মিয়ানমারে নির্বাচনের আগে শত শত মামলা, বিরোধীদের চাপে রাখার চেষ্টায় জান্তা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০০ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
মিয়ানমারে নির্বাচনের আগে শত শত মামলা/ ছবি: ইরাবতি

নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মিয়ানমারে নির্বাচনী আইন ভাঙার অভিযোগে দুই শতাধিক মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সামরিক সরকার। এর মাধ্যমে বিরোধী শক্তির ওপর জান্তার চাপ আরও জোরালো হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচন শুরু হচ্ছে আগামী ২৮ ডিসেম্বর। সমালোচকদের মতে, এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে যে সামরিক শাসন জারি হয়েছে, সেটিকে বৈধতার মুখোশ পরানোরই একটি প্রচেষ্টা মাত্র।

সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটিতে ব্যাপক গণবিরোধিতা শুরু হয়, যা সময়ের সঙ্গে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। এর ফলে বহু সংঘাতপূর্ণ এলাকায় ভোট আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন তিন ধাপে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের ভোট হবে ১১ জানুয়ারি এবং তৃতীয় ধাপ ২৫ জানুয়ারি।

আরও পড়ুন>>
চীনের সহায়তায় হারানো এলাকা পুনর্দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী

রোহিঙ্গাদের ওপর আরাকান আর্মির অত্যাচার বেড়েই চলেছে
অং সান সু চি ভালো আছেন: মিয়ানমার জান্তা

সামরিক শাসনের অধীনে প্রণীত নির্বাচনী আইনে ভোটের বিরোধিতা বা নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করার অভিযোগে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় দৈনিক মিয়ানমা আলিনের খবরে বলা হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল তুন তুন নাউং মঙ্গলবার এক বৈঠকে জানান, নির্বাচন প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার চেষ্টার অভিযোগে ১৪০টি মামলায় ২২৯ জনকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ২০১ জন পুরুষ ও ২৮ জন নারী। তবে তাদের পরিচয় বা গ্রেফতারের সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়নি।

জুলাইয়ে প্রণীত নতুন আইনে বলা হয়েছে, কেউ নির্বাচন প্রক্রিয়ার কোনো অংশে বাধা দিতে বক্তব্য দিলে, সংগঠিত করলে, উসকানি দিলে, প্রতিবাদ করলে বা লিফলেট বিতরণ করলে তাকে তিন থেকে ১০ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা দেওয়া হবে। অন্যান্য কিছু অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে যাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন পরিচিত আন্দোলনকর্মী তেইজার সান, ন্যান লিন ও হটেট মিয়াত অং। তারা ৩ ডিসেম্বর মান্দালয়ে এক বিক্ষোভে জনগণকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানান, পাশাপাশি সামরিক বাধ্যতামূলক নিয়োগ আইন বাতিল ও রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবি তোলেন।

সাধারণ ধর্মঘট সমন্বয় পরিষদ জানিয়েছে, সংগঠনের সদস্য ২৪ বছর বয়সী হটেট মিয়াত অংকে মান্দালয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং গ্রেফতারের সময় তাকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের দাবি, তার জীবন বর্তমানে গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবে এ তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বার্তা সংস্থা এপি।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে আরও বলা হয়, অভিযুক্তদের মধ্যে চলচ্চিত্র নির্মাতা, একজন অভিনেতা ও কৌতুকশিল্পী, শিশু, পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসের সদস্য এবং বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরাও রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রচারণার পোস্টার ছেঁড়া, নির্বাচনকর্মীদের হুমকি বা আটক, সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করার মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, কয়েকজনের সাজা হয়েছে সর্বোচ্চ ৪৯ বছর পর্যন্ত।

এদিকে সামরিক সরকারের মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুন রোববার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্ট কি না, তা গুরুত্বহীন। তার কথায়, ‘এই নির্বাচন মিয়ানমারের জন্য, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য নয়।’

নির্বাচনকে ‘অন্যায্য’ বলার অন্যতম কারণ হলো অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। দলটিকে ২০২৩ সালে বিলুপ্ত হতে বাধ্য করা হয়। ২০১৫ ও ২০২০ সালের নির্বাচনে এই দলই নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল।

অং সান সু চি বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় মোট ২৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। সম্প্রতি তার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও সামরিক কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার তা অস্বীকার করে জানিয়েছে, তিনি ভালো আছেন।

সূত্র: এপি
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।