প্রচণ্ড বৈরিতায় মীর কাসেমের মামলা থেকে চলে যাচ্ছি
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের তীব্র বিরোধিতার মুখে অবশেষে মীর কাসেমের আপিল শুনানি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদেরকে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রচণ্ড বৈরী পরিবেশের কারণে মামলার কার্যক্রম থেকে নিজেকে প্রত্যাহারে বাধ্য হচ্ছি। আইন ও সংবিধান সম্মতভাবে আমি মীর কাসেম আলী সাহেবের আপিলে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রচণ্ড বৈরী পরিবেশের কারণে আমি এই মামলার কার্যক্রম থেকে চলে যাচ্ছি।
সোমবার মীর কাসেমের আপিল শুনানির সময় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চকে বলে তিনি মীর কাসেমের মামলা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। পরে কোর্ট থেকে বের হয়ে বিচারপতি নজরুল বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচণ্ড বৈরি পরিবেশের কারণে আমি মীর কাসেমের মামলার কার্যক্রম থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হচ্ছি বলে জানান।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী মীর কাসেম আলীর আপিল শুনানি থেকে আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রত্যাহার করে যে বিবৃতিতে বলেন, আমি এ মামলায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং আইনজীবী হিসেবে এটা করার অধিকার আমার রয়েছে। এটি অসাংবিধানিক নয় কিংবা অনৈতিকও নয়। হাইকোর্ট থেকে ১২/১২/২০১৫ তারিখ অবসর গ্রহণ করি এবং ০৩/০১/২০১৬ তারিখ থেকে আমি নিয়মিত আপিল বিভাগে বিভিন্ন মামলায় শুনানিতে অংশগ্রহণ করে আসছি।
আমি ইতোমধ্যেই অন্তত দু`টি মামলায় একই মক্কেলের পক্ষে ও তিনটি মামলায় অপর পক্ষে বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছি। উক্ত মামলাগুলোর শুনানি চলাকালে বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল আমার প্র্যাকটিসের বৈধতা বা নৈতিকতা নিয়ে কোনো আপত্তি উত্থাপন করেননি। কিন্তু শুধুমাত্র মীর কাসেম আলীর মামলা পরিচালনা করতে গেলেই তিনি আমার প্র্যাকটিসের বৈধতা ও নৈতিকতার প্রশ্ন তুললেন যা অনাকাঙ্খিত।
প্রসঙ্গত, গত ১০ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর আপিল শুনানিতে অংশ নেন সদ্য অবসরে যাওয়া হাইকোর্টের বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এ নিয়ে পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করা অবস্থায় বিচারপতি নজরুল একজন মানবতাবিরোধীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেয়ায় সমালোচনা করেন।
হাইকোর্টের সদ্য অবসরে যাওয়া বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল মীর কাসেম আলীর পক্ষে আইনজীবী হিসেবে অংশগ্রহণের শুরুতে আপত্তি উত্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী মাত্র এক মাস আগে এলপিআরে গেছেন। তিনি সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। সরকারি বাসভবনে থাকেন এবং সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। এ অবস্থায় তিনি আইনজীবী হিসেবে মামলায় অংশগ্রহণ করতে পারেন কি না?
তখন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, আমি তাকে মামলায় অংশগ্রহণের অনুমতি দিয়েছি। অনুমতি দেয়ার পূর্বে আমি তার এলপিআর এবং অন্যান্য সকল সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র স্বাক্ষর করে শেষ করেছি। এরপর অনুমতি দিয়েছি। তিনিতো অন্য মামলায়ও অংশগ্রহণ করছেন। এরপর তিনি বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে বলেন, আপনি পড়েন (সাক্ষীর জবানবন্দী ও জেরা)।
বেলা ১১টার সময় শুনানি বিরতি ঘোষণার আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, জাজেস রেসিডেন্ট কমপ্লেক্সের মর্যাদা সবাই রক্ষা করবেন। যারা অবসরে গেছেন এবং যারা বর্তমানে বিচারপতি আছেন তাদের সবার প্রতি আমার এ অনুরোধ।
আপিল শুনানির বিরতি এবং শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, নৈতিকভাবে বিচারপতি নজরুল ইসলাম এটা করতে পারেন না। কারণ তিনি সবেমাত্র অবসরে গেছেন এবং সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। অন্য আইনজীবীরাতো এ ধরনের কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না।
শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের যখন এ বিষয়ে ব্রিফিং করেন তখন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন রাষ্ট্র পরিচালিত মামলার বিরুদ্ধে তিনি আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন বিধায় কি আপনি তার বিরোধিতা করছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলের আপত্তি বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। তিনি তাদের বলেন, সংবিধান এবং আইন আমাকে যে অধিকার দিয়েছে তা মেনেই আমি কাজ করছি। আমি আইনের বাইরে কিছু করছি না।
এফএইচ/এমজেড/এআরএস/এবিএস