বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম: শাহ্ জুলকার নাঈন

মমিন উদ্দিন
মমিন উদ্দিন মমিন উদ্দিন , লেখক
প্রকাশিত: ০৩:১৩ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

শাহ্ জুলকার নাঈন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করেছেন। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার সাজাইল ইউনিয়নের মাজড়া গ্রামে। বাবা মো. আশরাফুজ্জামান শিক্ষক এবং মা জাকিয়া জামান আদর্শ গৃহিণী।

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি পড়াশোনা, কর্মজীবন ও ক্যারিয়ার পরামর্শ নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মমিন উদ্দিন—

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল?
শাহ্ জুলকার নাঈন: এদিক থেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি নিজেকে। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ পর্যন্ত আমাকে কোনো বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়নি। হয়তো পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা পছন্দের বিষয়ে পড়ার ভাগ্য হয়নি। তাই কিছুটা হতাশ ছিলাম। তবে পড়াশোনায় এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারকে সর্বদা পাশে পেয়েছি। বিশেষ করে আমার বড় ভাইয়ের অবদান আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি।

জাগো নিউজ: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন তৈরি হলো কখন?
শাহ্ জুলকার নাঈন: যেহেতু আমার বাবা একজন স্কুলশিক্ষক ছিলেন; ছোটবেলা থেকে তার মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থীর গল্প শুনতাম। যাদের অনেকে অনেক ভালো প্রফেশনে আছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামাজিক ভূমিকা পালন করছেন এবং উচ্চ মর্যাদা বহন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কী, সেটা হয়তো ছোটবেলায় বুঝতাম না। তবে ভাবতাম, বড় হয়ে আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো। সমাজে উচ্চ মর্যাদা অর্জন করবো। যখন পরিপূর্ণভাবে বুঝলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মূল্য; তখন আমার এ স্বপ্ন আরও তীব্র হয়ে উঠলো।

আরও পড়ুন: প্রথম বিসিএসেই কৃষি ক্যাডার পেলেন লিখন 

জাগো নিউজ: উচ্চশিক্ষায় কোন বিষয়ে পড়তে চেয়েছিলেন?
শাহ্ জুলকার নাঈন: স্বপ্ন দেখার প্রতিযোগিতা থাকলে আমি বেশ ভালো করতাম। ছোটবেলা থেকে ডক্টর আঙ্কেলদের দেখে মনে হতো আমিও ডক্টর হবো। আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতাম পাইলট হবো। আসলে ছোটবেলায় নির্দিষ্ট কোনো প্যাশন বা স্বপ্ন ছিল না। তবে সায়েন্স নিয়ে পড়ার খুব ইচ্ছা ছিল। আমার মাধ্যমিক বিদ্যালয় সায়েন্সের জন্য তখন অতটা ভালো ছিল না। তাই বাবার ইচ্ছাতে কমার্স নিতে হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অনেক ইচ্ছা থাকলেও ভাগ্য সেটা চায়নি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বি ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে ভেবেছিলাম ইংরেজি বিষয়ে গ্রাজুয়েশন করে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা নিতে যাবো। ভাগ্য এখানেও হারিয়ে দিলো। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিষয়ে আমার সুযোগ হলো। যদিও দর্শনের সঙ্গে আমার পরিচয় বা ইচ্ছা আগে কখনো ছিল না। তবুও রাজধানীর মধ্যে পড়ার একটা প্রবল ইচ্ছা এবং সামাজিক ভূমিকা রাখার আগ্রহ থেকে অনেকটা বাধ্য হয়েই দর্শন বিষয়েই পড়ার সিদ্ধান্ত নিই।

জাগো নিউজ: শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন কখন থেকে দেখা শুরু করলেন?
শাহ্ জুলকার নাঈন: বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু আমি আমার কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে ভর্তি হতে পারিনি। তাই ভেবেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্ট টাইম পড়ালেখা করবো এবং ফুল টাইম রাজনীতি করবো। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকে। তবে নিয়মিত ক্লাস করতাম এবং ক্লাস লেকচার অনুযায়ী পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতাম। প্রথম বর্ষে যখন ফলাফল প্রকাশিত হলো—আমি অপ্রত্যাশিতভাবে ক্লাসে প্রথম হলাম। যা ছিল আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। তারপর জসিম খান স্যারের অনুপ্রেরণায় সিদ্ধান্তের অদলবদল করে ফুল টাইম পড়ালেখায় মনোযগী হই এবং পার্ট টাইম রাজনীতি করতে থাকি। এরপর থেকে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলীর স্বাধীনচেতা জীবন, রাজনৈতিক চিন্তাধারা, সৃজনশীলতা, আত্মমর্যাদাবোধ আমাকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে—আমিও একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবো।

জাগো নিউজ: বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার এখনকার চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
শাহ্ জুলকার নাঈন: সক্রেটিস বলেছিলেন, ‘আমাদের সমাজে এমন একটা সময় আসবে জ্ঞানী, পণ্ডিত ব্যক্তিরা তাঁদের জ্ঞানের জন্য অনুশোচনা করবেন। আর মূর্খরা মূর্খতার জন্য উল্লাস করবে। যারা অসত্য, দুর্নীতিবাজ, তারা দুর্নীতির জন্য গর্ববোধ করবে।’ সত্যি বলতে এখন আমরা সেই সময় পার করছি। দিনে দিনে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ডিগ্রি ও সনদ বিতরণের কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এখন মানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়া হলো বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই সুনির্দিষ্ট ভিশন ও মিশন থাকে। এ দুটি প্রক্রিয়ার সঠিক বাস্তবায়নে দক্ষ প্রজন্ম তৈরি হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ভিশন ও মিশনের সঠিক পরিচর্যা করছে না। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধার অভাব, শ্রেণিকক্ষে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী, শিক্ষকের অপ্রতুল বেতন, গবেষণায় বরাদ্দের অভাব, শ্রেণিকক্ষে প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধার অভাব প্রভৃতি শিক্ষকতা পেশাকে দিন দিন চ্যালেঞ্জিং করছে বলে মনে করি।

আরও পড়ুন: বাবার অনুপ্রেরণায় বিসিএস ক্যাডার মানস 

জাগো নিউজ: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা কি শুধুই চাকরি নাকি দায়িত্ব?
শাহ্ জুলকার নাঈন: আমি মনে করি, শিক্ষকতা এমন একটি পেশা; যা অন্য সব চাকরি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কেননা সব চাকরিতে শ্রম এবং বিশ্রাম দুটোই আছে কিন্তু শিক্ষকদের কোনো বিশ্রাম নেই। শিক্ষকতা হচ্ছে গবেষণার, জ্ঞান অর্জনের, সৃজন ও বিতরণের নেশা। শিক্ষক এমন এক মানুষ গড়ার কারিগর, যাদের লক্ষ্যই থাকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়া। শিক্ষকতা জীবন কেবল বিশ্রামহীন নয়, চ্যালেঞ্জিংও বটে। এ চ্যালেঞ্জগুলো হলো একাডেমিক দায়িত্ব পালনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ, গবেষণার মাধ্যমে পৃথিবীর সব অসাধ্যকে সাধন করার চ্যালেঞ্জ। শিক্ষার্থীরা এমন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভীত হলে শিক্ষকতা পেশায় না আসাই ভালো।

জাগো নিউজ: যারা শিক্ষক হতে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শাহ্ জুলকার নাঈন: যারা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চান, তাদের স্বাগতম। প্রথমত যে কাজটি করতে হবে—তা হলো, ভালো একটি সিজিপিএ অর্জন করা। দ্বিতীয়ত পঠিত বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখা ও গবেষণার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করা।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।