কোক-পেপসির ‘কোলা যুদ্ধ’ বাণিজ্যের আশীর্বাদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:০৮ পিএম, ০২ অক্টোবর ২০২০

১৯৮৯ সালের দিকে মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী বিলি জোয়েল গেয়েছিলেন ‘রক অ্যান্ড রোলার কোলা ওয়ারস, আই ক্যান্ট টেক ইট এনি মোর!’ অর্থাৎ ‘কোলা যুদ্ধ আমি আর নিতে পারছি না’। যুক্তরাষ্ট্রের দুই কোলা জায়ান্ট পেপসি ও কোকা-কোলার বাণিজ্যিক লড়াই প্রসঙ্গে গানের সুরে এসব কথা বলেছিলেন তিনি। জোয়েলই বলেছিলেন, ‘এই আগুন আমরা ছড়াইনি।’

লড়াইটা আন্ডারডগ হিসেবে শুরু করেছিল পেপসিকো। তবে প্রচারণার জন্য সেই যুগে সবচেয়ে বড় সঙ্গীত তারকা মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে পাঁচ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চোখ ছানবড়া করে দিয়েছিল তারা।

ধরে ধীরে এই যুদ্ধ রূপ নেয় সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে। এর অনেকটা কৃতিত্ব পেপসিকোর সাবেক বস ডোনাল্ড কেন্ডালের। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ৯৯ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন এই কিংবদন্তি। বিক্রয়প্রতিনিধি হিসেবে শুরু করলেও অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির বড় পড়ে আসীন হয়েছিলেন তিনি।

pepsi-1.jpg

কেন্ডাল যখন পেপসির বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের নির্বাহী হন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩৫ বছর। এর মাত্র সাত বছর পরেই বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পান তিনি। ১৯৮৬ সালে যখন সেই পদ থেকে অবসর নেন, ততদিনে পেপসির পণ্য বিক্রি ৪০ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে। তার এই অবদান গোটা কোলা শিল্পেরই চেহারা বদলে দিয়েছে।

ডোনাল্ড কেন্ডাল কৌশলগত পরিকল্পনা, নীতিবদ্ধ নেতৃত্ব এবং অনন্য বিপণনবুদ্ধি সম্পন্ন এক মানুষ ছিলেন। দায়িত্ব নেয়ার দুই বছরের মাথায় তিনি শীর্ষস্থানীয় স্ন্যাক্স প্রস্তুতকারক ফ্রিটো-লে কিনে নেন, যা পেপসিকোর ব্যবসায় বৈচিত্র্য এনেছিল। সেই ধারা আজও টিকে আছে। গত বছর তাদের আয় হয়েছে ৬৭ বিলিয়ন ডলার, যেখানে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কোকা-কোলার আয় ছিল মাত্র ৩৭ বিলিয়ন ডলার।

এছাড়া, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারস আন্দোলনের কয়েক দশক আগেই অ্যাফ্রো-আমেরিকানদের শীর্ষপদে নিয়োগ দিয়েছিল পেপসিকো। মার্কিন জায়ান্টদের মধ্যে তারাই প্রথম এমন সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এমনকি এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকারী বর্ণবাদীদের ছাটাই করতেও পিছপা হয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

pepsi-1.jpg

তবে কেন্ডালের সবচেয়ে বড় চমক ছিল কোকা-কোলার সঙ্গে চূড়ান্ত বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা। সেই সময় নন-অ্যালোহলিক বেভারেজের বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছিল কোকা-কোলা। তাদের সঙ্গে কয়েক দশক ধরেই লড়ছিল পেপসিকো। তবে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল একেবারেই নিম্নপর্যায়ে। ডোনাল্ড কেন্ডাল সেই ধারা বদলে ব্যয়বহুল বিজ্ঞাপনী লড়াই শুরু করেন।

১৯৭৫ সালে কোকা-কোলা বিজ্ঞাপনের পেছনে ২৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল, বিপরীতে পেপসিকোর ব্যয় ছিল ১৮ মিলিয়ন ডলার। ১৯৮৫ সালে এ ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৭২ মিলিয়ন ও ৫৭ মিলিয়ন ডলারে। অবশেষে ১৯৯৫ সালে কোকা-কোলার বিজ্ঞাপনী ব্যয়কে ছাড়িয়ে যায় পেপসিকো। ওই বছর কোকা-কোলার খরচ ছিল ৮২ মিলিয়ন ডলার, সেখানে পেপসি ব্যয় করেছিল প্রায় ১১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এটা দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছেই অনেক বড় জুয়া ছিল। তবে সেই খেলায় সফল দুই পক্ষই। প্রথমত, এটি কোলা পানীয়ের বাজার বেড়েছে ব্যাপকভাবে। ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বেভারেজ পণ্যের ১২ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল এ দুই প্রতিষ্ঠানের দখলে। কোলা যুদ্ধ শুরুর পর ১৯৮৫ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ২২ দশমিক ৪ শতাংশে। যদিও ওই সময় বাজারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দখল করে নেতৃত্ব ধরে রেখেছিল কোকা-কোলা। তবে ৯০-এর দশকে পেপসিকোর ভাগ বেড়ে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল।

pepsi-1.jpg

গত বছর শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই কার্বোনেটেড-ড্রিংকস বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭৭ বিলিয়ন ডলারের। আর বিশ্বব্যাপী এর পরিমাণ ৩১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। বলাবাহুল্য যে, এর বড় অংশই পেপসিকো ও কোকা-কোলার পণ্য।

আর দ্বিতীয় যে উপকার হয়েছে সেটি হচ্ছে, কোলা যুদ্ধ দু’টি প্রতিষ্ঠানকেই বিশ্বের অন্যতম সেরা বিপণনকারীতে পরিণত করেছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় সফট ড্রিংকসের কিছু বাজার ছেড়ে দিয়েছে পেপসিকো। তবে তাদের বিপণনের চমক এখনও সমুজ্জ্বল।

স্বাস্থ্য সচেতন ক্রেতাদের জন্য বিকল্প হিসেবে বোতলজাত পানি, কফি ও এনার্জি ড্রিংকস বাজারে ছেড়েছে পেপসিকো। গত ৪০ বছরে তারা শেয়ারহোল্ডারদের যে পরিমাণ মুনাফা দিয়েছে, তা কোকা-কোলার চেয়ে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ বেশি।

অনেক শিল্পের ক্ষেত্রে দ্বৈতপ্রাধান্য নতুনত্বের পথে বাধা এবং ভোক্তাদের জন্য ক্ষতিকর। তবে কোকা-কোলা ও পেপসিকোর ক্ষেত্রে সেটি হয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো। এ কারণে ডোনাল্ড কেন্ডাল নিজেই বলেছিলেন, ‘কোকা-কোলা না থাকলে আমাদেরই একটাকে আবিষ্কার করতে হতো। আর তাদের আবিষ্কার করতে হতো পেপসিকে।’

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

কেএএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।