বিয়েতে পরতে পারেননি, তাই ভ্যাকসিন নেয়ার দিন পরলেন বিয়ের পোশাক
যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা সারাহ স্টাডলি ও ব্রায়ান হর্লর ২০১৯ সালের নভেম্বরে বাগদান সম্পন্ন করেন। এই দম্পতি পরিকল্পনা করেছিলেন, এর পরের বছর তারা ১০০ জন অতিথিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে স্যান ডিয়েগোতে একটি আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে করবেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাদ দিতে হয়।
স্টাডলি বলেন, ‘এটা পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যায় যে আমাদের আগানো একটা বাজে ব্যাপার হবে।’
তবে দম্পতিটি নভেম্বরে অনাড়ম্বরভাবে বিয়ের আয়োজন করে। স্যান ডিয়েগো কাউন্টির ক্লার্ক অফিসের বাইরে তারা বিয়ে করেন। সেখানে বিয়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন তারা। এরপর এক ছোট্ট ডিনারের আয়োজন করা হয় যেখানে অল্প কিছু ঘনিষ্ঠ স্বজন উপস্থিত ছিলেন ও কস্টকো থেকে একটি কেক আনানো হয়।
স্টাডলি বলেন, ‘এটি এমন কিছু না যা আমি পছন্দ করেছি। কিন্তু সেখানে অবশ্যই সুন্দর কিছু ব্যাপারও ছিল।’
তবে এরপরও এই দম্পতি পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে বড় আকারের একটি রিসিপশন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চেয়েছিলেন। জুনে এই অনুষ্ঠান করবেন বলে তারা পরিকল্পনা করেন। এজন্য পোলকা ডটের নকশার একটি সুন্দর গাউনও কিনে ফেলেন স্টাডলি।
এ বছরের জানুয়ারিতে যখন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি শুরু হয়, তখন রিসিপশন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও বাতিল করেন তারা।
স্টাডলি বলেন, ‘এটা মনে হচ্ছিল যে এমন কোনো রিসিপশন করা সম্ভব না, যেটা একই সঙ্গে নিরাপদ ও আনন্দের হবে। তাই আমরা এটা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিই।’
এর মানে হলো, রিসিপশনের পোশাকটি ক্লজেটেই ঝুলতে থাকবে অথবা অন্তত কোনো ভালো অনুষ্ঠান আসার আগ পর্যন্ত এটা আর বের করা হবে না।
কিন্তু স্টাডলির কাছে ভ্যাকসিন নেয়ার দিনটি একটি বিশেষ দিন বলে মনে হলো। তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন টুইটারের একটি পোস্ট দেখে। কেউ একজন ভ্যাকসিন নেয়া উপলক্ষে চুমকি বসানো দীর্ঘ গাউন পরা ছবি পোস্ট দিয়ে টুইট করেছিলেন, ‘এটি এ বছরে আমার সেরা ঘটনা।’
‘এটি একটি দারুণ আইডিয়া’, বলেন স্টাডলি। তিনি বলেন, ‘এটি আমার মধ্যেও সঞ্চারিত হলো কারণ সবকিছু যখন অন্ধকারের ভেতর আছে তখন ভ্যাকসিন নেয়া একটি উজ্জ্বল মুহূর্তের ঘটনা।’
স্টাডলি বলেন, ‘এটি সুস্থতা নয়, এটি মহামারির অবসান নয়, কিন্তু এটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ। ব্যক্তিগতভাবে, আমার কাছে ভ্যাকসিন নেয়ার মানে হলো, আমার ৮১ বছর বয়সী বাবাকে কোনো শঙ্কা ছাড়াই জড়িয়ে ধরতে পারা এবং শঙ্কামুক্ত ভাবে কেনাকাটায় যাওয়া যে আমি কোনো কর্মীদের সংক্রমিত করছি না।’
তাই এক রোববারে, স্টাডলি চুল পেছনে বাঁধলেন এবং কানে মুক্তার দুল পরলেন। তিনি চোখে আই লাইনারও দিলেন। তিনি বলেন, তার মনে পড়ছিল মহামারির মধ্যে কীভাবে মাসের পর মাস তিনি কোনো মেকআপ ব্যবহার করেননি। এরপর তিনি গাউনটিও পরে ফেললেন।
ভ্যাকসিন নিতে যাওয়ার আগে তিনি এই পোশাকে স্বামীর সামনে হাজির হলেন। তার স্বামী হর্লর বলেন, ‘আমি অবশ্যই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।’ তিনি তখন পর্যন্ত ওই পোশাকে স্ত্রীকে একবারও দেখেননি। হর্লর বলেন, ‘এই তো সে, একেবারে পুতুলের মতো।’
হর্লর ভাবেননি যে তার স্ত্রী ভ্যাকসিন নিতে এই পোশাক পরেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিয়ে একটি অনুষ্ঠান আর ভ্যাকসিন নেয়া আরেকটি অনুষ্ঠান। সাধারণত, এই দুটি ব্যাপার একসঙ্গে যায়না, কিন্তু, কেন নয়?’
