সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা করলো কারা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:০৯ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের শহিদ শান্তিরক্ষীরা/ ছবি: সংগৃহীত

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন সদস্যের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সুদানের দক্ষিণ কোরদোফান রাজ্যের রাজধানী কাদুগলির আবেই অঞ্চলে শান্তিরক্ষী বাহিনীর ক্যাম্প লক্ষ্য করে তিনটি ড্রোন হামলা চালানো হয়। এসব ড্রোন হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী শহীদ হন এবং আরও আটজন গুরুতর আহত হন।

বাংলাদেশের শহীদ শান্তিরক্ষীরা হলেন, কর্পোরাল মো. মাসুদ রানা (নাটোর), সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম), সৈনিক শামীম রেজা (রাজবাড়ি), সৈনিক শান্ত মন্ডল (কুড়িগ্রাম), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) ও লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা)।

আহত শান্তিরক্ষীদের নাম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান, সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন, কর্পোরাল আফরোজা পারভিন ইতি, ল্যান্স কর্পোরাল মহিবুল ইসলাম, সৈনিক মো. মেজবাউল কবির, সৈনিক মোসা. উম্মে হানি আক্তার, সৈনিক চুমকি আক্তার, অর্ডন্যান্স ও সৈনিক মো. মানাজির আহসান, বীর (নোয়াখালী)।

হামলার নেপথ্যে কারা?

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে যুদ্ধ করছে সুদানের সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনী (আরএসএফ)। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের ওপর ড্রোন হামলার জন্য আধা-সামরিক বাহিনী (আরএসএফ)-এর ওপর দায় চাপিয়েছে প্রেসিডেন্ট বুরহানের নেতৃত্বে থাকা সুদানের সেনাবাহিনী। তবে আরএসএফের পক্ষ থেকে ড্রোন এ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

কুখ্যাত আরএসএফ যোদ্ধা কারা?

এই আধা-সামরিক বাহিনীটি গঠিত হয় ২০১৩ সালে। এদেরকে নিয়ে দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। এই বাহিনীর মূলে রয়েছে জানজাওয়িদ মিলিশিয়া গ্রুপ যারা দাফুরের বিদ্রোহীদের নিষ্ঠুরভাবে দমন করেছে। এই গ্রুপের নেতা ছিলেন জেনারেল হামদান দাগালো (হেমডিটি)।

আন্তর্জাতিক নিন্দা ও সমালোচনা সত্ত্বেও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির এই গ্রুপটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি আধা-সামরিক বাহিনী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। তখন নামকরণ করা হয় বর্ডার ইন্টেলিজেন্স ইউনিটস। পরে এই গ্রুপটির সদস্যরা সুদানের গোয়েন্দা বিভাগের অংশ হয়ে ওঠে। আরও কয়েক বছর পর ওমর আল-বশির আরএসএফ বাহিনীটি গঠন করেন।

এই বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে রয়েছে ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালে ১২০ জনেরও বেশি প্রতিবাদকারীকে হত্যা করা।

এছাড়া দারফুরে এল-ফাশের শহরে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা, কয়েকশ নারীকে ধর্ষণ এবং কোরদোফান অঞ্চলের বিভিন্ন হাসপাতাল-স্কুলে ড্রোন হামলা চালিয়ে বহু স্বাস্থ্যকর্মী ও শিশুকে হত্যা করেছে আরএসএফ সদস্যরা।

আরও পড়ুন>>
সুদানের স্কুলে আধা-সামরিক বাহিনীর ড্রোন হামলা, শিশুসহ নিহত ৫০
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটে সুদান
সুদানে আরএসএফ-এর বিরুদ্ধে ৩২ নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ

সুদানে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল

১৯৮৯ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সুদানের ক্ষমতায় আসা ওমর আল-বশিরকে পদ থেকে সরাতে ২০১৯ সালে সুদানে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। এর ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের পতন ঘটায়। এরপর দেশের ক্ষমতায় আসে সেনাবাহিনী। তবে সাধারণ মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। বিক্ষোভের মুখে সেনাবাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে সরকার প্রতিষ্ঠা হয় কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবরে আরেকটি অভ্যুত্থানে ওই সরকারও ক্ষমতাচ্যুত হয়। তখন থেকে সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল আল-বুরহান দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে।

যেখানে ড্রোন হামলায় শান্তিরক্ষীরা নিহত হন

সুদানের দক্ষিণ কোরদোফান রাজ্যের রাজধানী কাদুগলিতে ড্রোন হামলা চালানো হয়। কাদুগলির উত্তর দিকে দক্ষিণ সুদানের মধ্যবর্তী সীমান্ত এলাকা আবেই। আবেই এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের বিশেষ মিশন (ইউএন ইনট্রিম সিকিউরিটি ফোর্সেস ফর আবেই) নিযুক্ত করা হয়েছিল। করদোফানের বেশ কিছু অঞ্চল আরএসএফের দখলে থাকলেও আবেই এলাকার দখল নিতে বারবার হামলা চালিয়ে আসছিল দাগালোর এই বাহিনী। তেল, স্বর্ণ খনি থাকা এ অঞ্চলের দখল নিয়ে যুদ্ধরত রয়েছে উভয় গোষ্ঠী।

দেশের ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে ২০২৩ সালের এপ্রিলে সুদানে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। সেনাবাহিনী আর প্যারামিলিটারি গ্রুপ র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে সেসময় থেকে শুরু হয় সশস্ত্র সংঘাত। চলমান এই সংঘাতে সুদানজুড়ে মারা গেছে দেড় লাখের বেশি মানুষ। দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশে। প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

সূত্র : সুদান ট্রিবিউন/আল-জাজিরা/সিএনএন

কেএম 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।