আমি পুড়লেও কেউ এগিয়ে আসেনি


প্রকাশিত: ০৩:৩৬ এএম, ১৩ মার্চ ২০১৬

রাজধানীর কদমতলীতে লোহা গলানো কারখানায় আগুনে পুড়তে থাকা বিল্লাল জীবন বাঁচাতে কারখানা থেকে বের হয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। অসংখ্য মানুষ আসে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের শব্দ শুনে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। বিল্লালের আহাজারি কারো কানে পৌঁছেনি। তবে জনৈক ভ্যানওয়ালা এসে বিল্লালকে ভ্যানে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

শুধু তাই নয়, কারখানার বাইরে থাকলেও ঘটনার খবর পেয়ে আসেননি মালিক। তবে হাসপাতালে দগ্ধ ৫ জনকে নিয়ে আসার পর মালিক মো. আব্দুল হালিম হাসপাতালে আসেন। বিল্লালসহ অন্যদের ভর্তি করান। তবে তাকে ডেকেও সামনে পাননি কোনো দগ্ধ শ্রমিক।

গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার দিকে কদমতলী থানাধীন শ্যামপুরে ‘হালিম মলডিং ওয়ার্কশপ’ নামে একটি কারখানায় হাউড্রোলিক ওয়েল সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কারখানাটির ৫ জন দগ্ধ হন।

Balal
 
দগ্ধ বাকিরা হলেন- এনামুল (২৮), মিজানুর রহমান (১৮), মজিবুর রহমান(২৭) ও রুবেল (২৬)। কারখানাটির শ্রমিকরা জানান, শ্যামপুর বালুর মাঠ সংলগ্ন ৮ নম্বর টিনসেড বাড়িতে ওই ‘হালিম মলডিং ওয়ার্কশপ’ নামে একটি কারখানা। সিলিন্ডার বিস্ফোরণে কারখানাটিতে আগুন ধরে যায়। পুরো টিনশেড বাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে গেছে।
 
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দগ্ধ বিল্লালের ৪৮, মিজানুর রহমান ৬০, এনামুল ৪০ রুবেল ৯ ও মোর্শেদ ৩ শতাংশ পুড়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিল্লাল ও মিজানের অবস্থা আশংকাজনক।

বিল্লাল জানান, আগুনে পুড়তে থাকা অবস্থাতেও কোনো মানুষ এগিয়ে আসেনি। মালিকও খবর পেয়ে দেখতে আসেননি।

গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটের নিচ তলার একটি কক্ষে কথা হয় দগ্ধ বিল্লালের সঙ্গে। তার মুখেই মানুষের অসহযোগিতার কথা উঠে আসে। পুড়তে থাকার সময় কেউ এগিয়ে আসেনি।

তিনি বলেন, ‘আমি দুইটা কাজ নিছি। জিএফসি ওয়াল ফ্যানের কাজ। পাশেই মল্ডিং মেশিন আছে। সেখানে সবাই কাজ করতাছি। কাজ করার সময় হঠাৎ ধ্রিম করে শব্দ। বাইর হমু যে কোনো সিস্টেম নাই। চাহিয়া দেখি গোডাইনে চারদিকে অন্ধকার। কোনো কিছু দেখা যায় না। আমার শরীলের দিকে চাহিয়া দেহি শরীরের চামড়া পুইড়া তামা তামা। এরপর তাড়াহুড়া কইরা কোনো মতে বাইর হইছি।
আইয়া পানিতে ঝাঁপ দিছি। ঝাঁপ দেওনের পরে আহে অনেক মানুষ। কোনো মানুষ আমারে হাসপাতালে নেয় না। আনে না। কেউ আনে না। আনে না। পরে এক ব্যাডা আমারে ভ্যানে কইরা হাসপাতালে আনে। যার বাসায় কাজ লিছি সেই আমারে হাসপাতালে ভর্তি করায়ছে।’

Balal

বিল্লালের কথায় উঠে আসে মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘যে আমারে ভর্তি করাইলো হেরে ডাইকা সামনে আনা যায় না। মালিকের নাম হালিম। হেই ভর্তি করায়ছে। হে শ্যামপুরে থাকে।’

বিল্লাল বলেন, ‘মোবাইল মানি ব্যাগ কিছু আনতে পারি নাই। কাউরে যে ফোন দিমু হেও পারি নাই। সব গেছে গা। সব নাম্বার গেছে গা। আমি মিইলা চারজন এক লগে কাজ করছি। আমি কাজে ব্যস্ত ছিলাম। সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হইছে।’

দগ্ধ হালিমের ভাই রাসেল জানান, মালিক হালিম আইসা হুমকি ধামকি দিয়া গেছে। থানা পুলিশ ও সাংবাদিক ডাকলে চিকিৎসা ছাড়া মরতে হইবো। মালিকের পোলাপান হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করতাছে। কি কমু ভাই। সবই ভাগ্য! আমাগোরেই কপালডা এমনে পুড়ে ভাই।



জেইউ/জেএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।