এবার ভারতে টিকার জরুরি অনুমোদন চাচ্ছে ফাইজার
অডিও শুনুন
এবার ভারতে নিজেদের তৈরি করোনা টিকার জরুরি অনুমোদন চেয়েছে মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ফাইজার এবং তাদের জার্মান অংশীদার বায়োএনটেক। একটি সূত্র জানিয়েছে, জরুরি প্রয়োজনে টিকা ব্যবহারের জন্য ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার (ডিজিজিআই) অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ফাইজারের টিকা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে বাহরাইন। এর আগে প্রথম দেশ হিসেবে ফাইজারের করোনা টিকা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অনুমোদন চেয়ে এ ধরনের আবেদন এবারই প্রথম।
দেশটিতে এর মধ্যেই ৯৬ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর ভারতের কাছে পাঠানো আবেদনে ফাইজারের পক্ষ থেকে দেশটিতে করোনা টিকা বিক্রি এবং সরবরাহের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।
এর আগে বুধবার মার্কিন সংস্থার তৈরি এই টিকার জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র দিয়েছিল যুক্তরাজ্য সরকার। একদিন পরে বৃহস্পতিবার দেশে এসে পৌঁছায় ফাইজারের টিকা। এ বিষয়ে ফাইজার কিংবা যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, আগামী সপ্তাহের মধ্যে করোনাভাইরাসের ৮ লাখ ডোজ টিকা হাতে এসে পৌঁছাবে এবং হাতে আসা মাত্রই এর প্রয়োগ শুরু হবে।
শুক্রবার সকালে ইংল্যান্ডের ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার জনাথন ভ্যানটম বলেন, ‘ব্রিটেনে শিগগিরই চলে আসবে ফাইজারের টিকা। শিগগিরই মানে কয়েক দিন না, কয়েক ঘণ্টা।’ এরপর বেলা গড়াতেই খবর আসে, টিকা এসে পৌঁছেছে। পুরো বিষয়টিই গোপন রাখছে সরকার।
ভারতে যে কোনো টিকার অনুমোদনের জন্য অবশ্যই দেশটিতে সেই টিকার স্বচ্ছ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন করতে হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বেশ কিছু সূত্র বলছে ফাইজার বা এর অংশীদারি কোম্পানিগুলো এ ধরনের ট্রায়ালের কথা বলেনি।
পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ব্রিটেনই প্রথম কোনো দেশ যারা জরুরি ভিত্তিতে টিকা প্রয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর এ বিষয়ে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। গুঞ্জন রয়েছে জানুয়ারি মাসে করোনার টিকা দেয়া শুরু হতে পারে কানাডাতেও। গত সপ্তাহেই কানাডার টিকা সরবরাহকারী দফতরের দায়িত্ব পেয়েছেন ড্যানি ফর্টিন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জানুয়ারি মাসে টিকা চলে এলেই শুরু হয়ে যাবে টিকা দেয়ার প্রক্রিয়া।’
এখন পর্যন্ত ফাইজারের টিকা ৯০ শতাংশ কার্যকরী বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এদিকে, শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান, ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে ভারতের তৈরি তিনটি টিকা। তবে ফাইজারের টিকার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাপমাত্রা। এই টিকা পরিবহন ও সংরক্ষণ করতে হবে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।
এদিকে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিট্রিশ ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনা ভ্যাকসিন আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভারতের মানুষকে দেয়া শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভ্যাকসিন উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদর পুনাওয়ালা।
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন ফেব্রুয়ারি নাগাদ ভারতের স্বাস্থ্যকর্মী ও বয়স্কদের কাছে পৌঁছাবে। আর এপ্রিলের মধ্যে পাবে সাধারণ জনগণ। সহজলভ্য এই টিকার দুই ডোজের দাম পড়বে সর্বোচ্চ ১ হাজার রুপি।
সব কিছু নির্ভর করছে চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়ালের সাফল্য ও টিকা তৈরিতে সরকারি অনুমোদনের ওপর। তবে বৃহস্পতিবার ‘ল্যানসেটে’ অক্সফোর্ডের টিকার চূড়ান্ত ট্রায়াল নিয়ে দ্বিতীয় ধাপের ফলে দেখা গেছে, বয়োজ্যেষ্ঠদের ক্ষেত্রে এই টিকার রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা ভালো।
টিটিএন/এমএস