চাকরি নির্ভর করে লিখিত পরীক্ষার ওপর: মাহফুজুল করিম

আনিসুল ইসলাম নাঈম
আনিসুল ইসলাম নাঈম আনিসুল ইসলাম নাঈম , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৪:০৩ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

মাহফুজুল করিম তুষার বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (২০২২ ব্যাচ) পদে নিয়োগ পেয়েছেন। তার জন্ম বরগুনায় হলেও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। তবে বাবার চাকরির সুবাদে ছোটবেলা কেটেছে বেশ কয়েকটি জেলায়। তিনি ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করেন। এরপর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার গল্প ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক পদে চাকরি পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন ছিল?
মাহফুজুল করিম তুষার: ওই মুহূর্তের অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। যদিও খুব একটা আশাবাদী ছিলাম না, তারপরও ভাইভার পর থেকে উৎকণ্ঠা কাজ করতো। রেজাল্টের দিন দুপুরে যখন জানতে পারলাম আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি, সেই মুহূর্তটা অসাধারণ ছিল। পরিবারের সবাইকে উচ্ছ্বসিত দেখে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
মাহফুজুল করিম তুষার: স্নাতক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর সর্বপ্রথম আবেদন করি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পর্কে খুব একটা ভালো ধারণা না থাকলেও তখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। জানতে পারি দেশের অর্থনীতি এবং ব্যাংকিং খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ অবদান সম্পর্কে। দেশের ব্যাংকিং খাতে নজরদারি এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই দেশের জন্য প্রত্যক্ষ অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মপরিবেশ সম্পর্কেও ইতিবাচক ধারণা আমাকে এ চাকরির প্রতি আগ্রহী করে তোলে।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
মাহফুজুল করিম তুষার: শুরুর দিকে চাকরির পরীক্ষাগুলোতে আশানুরূপ ফলাফল পাচ্ছিলাম না। এতে আমি কিছুটা হতাশ হয়ে পড়ি। এর মাঝে করোনা মহামারি শুরু হলে চাকরির পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। করোনা মহামারির এ সময়টা আমি কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। ওই সময়টায় পরীক্ষা না থাকায় বেশিরভাগ সময় ঘরেই ছিলাম। যার ফলে নিজেকে শাণিত করার সুযোগ পাই। প্রস্তুতির শুরুতেই আমি ব্যাংকের পরীক্ষার প্রশ্নের প্যাটার্ন বোঝার চেষ্টা করি। এজন্য আমি বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করা শুরু করি। এছাড়া অন্যান্য চাকরির পরীক্ষায় আসা প্রশ্নও নিয়মিত সমাধান করি। এতে আমার দুর্বলতাগুলো ধরতে পারি এবং তা কাটিয়ে উঠতে সেই বিষয়গুলোতে জোর দিই। প্রিলিমিনারি অংশে ইংরেজি ও গণিত নিয়ে সমস্যা না হলেও বাংলা ও সাধারণ জ্ঞান আমার কাছে বেশ কঠিন মনে হয়েছিল। নিজের প্রস্তুতি যাচাই করার জন্য নিয়মিত মডেল টেস্ট দিয়েছি। প্রিলিমিনারি অংশের প্রস্তুতির পাশাপাশি লিখিত নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করি। লিখিতের গণিতের পাশাপাশি ইংরেজিতে বেশি জোর দিয়েছি। নিয়মিত ইংরেজি ও বাংলা পত্রিকা পড়তাম। দৈনন্দিন ঘটনাবলি, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ইত্যাদি নোট করে রাখতাম। অনুবাদ ও ফ্রি-হ্যান্ড রাইটিংয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করতাম। ভাইভায় তেমন প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। নিজ জেলা, স্নাতকে পঠিত বিষয়, অর্থনীতি, ব্যাংকিং খাত ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে গিয়েছিলাম।

আরও পড়ুন
বিসিএস একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া: শুভ রায় সুমন
বাবার পরিশ্রমই সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা: রহমত উল্লাহ
বিসিএসে লেগে থাকলে সফলতা আসবেই: বিপ্লব কুমার নন্দী

জাগো নিউজ: এতদূর আসার পেছনে কাদের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন?
মাহফুজুল করিম তুষার: আমার সাফল্যের পেছনে আমার পরিবারের অবদান সবচেয়ে বেশি। আমার স্ত্রী এবং বাবা-মা আমাকে ভালো কিছু করার জন্য সব সময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।

জাগো নিউজ: ব্যাংকে চাকরির প্রস্তুতিতে নতুনদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
মাহফুজুল করিম তুষার: বর্তমানে চাকরির পরীক্ষাগুলো খুবই প্রতিযোগিতামূলক। এ জন্য খেয়াল রাখতে হবে অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া যায়। ব্যাংকের প্রিলিমিনারিতে যেসব বিষয়ের ওপর প্রশ্ন আসে, সেসব বিষয় ভালো করে আয়ত্ত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে যার যে বিষয়ে দুর্বলতা, সে বিষয়ে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। প্রিলিমিনারিতে ভালো করতে হলে সবচেয়ে জরুরি প্রচুর পরিমাণে বিগত প্রশ্ন অনুশীলন করা। প্রস্তুতিতে একই বিষয়ের কয়েকটা বই একসঙ্গে না পড়ে এক বিষয়ের জন্য একটা ভালো প্রকাশনীর বই বারবার পড়া উত্তম। প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির পাশাপাশি ব্যাংক লিখিত প্রস্তুতি এগিয়ে রাখলে ভালো। চাকরি পাওয়া নির্ভর করে লিখিত পরীক্ষা কতটা ভালো হলো তার ওপর। ব্যাংকে ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়ে থাকে। পরীক্ষায় ভালো করার জন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরত্বপূর্ণ। এজন্য মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে যাচাই করতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় সব গণিত না পারলেও অন্যান্য অংশে ভালো করতে হবে। অনুবাদে দক্ষতা অর্জনের জন্য নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। ফোকাস রাইটিং যথাসম্ভব প্রাসঙ্গিক ও তথ্যবহুল হতে হবে এবং গুছিয়ে লিখতে হবে। খাতায় উপস্থাপনা সুন্দর ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। ভাইভায় নিজ জেলা, নিজ পঠিত বিষয়, নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, অর্থনীতি, ব্যাংকিং খাত, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বেসিক কিছু বিষয় থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। তবে প্রশ্নের উত্তর না জানলে বা উত্তর মনে না এলে বিনয়ের সাথে বলতে হবে, ‘স্যার, এটা আমার জানা নেই।’ পাশাপাশি পোশাক-আশাকের বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। ভাইভার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যতটা সম্ভব নির্ভার থাকা উচিত।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মাহফুজুল করিম তুষার: সামনের দিনগুলোতে আমি নিজেকে একজন দক্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করবো। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে আরও শাণিত করার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বড় অবদান রাখতে পারবো বলে আশা রাখি।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।