স্বামী মইরা গেলে পথে বসমু ভাই, কিছু করেন!
‘ভাই কিছু করেন। ডাক্তার ডাহেন ভাই। আমার স্বামী মইরা গেলে পথে বসমু ভাই। তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাহেন। দুইডা ছাওয়াল এতিম অইবো ভাই। লোকটা পুইড়া ছাই অইয়া গেছে গা। সহ্য করতে পারতাছি না।’ অগ্নিদগ্ধদের আত্মীয়-স্বজনের আহাজারিতে ভারী এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট। শনিবার রাতে এভাবেই আহাজারি করছিলেন লোহা গলানোর কারখানায় দগ্ধ বিল্লাহর (৩৫) স্ত্রী রুবিনা।
শুধু বিল্লাল নন ‘হালিম মলডিং ওয়ার্কশপ’ নামে একটি কারখানায় হাউড্রোলিক ওয়েল সিলিন্ডার বিস্ফোরণে কারখানাটির আরও চারজন দগ্ধ হয়েছেন। তার হলেন এনামুল (২৮), মিজানুর রহমান (১৮), মজিবুর রহমান (২৭) ও রুবেল (২৬)। শনিবার বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। দগ্ধ সবাইকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
কারখানাটির শ্রমিকরা জানান, শ্যামপুর বালুর মাঠ সংলগ্ন ৮ নম্বর টিনসেড বাড়িতে ওই ‘হালিম মলডিং ওয়ার্কশপ’ নামে একটি কারখানা। সিলিন্ডার বিস্ফোরণে কারখানাটিতে আগুন ধরে যায়। পুরো টিনশেড বাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে গেছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিল্লালের শরীরের ৪৮ শতাংশ, মিজানুর রহমানের ৬০ শতাংশ, এনামুলের ৪০ শতাংশ, রুবেলের ৯ শতাংশ ও মোর্শেদের ৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে বিল্লাল ও মিজানের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিল্লালের ছোট ভাই রাসেল জানান, কেরাণীগঞ্জের বছিলা মধ্যের চর তাদের বাড়ি। ভাই বিল্লাল প্রায় ৬/৭ বছর ধরে এখানে কাজ করেন। জিএসপি ফ্যানের কাজ করার সময় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে তার ভাই আগুনে পুড়ে যান।
বিল্লালের আগুনে পোড়ার খবর পেয়ে চলে আসেন মা পেয়ারা বেগম, বউ রুবিনা, দুলাভাই আব্দুল ওয়াহেদ। মা পেয়ারা বেগম বলেন, “আমার ব্যাটার দুইডা ছাওয়াল। নূর হোসেন (৮) ও মেয়ে নূরতাজ (১০)। এই নাতি নাতনিরে লইয়া আমি কই যামু। আল্লাহ কেন আমাগো এতো বড় শাস্তি দিলো।”
পাশেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী রুবিনা। বলছিলেন “আমার স্বামীরে বাঁচান। আমার কী হইবো! আামার তো আর যাইবার জায়গা নাই। হঠাৎ চিৎকার করে ছোট ভাই রাসেল বলছেন, ডাক্তার কই ডাক্তার। আমার ভাই মইরা গেলে কী ডাক্তার অইবো। কই আইলাম। ভাই আমার মইরা যাইতেছে।
ঢামেক বার্ন ইউনিটের ওটি কক্ষে আপাতত সিট দেয়া হয়েছে তাদের। পাশেই দগ্ধ যুবক মিজানুর রহমান। মামা হাফেজ ফারুক। খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন হাসপাতালে। নিজেই দগ্ধ মিজানুরের গালে মুখে ক্রিম লাগিয়ে দিচ্ছিলেন।
ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের জরুরি মেডিকেল অফিসার ডা. মামুন জানান, রোগীদের ভর্তির পর ড্রেসিং করানো হয়েছে। মিজানুর ও বিল্লালের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের রাতেই আইসিইউতে স্থানান্তর করা হবে। রুবেল ও মোর্শেদ আশঙ্কামুক্ত। তবে তাদেরও চিকিৎসা চলছে।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ কী জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে এব্যাপারে ‘হালিম মলডিং ওয়ার্কশপ’ কারখানার মালিক মো. আব্দুল হালিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল সেট বন্ধ পাওয়া যায়।
জেইউিবিএ