ত্রিশালের ৫ জনের যাবজ্জীবন

রায় পর্যালোচনা করে আপিলের সিদ্ধান্ত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৫৬ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ফাইল ছবি

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত আটক, নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালের পাঁচ রাজাকার-আলবদরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন প্রসিকিউশন টিম।

অন্যদিকে, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন আসামিদের আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম। তবে, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের দণ্ড বাড়ানোর বিষয়ে আপিল করবে কিনা সেটি নিশ্চিত না করলেও নোট দিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে অ্যাটর্নি জেনারেল কাযার্লয়।

সোমবাার (২০ ফেব্রুয়ারি) রায় ঘোষণার পর ট্রাইব্যুনালের সামনে দাঁড়িয়ে এ কথা বলেন উভয়পক্ষের আইনজীবীরা।

দণ্ডিতরা হলেন— রাজাকার হরমুজ আলী, আব্দুস সাত্তার ও ফখরুজ্জামান এবং আলবদর খন্দকার গোলাম রব্বানী ও খন্দকার গোলাম ছাব্বির আহমাদ। তাদের মধ্যে ছাব্বির ও ফখরুজ্জামান পলাতক। বাকি তিন আসামির উপস্থিতিতে সোমবার রায় ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন— বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।

দণ্ডবিধির ৪৫ ও ৫৩ ধারার সঙ্গে দণ্ডবিধির ৫৫, ৫৭ ধারা এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ (ক) মিলিয়ে পড়লে যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছরের কারাদণ্ড। যাবজ্জীবনের সাজা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ‘যাবজ্জীবন বলতে একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবন যতদিন ততদিন।কিন্তু আইনানুযায়ী যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামির ৩০ বছরের সাজা ভোগ করতে হবে। যদি আদালত বা ট্রাইব্যুনাল বিশেষভাবে আদেশ দেন তাহলে আমৃত্যু জেলখানায় থাকতে হবে।’

রায়ে বলা হয়, ‘কারাদণ্ডের সাজা একসঙ্গে চলবে। দণ্ডিতদের হেফাজতকাল (গ্রেফতারের পর থেকে রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত) সাজা থেকে অর্থাৎ যাবজ্জীবনের মোট সাজা ৩০ বছর থেকে বাদ যাবে। যেহেতু দণ্ডিত দুই আসামি খন্দকার গোলাম রব্বানী ও মো. ফখরুজ্জামান এখনো পলাতক, তাই গ্রেফতার বা আত্মসমর্পণের তারিখ থেকে তাদের যাবজ্জীবনের সাজা শুরু হবে।’

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন, রেজিয়া সুলতানা চমন ও তাপস কান্তি বল। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার, মিজানুল ইসলাম ও গাজী এম এইচ তামিম।

রায়ের পর প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবেন কিনা জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, ‘রায় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে, রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিতরা আপিল করলে খালাস পাবেন বলে মনে করেন তিনি। দণ্ডিতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আপিল করার পরামর্শ দেবেন বলেও জানান।

২০১৫ সালের ১৯ মে ময়মনসিংহের ত্রিশালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন এ মামলাটি দায়ের করেন। ময়মনসিংহের ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক পরে মামলাটি ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় পাঠিয়ে দেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান আট আসামির বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জুলাই তদন্ত শুরু করেন। তদন্ত শুরুর পর প্রসিকিউশনের আবেদনে ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে সেদিনই ঢাকা থেকে এম এ হান্নান ও তার ছেলে রফিক সাজ্জাদকে গ্রেফতার করা হয়। ময়মনসিংহ সদর ও ত্রিশাল থেকে গ্রেফতার করা হয় বাকি তিনজনকে।

২০১৬ ৩০ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। সেখানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা ও গুমের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ২৭ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। বিচার চলার সময় এম এ আব্দুল হান্নান, তার ছেলে মো. রফিক সাজ্জাদ ও মিজানুর রহমান মিন্টুর মৃত্যু হয়। তাদের মামলার অভিযোগ থেকে বাদ দেওয়া হয়। বিচার শেষে গত বছরের ২৩ নভেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষামান রেখেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।

এফএইচ/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।