টম্ব-সুইপিং ডে, কী করবে উহানবাসীরা যাদের প্রিয়জনদের সমাধি অজানা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৪৩ এএম, ০৪ এপ্রিল ২০২০

‘টম্ব সুইপিং ডে-অর্থাৎ সমাধি পরিষ্কার করার দিন।’ বিশ্বজুড়ে অনেক দেশই এই দিনে প্রিয়জনদের সমাধিতে গিয়ে তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন তাদের উত্তরসূরীরা। পরে সমাধিতে চিরনিদ্রায় শায়িতদের উদ্দেশে খাবার, ওয়াইন ও পেপার মানি রেখে আসেন তারা। এভাবে দিনটিতে গত হওয়া প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পান উত্তরসূরীরা। চীনারা তাদের ভাষায় এই দিনটিকে বলে ‘উইংমিং ফেস্টিভাল’।

আজ শনিবার বিশ্বের একাধিক দেশে পালিত হচ্ছে বিশেষ এই দিনটি। তবে দিনটি বিশেষ হলেও মনে মোটেও আনন্দ নেই চীনের উহানবাসীর।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্ত করা হয়। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় উহান। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে দেশটিতে এ পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৩২৬ জন মারা গেছে।

এদের মধ্যে অনেককেই সমাধি করার সুযোগ পাননি চীনারা। তবে এসব চীনাদের মধ্যে সবচেয়ে হতভাগা উহানবাসী।

তাদেরই একজন গাও ইনজেই। উহানের এই আইটি কর্মকর্তা ৭ ফেব্রুয়ারি দাদা গাও শিঝুকে হারান করোনায়। ৭৬ বছরের এই বৃদ্ধ বাড়িতেই মারা যান এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করার লোকজন এসে তার মরদহে নিয়ে যায়।

গাও বলেন, ‘আজকের এই দিনে আমরা আসলে জানেই না যে, তার মরদেহ কোথায় পোড়ানো হয়েছে এবং ছাই কোথায় সমাধিস্থ করা হয়েছে।’

টম্ব-সুইপিং ডে-কে কেন্দ্র করে দুই সপ্তাহ আগে করোনায় মৃতদের দেহাবশেষ (ছাই) নেয়ার সুযোগ পান আত্মীয়রা। চীন সরকার এ সুযোগ করে দেয়। তবে এজন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় উহানবাসীর।

চীন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুধু বেইজিং ও শেনজেনবাসীরা তাদের আত্মীয়দের সমাধিতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে এজন্য তাদের কঠোর শর্ত অনুসরণ করতে হবে।

তবে উহান মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মে মাস পর্যন্ত শুধু সমাধি নয়, কোনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না উহানবাসী।

চীন সরকারের দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৩২৬ জন। তবে স্থানীয় উহানবাসীদের ধারণা, এ সংখ্যা ৪২ হাজার। আরেকটি স্থানীয় সূত্রের তথ্য অনযায়ী, দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৪৬ হাজার।

লিউ জিয়াবোর ভাই লিউ চেং ফুসফুসে তীব্র সংক্রমণে মারা যান ১২ ফেব্রুয়ারি। তবে তার মৃত্যুকে করোনার তালিকাভুক্ত করেনি চীন সরকার।

শুধু লিউর ভাই চেং নয়, তার দাদা গাও মারা যান করানোভাইরাসে। তার নামও সরকারি হিসাবে রাখা হয়নি। লিউ জিয়াবোর আক্ষেপ, ‘করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে যেসব লোক মারা গেছে অথচ সরকারি হিসাবে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, সেসব নামহীন ব্যক্তিদের মধ্যে চিরদিন থেকে যাবে আমার ভাই ও দাদার নাম।’

তবে উহান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উহানবাসীরা সমাধিতে যেতে না পারলেও সরকারের তরফ থেকে তাদের প্রিয়জনদের সমাধি পরিষ্কার করে দেয়া হবে। এছাড়া অর্থের বিনিময়ে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রিয়জনদের সমাধি পরিষ্কারের লাইভ দেখাবে। তখন তারা অনলাইনের মাধ্যমে বিশেষ প্রার্থনায় যোগ দিতে পারবেন।

সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট

এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।