টিভি সাংবাদিকতায় বইটি শর্ট কোর্সের কাজ করবে


প্রকাশিত: ০৯:৫৪ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এবারের বইমেলায় গণমাধ্যম কর্মী মাইদুর রহমান রুবেলের সাড়া জাগানো বই ‘টেলিভিশন সংবাদ ও সাংবাদিকতা’ মেলা শেষেও  প্রতিভা প্রকাশনীতে পাওয়া যাবে। গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের কথা বিবেচনায় রেখে বইটি রচনা করেছেন তিনি। সম্প্রতি বইটি সম্পর্কে জাগো নিউজের সঙ্গে  কথা হয় মাইদুর রহমান রুবেলের ।

জাগো নিউজ : প্রায় প্রত্যক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা পড়ানো হয়, পাশাপাশি তথ্য মন্ত্রণালয় থেকেও কোর্স করানো হয় , সেক্ষেত্রে টেলিভিশন রিপোর্টিং নিয়ে বইটি কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

মাইদুর রহমান রুবেল : প্রায় সবক’টা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগটি চালু আছে দীর্ঘ দিন ধরে। বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও প্রতিযোগিতা করে চালু করা হচ্ছে সাংবাদিকতা বিষয়টি। এর বড় কারণ টেলিভিশন সাংবাদিকতার প্রতি মানুষের অতি আগ্রহ। দিনে দিনে বাংলাদেশে টেলিভিশনের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে কর্মসংস্থান। সেই চাহিদা পূরণ করতেই এই বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শুধু নয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ পিআইবিও সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা কোর্স করানো হচ্ছে। তাদের চেয়েও সাশ্রয়ী প্যাকেজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সাংবাদিকতার কোর্স করায়। সেখান থেকেও সাংবাদিক তৈরি হচ্ছে। প্রবল ইচ্ছা শক্তিই পারে মানুষকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে।

“টেলিভিশন সংবাদ ও সাংবাদিকতা” বইটি ছোট এবং সহজ করে লেখা হয়েছে যাতে একটা মানুষ সহজে এই বিষয়টা রপ্ত করতে পারে। অনেকটা সর্ট কোর্সের মতো। বইটা এক, দুই কিংবা তিনবার পড়লে যে কেউ বুঝতে পারবে কিভাবে করতে হবে টেলিভিশন সাংবাদিকতা। গভীর মনোযোগে একবারেই রপ্ত করতে পারবে বিষয়াবলী।

জাগো নিউজ : আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের পরিস্থিতি কি?

মাইদুর রহমান রুবেল : জাতিগতভাবে আমরা খানিক উৎশৃঙ্খল, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের সাথে বাংলাদেশের অনেক ফারাক রয়েছে। দিন যত গড়াচ্ছে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করছে। আমাদের মধ্যে ধৈয্যর পরিমাণ অনেক কম। বালির বাধের মতো আমাদের ধৈয্য, যে কোন সময় ভেঙে যায়। অল্পতেই আমরা অসহিষ্ণু হয়ে পড়ি। দু’একটা উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন। কোন সভ্য দেশে দেখেছেন সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান বাদ দেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির গায়ের উপর উঠে খবর সংগ্রহ করে গণমাধ্যম কর্মী। বাংলাদেশে ভুরিভুরি উদাহরণ আছে।

গেল ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে দেখলাম সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সংবিধান প্রণেতা এমনকি রানিং মন্ত্রীকেও রীতিমত অপদস্ত হতে হয়েছে নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মী এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ক্যামেরার কাছে। যা সত্যি দুঃখজনক। তাছাড়া কোন উদ্ধার কিংবা অগ্নিকাণ্ড অথবা বড় কোন দূর্ঘটনা হলে গণমাধ্যমকর্মীদের কারণে প্রত্যাশিত কাজ করতে বেশ বিড়ম্বনা পোহাতে হয় সংশ্লিষ্টদের। পাশের দেশ ভারতেও গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিবেদন শেষে সমাধানের জন্য মন্তব্য প্রকাশ করতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও এই সুবিধা আছে কিন্তু বাংলাদেশে এই সুবিধা নেই বললেই চলে। উল্টো আছে এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না। স্টেশন বন্ধ হয়ে যাবে। চাকরি যাবে। উদ্ভব সব খোড়া যুক্তি। এসব থেকে বের হতে না পারলে গণমাধ্যম গুমানুষের হয়ে কথা বলতে পারবে না।

Midur

জাগো নিউজ : টেলিভিশন সাংবাদিকতার উপভোগ্য কি?

