ব্যস্ত জীবনে হাঁসফাঁস করা মানুষজন ছুটির দিনে একটু স্বস্তি খোঁজে প্রকৃতির কাছে। কেউ ছুটে যায় পাহাড়ে, কেউবা সমুদ্রে, আবার কেউ কেউ মেঠোপথ বেয়ে চলে যায় কোনো গ্রামীণ এলাকায়।
Advertisement
প্রকৃতির মাঝে ঘুরে ফিরে লাভ করি প্রশান্তি, মনকে করি কিছুটা হালকা। তবে আমরা এমনই অকৃতজ্ঞ যে প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ উপভোগ করে ফেলে আসি যা, তা প্রকৃতির জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, বলছি পরিবেশের বিষ আবর্জনার কথা।
পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে এখন সবচেয়ে বড় সংকটের একটি হলো আবর্জনা। প্রায় প্রতিটি জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থানে চোখে পড়ে আবর্জনা। এগুলো হতে পারে খাবারের উচ্ছিষ্ট, বিভিন্ন খাবারের মোড়ক বা প্যাকেট, আইসক্রিমের কাঠি, কাপ-প্লেট, টিস্যু, এমনকি সিগারেটের প্যাকেটও।
চলুন জেনে নেই কীভাবে আমরা আবর্জনা কমাতে পারি এবং ভ্রমণ স্থান পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি?
Advertisement
নিজের সৃষ্ট আবর্জনা নিজের সঙ্গে বহনকোথাও ঘুরতে গেলে সঙ্গে রাখুন একটি ছোট কাপড়ের ব্যাগ বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য থলে। যেখানে খাবারের খোসা, মোড়ক বা ব্যবহৃত কাগজ ফেলে রাখা যাবে। পরে নির্ধারিত ডাস্টবিনে ফেলা যায়।
রি-ইউজেবল বা পুনঃব্যবহার জিনিসের ব্যবহারনিজের পানির বোতল, খাবারের পাত্র, কাপ ও চামচ সঙ্গে রাখুন। বারবার ডিসপোজেবল কিনে ফেলার বদলে আপনার পুনঃ ব্যবহার করা এসব জিনিসই প্রকৃতিতে বর্জ্য কমিয়ে দিবে।
প্যাকেটজাত খাবারের বদলে স্থানীয় খাবার কিনুনপ্যাকেটজাত খাবারের দিকে না ঝুকে, স্থানীয় দোকান বা হোটেল থেকে খাবার খেতে পারেন। এসব খাবার খেলে একদিকে যেমন আবর্জনা কম তৈরি হবে তেমনি অন্যদিকে সমৃদ্ধ হয় স্থানীয় অর্থনীতি।
শুকনা খাবার বাড়ি থেকে নিয়ে যানএছাড়া আরেকটি কাজ হলো বাড়ি থেকেই ফল, চিড়া, মুড়ি বা হালকা শুকনা খাবার নিয়ে গেলেন। এতে আলাদা করে আর মোড়কের প্রয়োজন পড়ে না। শুধু তাই না খাবারগুলো হয় প্রাকৃতিক, স্বাস্থ্যকর এবং পরিবেশবান্ধব।
Advertisement
আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুনপ্রতিটি পর্যটন এলাকায় সাধারণত কিছু নির্ধারিত জায়গায় ডাস্টবিন থাকে। ডাস্টিবিনে ময়লা ফেলার অভ্যাস গড়ুন। কাছে কোথাও ডাস্টবিন না থাকলে তা নিয়ে না ভেবে নিজ দায়িত্বে শহরে ফিরে আবর্জনা গুলো ডাম্পিং করুন।
গ্রুপে গেলে দায়িত্ব ভাগ করুনবন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে গেলে কেউ একজন বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব নিন। সবার জন্য একটা ব্যাগ রাখুন যেখানে ছোটখাটো ময়লা জমাতে পারেন। এতে আবর্জনার প্রতি আলাদা খেয়াল থাকে।
সচেতনতা ছড়িয়ে দিনশুধু নিজে দায়িত্ব পালন করলেই হবে না। আশেপাশের মানুষকেও বলুন, দেখান। বিশেষ করে শিশুদের শেখান-পরিচ্ছন্নতা মানে শুধু নিজের বাসা নয়, আমাদের পরিবেশও।
স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুনঅনেক জায়গায় স্থানীয়রা পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় এগিয়ে থাকেন। তাদের সঙ্গে কথা বলুন, প্রয়োজনে সহযোগিতা করুন। এতে তৈরি হবে পর্যটক ও স্থানীয়দের মাঝে এক ধরনের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ।
ভ্রমণ মানেই আনন্দ, আর সেই আনন্দ যেন প্রকৃতির চোখে কান্না না হয়ে দাঁড়ায় সেদিকটা খেয়াল রাখা আমাদেরই দায়িত্ব। মনে রাখবেন, একজন সচেতন পর্যটক মানেই একজন পরিবেশপ্রেমী নাগরিক। আমাদের আজকের ছোট ছোট সচেতনতা একদিন গড়ে তুলবে পরিচ্ছন্ন, সবুজ, প্রাণবন্ত এক বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন গরিবের কাশ্মীর নাকি উপকূলের সুইজারল্যান্ড পথের শেষে দাঁড়িয়ে পৃথিবী দেখতে চাইকেএসকে/এএসএম