেলা খেলে দুই বেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে’

ভাটিপাড়া গ্রামে গিয়ে জানা যায়, হাওরের মধ্যে উঁচু করে মাটি ফেলে টিন দিয়ে নতুন ঘর তুলেছিলেন আম্বির খান। তবে নতুন ঘরে বেশি দিন থাকতে পারেননি তিনি।

আম্বির খানের স্ত্রী রিকা বেগম বলেন, তার দুই ছেলে লতিফ ও ফারুক সিলেটে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করছেন। কিন্তু এই টাকা দিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

ডেঙ্গুতে গ্রামপুলিশের মৃত্যু/‘এক বেলা খেলে দুই বেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে’

রিকা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার স্বামী যখন জীবিত ছিলেন তখন সংসারে কোনো কিছুর অভাব ছিল না। দুই ছেলেকে কখনও কষ্টের কাজ করতে দেননি। কিন্তু পেটের দায়ে তারা সিলেটে চাকরি করছে। তাদের খরচের টাকা রেখে যে টাকা আমাদের পাঠায় সে টাকা দিয়ে সংসার চলে না। এখন একবেলা খেলে দুই বেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে।’

‘পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যারা অসহায় মানুষকে সাহায্য করে। অনেক এনজিও আছে তাদের পাশে দাঁড়ায়। আবার দেশের সরকারও আছে। কিন্তু সরকারের কেউ খোঁজ রাখে না।’- গ্রামপুলিশ আম্বির খানের স্ত্রী

রিকা বেগম আরও বলেন, ‘আম্বির খানের ডেঙ্গুর চিকিৎসা করাতে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা ঋণের বোঝা টানতে হচ্ছে আমাদের। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যারা অসহায় মানুষকে সাহায্য করে। অনেক এনজিও আছে তাদের পাশে দাঁড়ায়। আবার দেশের সরকারও আছে। কেউ যদি আমাদের গরু-ছাগল কিনে দিতো তাহলে সেগুলো লালনপালন করে হয়তো আমরা কিছুটা স্বাবলম্বী হতে পারতাম। কিন্তু সরকারের কেউ খোঁজ রাখে না।’

ভাটিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য পিয়ারা বেগম বলেন, ‘গ্রামপুলিশ আম্বির খান মারা যাওয়ার পর তার পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। আমরাও তাদের পাশে দাঁড়াতে পারিনি। আমি অনুরোধ করবো তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করার জন্য।’

ডেঙ্গুতে গ্রামপুলিশের মৃত্যু/‘এক বেলা খেলে দুই বেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে’

ভাটিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ম. বদরুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামপুলিশ আম্বির খান ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। তবে আমি অনুরোধ জানাবো দেশের সরকার ও বিত্তবান মানুষরা যেন তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়।’

এলএএইচ/এসএনআর/এমএমএআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।