বিসিএস জয়

ইংরেজি ও গণিতে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে: রণজিৎ

আনিসুল ইসলাম নাঈম
আনিসুল ইসলাম নাঈম আনিসুল ইসলাম নাঈম , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০১:২৪ পিএম, ২০ জানুয়ারি ২০২৪

রণজিৎ কুমার রায় ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে (বাংলা) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের দারার হাট গ্রামে। রণজিৎ নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করা কষ্টসাধ্য ছিল। পড়াশোনার খরচ চালাতে ছয় বছর কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি পঞ্চগড়ের খুটামারা মির্জা গোলাম হাফিজ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং দেবীগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি ৪৩তম বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন?
রণজিৎ কুমার রায়: আমি শতভাগ সন্তুষ্ট। অনেক আগে থেকেই শিক্ষকতার প্রতি আমার আবেগ ও দুর্বলতা ছিল। তাই ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ পেয়ে আমি সৌভাগ্যবান মনে করছি। চাকরির জন্য আর কোনো পরীক্ষায় বসতে হবে না, এ অনুভূতিও আমার জন্য তৃপ্তিদায়ক। আমার প্রথম ভাইভা ছিল প্রাইমারি সহকারী শিক্ষকের, যদিও চাকরিটা পাইনি। চাকরিটা না হয়ে অবশ্য ভালোই হয়েছে। ৪৩তম বিসিএস আমার জীবনের দ্বিতীয় ভাইভা ছিল। বিপিএসসিতে একবারই যেতে হয়েছে। আর যেতে হবে না এজন্য ভালোই লাগছে। বলতে গেলে সবকিছু মিলে আমি সন্তুষ্ট।

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
রণজিৎ কুমার রায়: সত্যি বলতে অনার্স তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত বিসিএস পরীক্ষার বিস্তারিত সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণাই ছিল না। প্রতি বছর বিসিএসের রেজাল্ট প্রকাশিত হলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ও হলে আলাদা একটা পরিবেশ বিরাজ করতো বেশ কয়েকদিন। ফেসবুকে তো সেটা আরও বেশি করেই বোঝা যেত। আবার পরিচিত অনেকজনকে বিসিএস ক্যাডার হতে দেখেছি। এভাবেই ধীরে ধীরে বিসিএসের প্রতি দুর্বলতা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং একপর্যায়ে ভালোবেসে ফেলি। এভাবেই বিসিএস আমার স্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন: স্কুল থেকে বের করে দেওয়া রাফসানের বিসিএস জয়

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
রণজিৎ কুমার রায়: আমি অ্যাপিয়ার্ড হিসেবে ৪০তম বিসিএসে আবেদন করি। এটাই ছিল আমার প্রথম বিসিএস। তবে সে সময় আমি ২০০ নম্বরের পরীক্ষার মাত্র ২০-৩০ নম্বরের প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। যেহেতু প্রস্তুতি ছিল না, তাই ১৯৫টি প্রশ্নই উত্তর করে এসেছিলাম। বাকি ৫টা সময়ের অভাবে পারিনি। পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিয়ে আমার প্রথম বিসিএস ছিল ৪১তম। ৪১তম বিসিএসে আমি প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় ফেল করি। ৪৩তম বিসিএসে আরেকটু ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আমার বিসিএস প্রস্তুতিটা ছিল সম্পূর্ণ নিজের মতো করে পরিকল্পনামাফিক। নিজের স্ট্রংজোন ও উইকজোন গুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিলাম। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য আমি গণিত ছাড়াই প্রস্তুতি নিতাম। কারণ আমি গণিতে অনেক দুর্বল। বিসিএসের প্রিলি পাস গণিত ছাড়াও সম্ভব। তবে লিখিত পরীক্ষায় গণিতের ভীতি আমাকে খুব মানসিক চাপে ফেলে দিয়েছিল। যেহেতু লিখিত পরীক্ষায় গণিত একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর, তাই ১৫-২০ মার্কসের মতো প্রস্তুতি আমাকে নিতেই হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো ৪৩তম বিসিএসে গণিতে মাত্র ৫ মার্কসের নির্ভুল উত্তর করতে পেরেছিলাম। লিখিত পরীক্ষার জন্যও নিজের মতো করেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। শিক্ষা ক্যাডার আমার লক্ষ্য হলেও ইচ্ছে ছিল বোথ ক্যাডারে ভাইভা দেওয়ার। তাই লিখিত পরীক্ষার জন্যও সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম যেন বোথ ক্যাডারে পাস করতে পারি। ঈশ্বরের কৃপায় আমি বোথ ক্যাডারে ভাইভার সুযোগ লাভ করি। ভাইভার জন্য একটি কোচিং সেন্টারে চারটি মক ভাইভা দিয়েছিলাম। সেগুলো আমাকে উপকৃত করেছে।

জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
রণজিৎ কুমার রায়: আমার এ অবস্থায় আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান আমার বাবা-মায়ের। আমার জন্য তারা অনেক আত্মত্যাগ করেছেন। মাঠে কাজ করেছেন। দুপুরের প্রচণ্ড রোদে মাঠে কাজ করতে করতে তাদের শরীর বেয়ে যে ঘাম ঝরতো; সেই ঘাম-ই ছিল আমার অনুপ্রেরণার উৎস। তাদের কষ্ট দেখে সেই কষ্ট লাঘবের তীব্র ইচ্ছাই আমার অনুপ্রেরণা। বাবা-মায়ের পরে যার অবদান সবচেয়ে বেশি সে হলো আমার দাদা। আমার দাদার প্রত্যক্ষ অবদান ছাড়া হয়তো আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতাম না। এছাড়া আমার শিক্ষক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমার দীর্ঘ বেকারত্বের সময়ে, বিভিন্ন পরীক্ষায় ফেল করে হতাশার সময়ে আমাকে সঙ্গ দিয়ে ও মানসিক সাপোর্ট দিয়ে পাশে ছিল আমার দীর্ঘ প্রণয়ের মানুষটি।

আরও পড়ুন: বিসিএসে লেগে থাকলে সফলতা আসবেই: বিপ্লব কুমার নন্দী

জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
রণজিৎ কুমার রায়: নতুনদের জন্য আমার পরামর্শ হলো, অনার্স তৃতীয় বর্ষ থেকেই তারা যদি চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে তাহলে দুদিকেই লাভবান হতে পারবেন। একদিকে একাডেমিক পড়াশোনায় পর্যাপ্ত সময় দিয়ে ডিপার্টমেন্টে নিজের ভালো অবস্থান ধরে রাখতে পারবেন, অন্যদিকে চাকরির প্রস্তুতির জন্যও পর্যাপ্ত সময় পাবেন। শুধু এমসিকিউ টাইপের বই না পড়ে তার পাশাপাশি সমাজ, রাজনীতি, আন্তজার্তিক সম্পর্ক ও পররাষ্ট্রনীতি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন বই পড়া উচিত। বিভিন্ন গল্প, কবিতা, উপন্যাস পড়ারও অভ্যাস গড়ে তোলা ভালো। এগুলো তাকে সমৃদ্ধ করে তুলবে। নিয়মিতভাবে ইংরেজি ও গণিতের ওপর ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ ইংরেজি ও গণিত–এ দুটি বিষয়ের পরীক্ষাতেই আসলে নির্ধারিত হয়ে যাবে কে চাকরি পাবেন আর কে পাবেন না। তাই শুরু থেকেই এ দুটি বিষয়ে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
রণজিৎ কুমার রায়: ভবিষ্যতে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে যেন প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবো। ভালো শিক্ষক হিসেবে যেন সুনাম অর্জন করতে পারি, সেটাই আমার লক্ষ্য। এছাড়া আমার এলাকার মানুষের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা আছে।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।