রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম : বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানির জন্য হাইকোর্টের রুল


প্রকাশিত: ০৯:০৭ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দেশের বিশিষ্ট ১৫ ব্যক্তির করা রিট দীর্ঘ ২৮ বছর পরে আবারও শুনানির জন্য হাইকোর্টের তালিকায় রাখা হয়েছে। রিটের ২৩ বছর পর ২০১১ সালে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। আর রুল জারির প্রায় ৫ বছর পরে এসে এ রুল শুনানির জন্য সোমবার বসছেন হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ।

হাইকোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দারের নেতৃত্বে বৃহত্তর বেঞ্চে মামলাটির শুনানির জন্য রয়েছে। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। রিটকারী পক্ষের আইনজীবী জগলুল হায়দার আফ্রিব বলেন, সোমবার ড. কামাল হোসেন মামলার এমিকাস কিউরি হিসেবে শুনানি করতে পারেন।

এই মামলার চূড়ান্ত শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন। এর আগে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৮৮ সালে হাইকোর্টে রিট করা হয়। এরপর থেকেই আবেদনটি হাইকোর্টে বিচারাধীন ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ব্যাপক সংশোধনীর আনা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিষয়টি বহাল থাকে।

রিট আবেদনের ওপর জারিকৃত রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালে রিটকারীর পক্ষ থেকে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের জন্য আবেদন জানানো হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রিটের রুলের চূড়ান্ত শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন।

এ প্রসঙ্গে রিটকারী পক্ষের আইনজীবী জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিষয়ে দুটি রুল শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ গঠিত হয়েছে। সোমবার ওই বেঞ্চে রুলের চূড়ান্ত শুনানির জন্য আবেদনটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ রিটটি শুনানির জন্য হাইকোর্টে একটি সম্পূরক আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জুনে রুল জারি করেন। রুলে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে অন্তর্ভুক্তির বিধান কেন অসাংবিধানিক ও বে-আইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

একই সঙ্গে সিনিয়র ১২ আইনজীবীকে অ্যামিকাসকিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয়। রুল জারি এবং রিট দায়েরের দীর্ঘদিন পর মামলাটি চূড়ান্ত শুনানির জন্য হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে উঠলো।

‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি’র পক্ষে রিটকারী ১৫ বিশিষ্টজনের মধ্যে অনেকে ইতোমধ্যে মারা গেছেন। ১৯৮৮ সালের ৫ জুন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে জাতীয় সংসদে অষ্টম সংশোধনী অনুমোদন হয়। একই সালের ৯ জুন এতে অনুমোদন দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদ।

এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের আগস্টে ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির’ পক্ষে সাবেক প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন।

রিটকারী অন্যান্যরা হলেন, সাবেক বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, সাবেক বিচারপতি কে এম সোবহান, অধ্যাপক খান সরওয়ার মুর্শিদ, আইনজীবী সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, কলিম শরাফী, অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত, বদরুদ্দীন উমর, সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

ওই আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে নানা ধর্ম বিশ্বাসের মানুষ বাস করে। এটি সংবিধানের মূলস্তম্ভে বলা হয়েছে। এখানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে অন্যান্য ধর্মকে বাদ দেয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশের অভিন্ন জাতীয় চরিত্রের প্রতি ধ্বংসাত্মক।

এ রিট দায়েরের দীর্ঘ ২৩ বছর পর ২০১১ সালের ৮ জুন একটি সম্পূরক আবেদেনে হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারির পাশাপাশি অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ১৪ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে নিয়োগ দেন। তারা হলেন টিএইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ড. এম জহির, মাহমুদুল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার আখতার ইমাম, ফিদা এম কামাল, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, আবদুল মতিন খসরু, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এ এফ এম মেসবাহ উদ্দিন। তাদের মধ্যে ড. এম জহির ও মাহমুদুল ইসলাম ইন্তেকাল করেছেন।

এদিকে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে সংবিধান সংশোধনে সংসদীয় বিশেষ কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল রাখার সুপারিশ করে। পরবর্তীকালে ওই সুপারিশ অনুযায়ী সংবিধানে আনা হয় পঞ্চদশ সংশোধনী। এই সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে বহাল রাখার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করে রিটকারী পক্ষ।

আবেদনে বলা হয়, সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম (আংশিক) ও ত্রয়োদশ সংশোধনী সংসদে অনুমোদিত (পাস) হলেও সুপ্রিম কোর্ট এসব সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেছে। রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতির বিধান সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থি। পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ের আলোকে ১৯৭২ সালের সংবিধানের চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র সংবিধানে ফিরে এসেছে। আদি সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল হয়েছে। এটির সঙ্গে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম অব্যাহত রাখা হলে তা হবে সাংঘর্ষিক ও পঞ্চম সংশোধনীর মামলার রায়ের পরিপন্থি।

এফএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।