হংকং

চীনের ‘রোষানলে’ গণতন্ত্রপন্থি নেতা, হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:২১ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনের অন্যতম নেতা জিমি লাই/ ছবি : এএফপি

হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও প্রভাবশালী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা জিমি লাইকে তিনটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছেন হাইকোর্ট। চীনের জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। চীনের রোষানলে পড়া জিমি লাইকে এসব মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে তিনজন বিচারকের একটি বেঞ্চ রায় ঘোষণা করে জানিয়েছেন, ৭৮ বছর বয়সি লাই বিদেশি শক্তির যোগসাজশে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলেছেন। নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলার অভিযোগে দুটি ধারায় এবং রাষ্ট্রদ্রোহমূলক প্রকাশনার জন্য একটি ধারায় দোষী প্রমাণিত হয়েছেন লাই।

রায়ে বিচারক এসথার তো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বারবার চীনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন জিমি লাই। ৮৫৫ পৃষ্ঠার রায়ে তাকে একটি অপরাধী চক্রের ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আদালতে বিচারক বলেন, লাই বহু বছর ধরেই চীনা রাষ্ট্র ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে আসছেন।

জিমি লাই প্রতিষ্ঠিত ‘অ্যাপল ডেইলি’ পত্রিকাটি ১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করে এবং হংকংয়ের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রপন্থি সংবাদপত্রে পরিণত হয়। মামলায় পত্রিকাটির ১৬১টি প্রতিবেদনকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

১৫৬ দিন ধরে চলা এই বিচারে লাই নিজে ৫২ দিন সাক্ষ্য দেন। তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানোর অভিযোগ সত্য নয়।

সাজা নির্ধারণের পূর্ব শুনানির জন্য আগামী ১২ জানুয়ারি জিমি লাইকে আবার আদালতে হাজির করা হবে। তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়।

তবে এসব অভিযোগে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন জিমি লাই। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে তিনি কারাবন্দি রয়েছেন। ওই সময় হংকংয়ে সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ চলছিল।

এই মামলাকে হংকংয়ের ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতির একটি বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে চীনের হাতে হস্তান্তরের পর এই নীতির আওতায় হংকংকে আলাদা প্রশাসনিক ও শাসনব্যবস্থার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। তবে অধিকারকর্মীদের অভিযোগ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ জোরদারের ফলে হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসন ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।

২০২০ সালে প্রণীত হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা আইনের আওতায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এই আইন ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’ ও ‘ক্ষমতা উৎখাত’-এর মতো অভিযোগে কঠোর শাস্তির বিধান রেখেছে শি জিন পিং প্রশাসন।

মানবাধিকার সংগঠন ও সংবাদমাধ্যম-স্বাধীনতা রক্ষাকারী সংগঠনগুলো এ রায়ের তীব্র সমালোচনা করেছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স একে ‘ন্যায়বিচারের চরম ব্যর্থতা’ বলে উল্লেখ করেছে। সংগঠনটির মহাপরিচালক থিবো ব্রুটাঁ বলেন, এই রায় হংকংয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ভয়াবহ অবনতির প্রমাণ।

কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) রায়টির নিন্দা করে একে ‘নিপীড়ন’ বলে অভিহিত করেছে।

সূত্র : আল-জাজিরা

কেএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।