গাজায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের ৭০০র বেশি স্বজনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৩ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
গাজায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের স্বজনদের নিশানা করছে ইসরায়েল/ ছবি: এপি, ইউএনবি

গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদের পরিকল্পিতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইউনিয়ন। সংগঠনটির তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের অন্তত ৭০৬ জন স্বজন নিহত হয়েছেন।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নের ফ্রিডমস কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে ইসরায়েল পদ্ধতিগতভাবে তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। প্রতিবেদনে এই হত্যাকাণ্ডগুলোকে যুদ্ধের অনিচ্ছাকৃত ক্ষতি নয়, বরং সচেতন ও পরিকল্পিত কৌশল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সহিংসতা এখন আরও বিপজ্জনক ও নির্মম রূপ নিয়েছে। সাংবাদিকদের পাশাপাশি তাদের স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা ও স্বজনদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, যেন সাংবাদিকতা নিজেই এক অস্তিত্ব সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আরও পড়ুন>>
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আল জাজিরার ৫ সাংবাদিক নিহত
সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ স্থান গাজা : জাতিসংঘ
গাজায় অনাহারে মৃত্যুমুখে সাংবাদিকেরা, ঝুঁকি নিয়েই চলছে কাজ

ফ্রিডমস কমিটির প্রধান মুহাম্মদ আল-লাহহাম বলেন, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত হামলার ধরন স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে গাজায় স্বাধীন সাংবাদিকতা দমন করাই ইসরায়েলের উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, ক্যামেরা ও শিশুর মধ্যে, কলম ও ঘরের মধ্যে কোনো পার্থক্য না করে ইসরায়েল সত্যের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ চালাচ্ছে।

আল-লাহহাম আরও বলেন, সাংবাদিকদের পরিবারের রক্ত ফিলিস্তিনি কণ্ঠ স্তব্ধ করার চেষ্টার অপরাধের জীবন্ত সাক্ষ্য হয়ে থাকবে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালে ৪৩৬ জন, ২০২৪ সালে ২০৩ জন এবং চলতি বছরে অন্তত ৬৭ জন সাংবাদিকের স্বজন নিহত হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে বাস্তুচ্যুত হয়ে তাঁবু বা অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নেওয়ার পরও এসব পরিবার হামলার শিকার হয়েছে।

খান ইউনুসের কাছে এক সাম্প্রতিক ঘটনায় সাংবাদিক হিবা আল-আবাদলা, তার মা এবং আল-আস্তাল পরিবারের প্রায় ১৫ জন সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রায় দুই বছর আগে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের বাড়ি ধ্বংস হয়েছিল।

কমিটির ভাষ্য অনুযায়ী, সাংবাদিকতার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কারণে শত শত শিশু, নারী ও বয়স্ক মানুষ নিহত হয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনের চরম লঙ্ঘন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি হামলায় সাংবাদিকদের বাড়ি, আশ্রয়স্থল এবং সাংবাদিক ও তাদের স্বজনদের অবস্থান জানা এলাকাগুলো বারবার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। কোনো কোনো ঘটনায় পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, আর জীবিত সাংবাদিকদের সেই ধ্বংসের সাক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে।

প্রতিবেদনে সাংবাদিকদের মানসিক বিপর্যয়ের কথাও তুলে ধরা হয়। সন্তান, জীবনসঙ্গী বা বাবা-মা হারানো সাংবাদিকরা গভীর মানসিক আঘাত, অপরাধবোধ ও পারিবারিক ভাঙনের মধ্যে পড়েছেন। অনেকেই এই সহিংসতার চাপে কাজ বন্ধ করতে বা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ মাসে গাজায় প্রায় ৩০০ সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। শিরিন ডট পিএস নামে একটি পর্যবেক্ষণ সাইটের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১২ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এই সাইটটির নামকরণ করা হয়েছে আল জাজিরার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহর নামে, যিনি ২০২২ সালে অধিকৃত পশ্চিম তীরে নিহত হন।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষাকারী আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো ইসরায়েলের এসব হামলার নিন্দা জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো ইসরায়েলি সেনাকে সাংবাদিক হত্যার দায়ে গ্রেফতার বা অভিযুক্ত করা হয়নি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ডিসেম্বর মাসে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স জানায়, ২০২৫ সালে বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন ইসরায়েলের হাতে।

সূত্র: আল-জাজিরা
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।