মাইদুর রহমান রুবেল : সাংবাদিকতা পুরোটাই উপভোগ করার বিষয়। সে হোক টেলিভিশন কিংবা কাগজে। এই মাধ্যমে দর্শক এবং গণমাধ্যমকর্মী উভয়ই উপভোগ করার সুযোগ হয়েছে। রিপোর্টারের মনের মাধুরি মিশিয়ে নান্দনিক সংবাদ উপস্থাপন অবশ্যই উপভোগের বিষয়। সংবাদ দেখে মানুষ পুলকিত হয়। আবেগী হয়, কষ্টে মুছড়েও যায়। খবরের তারতম্যের কারণেই তা হয়। খবর দেখে উত্তেজনা হয় মানুষের মাঝে। আর এই মাধ্যমের সংবাদ কর্মীর তারকা খ্যাতির সম্ভাবনাও বেশি।

জাগো নিউজ : টেলিভিশন রিপোর্টারের গুণাবলী কেমন হওয়া উচিত?

মাইদুর রহমান রুবেল : শুধু টেলিভিশন নয় প্রত্যাক গণমাধ্যমকর্মীর গুনাবলী অনুকরণীয় হওয়া উচিত। যাতে অন্যরা শিক্ষা নিতে পারে। সাংবাদিকের কাছ থেকে যাতে কেউ বিমুখ হয়ে ফিরে না যায়। যদিও সাংবাদিকের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে তারপরও সাধ্যের মধ্যে থেকে যতটুকু সম্ভব ভুক্তভোগিকে সহযোগিতা করা উচিত। সাংবাদিকের আচরণে যাতে কেউ কষ্ট না পায় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

টেলিভিশনের মাইক্রোফোন/বুমের ক্ষমতা খুব প্রয়োজন ছাড়া দেখানো একদমই ঠিক হবে না। এটা অন্যায়। জেনে শুনে অন্যায় অপরাধে সহযোগিতা করা ঠিক নয়। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সাংবাদিকের দায়ও বেশি। প্রত্যক সংবাদ পরিবেশনের আগে ক্রস চেক করে নিতে হয়। সংবাদ পরিবেশন করতে গিয়ে যাতে নিরপরাধ কেউ যাতে শিকার না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে নরম গরমও হওয়া লাগবে অন্যথায় অন্যায় আর অবদায় কাধে চেপে বসবে।

জাগো নিউজ : টেলিভিশন রিপোর্টিং এ সাধারণ মানুষ আগ্রহী হয় কেন ?

মাইদুর রহমান রুবেল : স্যালুলয়েডে কাজ করার ইচ্ছে অনেকেরই আছে। কেউ প্রকাশ করে কেউ করে না। কেউ সুযোগ পায় কেউ পায় না। মূলত টেলিভিশনে নিজেকে উপস্থাপনের সুযোগ থাকে। খবরের কাগজে সেই সুযোগ থাকে না। তাই টেলিভিশন রিপোটিং এ মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। নাটক সিনেমার মতোই টেলিভিশন সংবাদিকরা নানান ভঙ্গিতে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে।

একজন ভালো সংবাদকর্মী ভাল উপস্থাপন করতে পারে। সম্প্রতি রিপোর্টারগণ রিপোর্টিং এর পাশাপাশি সংবাদ উপস্থাপকের দায়িত্ব পালন করে। এতে করে রিপোর্টারের পরিচিতি যেমন তরতর করে বাড়ছে, বাড়ছে খ্যাতিও। এসব কারণেই মানুষের আগ্রহ টেলিভিশন সাংবাদিকতায়।  

জাগো নিউজ : টেলিভিশন সাংবাদিকতা বইটি কাদের জন্য রচিত ?

মাইদুর রহমান রুবেল : সুযোগের অভাবে যারা কোনমতেই অ্যাকাডেমিক্যাল গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু মনে প্রবল ইচ্ছে টেলিভিশনে সাংবাদিকতা করার। তাদের জন্যই লেখা “টেলিভিশন সংবাদ ও সাংবাদিকতা”।

শুধু তাদের জন্য বললেও পুরোপুরি বলা হবে না, যারা সাংবাদিকতা করছেন বিভিন্ন মাধ্যমে কিন্তু টেলিভিশনের বাইরে। যেমন খবরের কাগজ, অনলাইন পোর্টাল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা রেডিওতে। তাদের সাংবাদিকতা করার অভিজ্ঞতা আছে, যথেষ্ট যোগ্যতা রয়েছে টেলিভিশনে কাজ করার ইচ্ছে মনের মধ্যে জিইয়ে রেখেছেন তাদের জন্য খুবই সহায়ক এই বই।

এমএম/এসকেডি/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।