কাশ্মীরে হাসপাতালের রোগীরা এখনও পরিবার বিচ্ছিন্ন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:০২ এএম, ১৮ আগস্ট ২০১৯
ভারতীয় সেনাবাহিনী হাসপাতালে ঢুকতে দেয়ার আগে রোগীর প্রেসক্রিপশন পরীক্ষা করছে। ১৭ আগস্ট। ছবি : বিবিসি।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বেশ কিছু অঞ্চলে ল্যান্ডলাইন ফোন সার্ভিস আবার চালু করেছে সরকার। বিগত ১২ দিন বন্ধ থাকার পর পঞ্চাশ হাজার টেলিফোন সংযোগ গতকাল শনিবার চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জম্মু অঞ্চলে আগেই মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা হয়েছিল। আজ থেকে অনেক স্থানে ইন্টারনেটও চালু হয়েছে।

কিন্তু স্থানীয় মানুষ অভিযোগ করছে যোগাযোগের অভাব আর নিরাপত্তার কড়াকড়িতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছেন, এমন কি সন্তান জন্মানোর মতো খুশির খবরও তারা বাড়িতে পাঠাতে পারছেন না।

শ্রীনগরে বিবিসির সংবাদদাতা রিয়াজ মাসরুর কথা বলেছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কিছু মানুষের সঙ্গে। সেই নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে মানুষের হাসপাতালে যাওয়া আসাতে কড়াকড়ির কারণে কতটা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

সোপিয়ান জেলা থেকে শ্রীনগরের লাল ডেড হাসপাতালে সন্তান প্রসবের জন্য বোনকে নিয়ে আসা বিলাল আহমেদ বিবিসিকে বলছিলেন, তিনি তিনদিন ধরে হাসপাতালেই রয়েছেন। নিজের গাড়িতে করেই বোনকে নিয়ে এসেছিলেন।

বিলাল আহমেদ বলছিলেন, ‘অনেক জায়গায় নিরাপত্তারক্ষীদের নথিপত্র দেখাতে হয়েছে। কিন্তু এখন বাড়ি ফিরতে পারছি না। বোনের একটা মেয়ে হয়েছে। কিন্তু সেই খুশির খবরটাও বাড়িতে পাঠানোর কোনও উপায় নেই। ছোট শিশুটাকে পরিবারের কেউ দেখতে আসতেও পারেনি।

Kashmir 2বিবিসির সঙ্গে কথা বলছেন বিলাল আহমেদ

ওই হাসপাতালেই বোনকে ভর্তি করাতে নিয়ে এসেছিলেন সোপিয়ান জেলারই আরেক বাসিন্দা রশিদ হুসেইন। তার বোনকে এখন ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু কীভাবে বাড়ি ফেরত যাবেন, সেটা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে হুসেইনকে।

রশিদ হুসেইন বলেন, ‘বোনকে সম্ভবত আজকেই ছেড়ে দেবে হাসপাতাল থেকে। কিন্তু কীভাবে ফেরত যাব জানি না। কোনও অ্যাম্বুলেন্স নেই। কোনও গাড়িও ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। টিভিতে দেখানো হচ্ছে এখানে নাকি সবকিছু স্বাভাবিক। কিন্তু কোথায় কী! জীবন তো পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে রয়েছে।’

চাচিকে চিকিৎসা করাতে আটদিন আগে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন শাহিল আহমেদ। তিনি জানাচ্ছিলেন, চাচি এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, কিন্তু বাড়ির কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই। ফলে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

শাহিল আহমেদ বলেন, ‘চাচি কেমন আছেন তারা জানতে পারছে না। কেউ হাসপাতালে দেখতে আসতেও পারেনি। এখান থেকেও বাড়ি যাওয়া সম্ভব হয়নি। নিরাপত্তাবাহিনী তো দুজনের বেশি কাউকে একসঙ্গে যেতেই দিচ্ছে না। সব নথিপত্র, পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও ছাড়া হচ্ছে না।’

Kashmir 3শাহিল আহমেদের চাচি ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালে

তবে প্রশাসনের প্রধান সচিব রোহিত কনসাল জানিয়েছেন, শনিবার সকাল থেকে কাশ্মীর উপত্যকার মোট ৩৫টি থানা এলাকা থেকে চলাচলের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। তারপরও জনজীবন স্বাভাবিক কবে হবে, তা সাধারণ মানুষ জানেন না।

সূত্র : বিবিসি

এসএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।