স্টাডলি যখন ম্যারিল্যান্ডের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কেন্দ্রে পৌঁছে গাড়ি পার্ক করছিলেন তখন একজন তাকে জিজ্ঞেস করেন তিনি কোথায় যাচ্ছেন। স্টাডলি উত্তর দেন, ‘এখানেই আমি যাচ্ছি।’
এরপর স্টাডলি বাল্টিমোরের এমঅ্যান্ডটি ব্যাংক ফুটবল স্টেডিয়ামে বিয়ের পোশাক পরে প্রবেশ করলেন। এই স্টেডিয়ামটি করোনাভাইরাস প্রয়োগের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
সেখানকার লোকজন, বিশেষ করে কর্মীরা স্টাডলির পোশাক দেখে অবাক হয়ে যান। ভ্যাকসিন কেন্দ্রের নার্স জুলি লেফকোউইটজ স্টাডলিকে ভ্যাকসিন দিতে কাছে ডাকার জন্য হাত নাড়েন।
তিনি স্টাডলিকে বলেন, ‘আচ্ছা, প্লিজ তোমার গল্পটা আমাকে বলো।’
লেফকোউইটজ বলেন, ‘সে (স্টাডলি) দাঁড়িয়ে ছিল। আপনি জাঁকজমকপূর্ণ সাদা পোশাকে খুব বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে দেখবেন না। আমি ওর গল্পটি জানতে চাচ্ছিলাম এবং এর অংশ হতে চেয়েছিলাম।’
লেফকোউইটজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার আগে স্টাডলি তাকে ব্যাখ্যা করেন কেন তিনি এই পোশাকে এসেছেন। স্টাডলি বলেন, ‘তার (লেফকোউইটজ) মুখ ঝলমল করে উঠল। সে খুব খুশি ও উচ্ছসিত হয়েছে।’
ওই ভ্যাকসিন কেন্দ্রের অপারেশন সেকশনের প্রধান রিচি স্টিভার বলেন, তিনি ও আরও অনেকে স্টাডলিকে দেখে অভিভূত হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত খেলার পোশাকে বা ক্যাজুয়াল পোশাকে মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে আসতে দেখি, বিয়ের পোশাকে অবশ্যই নয়।’
স্টাডলি বলেন, ‘এই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারটি সত্যিই সুন্দর।’ তিনি বলেন, তিনি অন্যদেরও ভ্যাকসিন নেয়ার সময় সুন্দর পোশাক পরে আসতে উৎসাহিত করবেন।
তিনি বলেন, ‘এটা উদযাপন করুন। এটা জমকালো হতে হবে এমন না। এই মুহূর্তটি উপভোগ করুন।’
স্টাডলি আরও বলেন, ‘ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার জন্য কী পোশাক পরব তা নিয়ে আমি এখনই ভাবা শুরু করে দিয়েছি।’
সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট
এমকে/এমকেএইচ