কীভাবে বিশ্বের সর্বত্র পৌঁছানো যাবে করোনা ভ্যাকসিন?
![কীভাবে বিশ্বের সর্বত্র পৌঁছানো যাবে করোনা ভ্যাকসিন?](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/coronavirus-20210403213004.jpg)
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোর ৭:৩৯ মিনিটে ঘানার রাজধানী আকরায় ইকে ৭৮৭ ফ্লাইটটি স্পর্শ করে। এতে ছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ছয় লাখ ডোজ। এগুলো ভারতের পুনের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে ঘানায় পৌঁছায়। কোভ্যাক্স প্রকল্পের আওয়তায় এটি প্রথম কোনো ভ্যাকসিনের সরবরাহ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন সরবরাহের উদ্যোগ এই কোভ্যাক্স।
গত বছর কোভ্যাক্স প্রকল্প তৈরি হয়। যেসব দেশ ভ্যাকসিন পেতে সমস্যার সম্মুখীন হবে সেসব দেশে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য এই উদ্যোগ। এতে প্রায় ১৯২টি দেশ যোগ দিয়েছে। এদের প্রত্যেকের ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। তবে গত ২৪ মার্চ ভারত তাদের ভ্যাকসিন রফতানী সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। কোভ্যাক্সের ৮৬ শতাংশ ভ্যাকসিন আসবে ভারত থেকে। তাই এই সিদ্ধান্তে প্রকল্পটি কিছুটা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
সারা বিশ্বের সকল জায়গায় একই সময়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধের উদ্দেশ্যে কোভ্যাক্স প্রকল্প তৈরি হয়। কোনো অঞ্চলে ভ্যাকসিন না দেয়া হলে সেখানে ভাইরাস বেশি ছড়াতে পারে, ফলে নতুন ধরণও সৃষ্টি হতে পারে। কোভ্যাক্সের প্রতিষ্ঠাতারা আগেভাগেই পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন। ২০০৯ সালে যখন সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ে তখন বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন পৌঁছানো বেশ কঠিন হয়েছিল। সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেজন্য সংকল্পবদ্ধ ছিলেন কোভ্যাক্সের প্রতিষ্ঠাতারা। তারা বেশ দ্রুততার সঙ্গে অনেক দেশকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছেন। ২০২০ এর শেষের দিকেই দেখা গেল, অসাধারণ বৈজ্ঞানিক প্রয়াসে স্বল্পতম সময়ে রেকর্ড সংখ্যক ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে গেছে। এর ফলে খুব দ্রুতই বিশের পাঁচ ভাগের এক ভাগ জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। তবে এখন পর্যন্ত অনেকগুলো ভ্যাকসিন চলে এলেও, কীভাবে এগুলো বিশ্বব্যাপী সরবরাহ করা যাবে তা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কোভ্যাক্স।
মহামারী প্রস্তুতি উদ্যোগ জোট নামে নরওয়ের একটি দাতব্য সংস্থার প্রধান রিচার্ড হ্যাচেট। তিনি ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় হোয়াইট হাউসে কর্মরত ছিলেন। সোয়াইন ফ্লু’র সংক্রমণ করোনাভাইরাসের চেয়ে অনেক কম গুরুতর ছিল। কিন্তু তখনো ভ্যাকসিন রফতানি অনেক কষ্টসাধ্য ছিল বলে জানান রিচার্ড। ধনী দেশগুলো আগেভাগে ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়ে রাখে, আর দরিদ্র দেশগুলো অনুদানের আশায় বসে থাকে যা আসতেও অনেক দেরি হয়। রিচার্ড চেয়েছেন করোনাভাইরাস মহামারির সময় যেন এমনটা না হয়।
এজন্য বিশ্বের একটি ভ্যাকসিন ক্রয়ের ক্লাব দরকার ছিল। এটিই হল কোভ্যাক্স। এটি অন্তত ২০০ কোটি ভ্যাকসিনের সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। এর মাধ্যমে ১৯২টি দেশের স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রবীণ ও আশঙ্কাজনক জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিশ্চিত হবে। কোভ্যাক্সের আওয়তায় ধনী দেশগুলো দরিদ্র দেশের ভ্যাকসিনের জন্যও অর্থ দিচ্ছে। ভারতের ভ্যাকসিন রফতানি স্থগিতের আগে ৩ কোটি ২০ লাখ ভ্যাকসিন ডোজ কোভ্যাক্সের আওতায় সরবারহ করা হয়েছে যার অধিকাংশই স্বল্প আয়ের দেশ।
গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত অক্সফামের তথ্য অনুযায়ী, ধনী দেশগুলোতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ বসবাস করে কিন্তু তারাই করোনা ভ্যাকসিনের ৫৩ শতাংশ কিনে রেখেছে। এতে আরও বলা হয়, বিশের দরিদ্র দেশগুলোর প্রতি দশজনের নয়জন মানুষ ২০২১ সালে ভ্যাকসিন থেকে বঞ্চিত হবে। গত জানুয়ারিতে ইউএনএইডসের প্রধান উইনি বিয়ানইমা বলেন, বিশ্ব ‘ভ্যাকসিন বর্ণবাদ’ প্রত্যক্ষ করছে।
কোভ্যাক্সের অন্যতম একটা সমস্যা হল, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনটি প্রত্যাশার চেয়ে দেরিতে এসেছে। ১৫ ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যাকসিনের জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। এর আট দিন পরেই পুনে থেকে ভ্যাকসিন ঘানা ও আইভরি কোস্টে সরবরাহ শুরু হয়।
কোভ্যাক্সের সফলতা বিচার করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে কারণ গোলপোস্ট পরিবর্তন হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ভ্যাকসিন এখন উৎপাদিত হচ্ছে। এটি ভালো দিক, কিন্তু একই সাথে অনেক দেশ তাদের আশঙ্কায় থাকা লোকজনের পাশাপাশি অধিকাংশ জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে চাচ্ছে। এর ফলে অনিশ্চয়তাও কিছুটা বাড়ছে। তবে অতি কার্যকরী ভ্যাকসিনের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে।
সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
এমকে/জিকেএস