পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী

কাশ্মীর সমস্যার সমাধান ছাড়া ভারতের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক অসম্ভব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:১৭ পিএম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার-উল-হক কাকার বলেছেন, কাশ্মীরকে বাদ দিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হলে সবার আগে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে হবে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের ‘জিরগা প্রোগ্রামে’ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

আরেক পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিরগা প্রোগ্রামে কথা বলার সময় আনোয়ার-উল-হক কাকার জাতিসংঘের রেজুলেশন অনুযায়ী কাশ্মীর সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের তাগিদ দেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দক্ষিণ এশিয়াকে শান্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হলে, তা শুধু পাকিস্তান-ভারত নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠবে।

আনোয়ার-উল-হক কাকার আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে যেতে চায় না পাকিস্তান। আর কাশ্মীরকে প্রধান ইস্যু বলার মানে এই না যে, আমরা ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ চাই। তাছাড়া ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যকার সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেও বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না।

jagonews24

মূলত পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘বিতর্কিত’ এ অঞ্চল নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যে বিরোধ রয়েছে, তার নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। তার মধ্যেই ২০১৯ সালের ৫ই আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে এটিকে ভারতীয় ইউনিয়নে একীভূত করে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

এর আগে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা দেখা দেয় ও পাকিস্তানি ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশকারী ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলোকে গুলি করে ভূপাতিত করার পাশাপাশি ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে বন্দি করে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী। এরপরই পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে আনে পাকিস্তান। পরে ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লি একে অপরের দূতদের বহিষ্কার করে। এছাড়া দূতাবাসে কূটনৈতিক কর্মীর সংখ্যাও কমিয়ে দেয় দুই দেশ। বর্তমানে উভয় দেশের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স তাদের নিজ নিজ মিশনের দায়িত্ব পালন করে আসছে।

এদিকে, ভারত সরকারের দাবি, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর ওই অঞ্চলে শান্তি-সমৃদ্ধি আসতে শুরু করেছে। সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে ও নিয়মিত হরতাল, বনধ ও পাথর ছোঁড়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়েছে। গত চার বছরে কাশ্মীরের পরিস্থিতি শুধু যে আগের থেকে কয়েক গুণ উন্নত হয়েছে তাই নয়, উগ্রপন্থী কার্যকলাপও ৪৫ শতাংশ কমে গেছে।

মূলত পাকিস্তান ও ভারত বিতর্কিত কাশ্মীরের পুরোটাই নিজেদের দাবি করলেও, উভয় দেশেই এর কিছু অংশ শাসন করে থাকে। ‘ভূ-স্বর্গ’ নামে পরিচিত এই অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে। তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দুটিতে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে দেশ দুটি। বলা হয়, কাশ্মীর বিতর্ক কেন্দ্র করেই পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে ভারত পাকিস্তান।

ইতিহাস বলে, ১৯৪৭ সালের আগস্টে স্বাধীনতা লাভের আগ থেকেই কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান-ভারতের বিতর্ক শুরু হয়। ওই বছরের অক্টোবরে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে কাশ্মীরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগ দেওয়ার চুক্তিতে সই করেন ও ভারতের সামরিক সহায়তা পান। এর পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।

jagonews24

ওই যুদ্ধ চলেছিল প্রায় দুবছর। এরপর ১৯৪৮ সালে কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, তবে সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানায় পাকিস্তান। তখন থেকেই কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত অংশে ভাগ হয়ে যায়।

অন্যদিকে, ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে কাশ্মিরের আকসাই-চিন অংশটির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় চীনের হাতে। আর তার পরের বছর পাকিস্তান কাশ্মিরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন থেকে তিন প্রতিবেশী দেশ কাশ্মির নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।

সূত্র্র্র: দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।